এক্স রে
জীবিত আর মৃতের
মধ্যে অনেক পার্থক্য। মৃতের ছাই মুঠোর মধ্যে ধরলে আঙুলের ফাঁক দিয়ে গলে উড়ে যায়।
আবার মৃতের শরীর থেকে মাংস খসে পড়ে থেকে যায় অবশিষ্ট কঙ্কাল।
রয়েন্টজেন স্ত্রী
বার্থাকে একদিন তাঁর ল্যাবে ডেকেছিলেন। বার্থার সন্দেহ হচ্ছিল, তবুও এসেছিলেন। রয়েন্টজেন বলেছিলেন, তোমার হাতটা এর ওপর রাখো।
আসলে সেটা বেরিয়াম
প্লাটিনোসায়ানাইড মাখানো কাগজ। বার্থা দ্বিধাগ্রস্থ হাত রাখেন। রয়েন্টজেন
তড়িৎমোক্ষণ নলের সুইচ একবার অন-অফের পর প্লেটটা
ডেভেলপ করেন। ছবি দেখে বার্থা ছুটতে শুরু করেন। তাঁর পায়ের ধাক্কায়
ল্যাবের দু’য়েকটা যন্ত্র পড়ে যায়। - এটা হতেই পারে না! মৃত মানুষের শরীরের হাড় দেখা যায়। কিন্তু আত্মার ছবি! আমার হাতের হাড়, অনামিকাতে বিয়ের আংটিটা পর্যন্ত...
মৃতের মতো জীবিতেরও
থাকে এক গোপন কঙ্কাল।
ম’কে এক বিকেলে
জয়ন্ত বলল, কাল বিকেল চারটেতে স্টেশনে এসো। একটা সুন্দর জায়গাতে নিয়ে যাব।
ম’ কি তার প্রেমিকা নাকি বেড়ানোর সঙ্গী, জয়ন্ত বোঝে না। ম’কে সে চুমু খেতে ভালোবাসে। জড়িয়ে ধরতে ভালোবাসে। কোলের ওপর মুখ গুঁজে শুয়ে থাকতে ভালোবাসে। আর মাঝে মাঝে কেউ একজন
অন্যজনকে ডেকে নেয়। আর কোনো একটা রাস্তা ধরে
চলে যায় অচেনা নির্জনতায়। রাস্তায় জয়ন্তর বাইকের পিছনে বসে ম’ তাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরতে, কাঁধের ওপর চোখ বন্ধ করে রাখতে, ঘাড়ের ওপর
চুমু খেতে, পেটে চিমটি কাটতে ভালোবাসে।
তারা এসে পৌঁছয় এক
প্রাগৈতিহাসিক নির্জনতা ভরা মাঠে। যার একপাশে পুকুর, পরিত্যক্ত প্রাচীন মন্দির। অন্যদিকে বহুদূরে পরিচিত চিমনি। আর নীল আকাশে
জেটপ্লেনের ধোঁয়া। সরু একফালি দ্বিতীয়ার চাঁদ।
ম’ কাঁধ থেকে ব্যাগটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে আর অকারণ
ছুটতে শুরু করে। মাটিতে ম’র নেশা ধরানো পায়ের শব্দ। সে পিছনে তাকিয়ে
বলে, তুমি আর কোনোদিন আমাকে ধরতে পারবে না।
জয়ন্ত মজা পায়। সে
ছুটতে শুরু করে। ছুটতে ছুটতে তার হাত ম’এর গায়ে লাগে। ম’ পিছন ফিরে হাসতে হাসতে তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। দুটো হাত শরীরের দু’পাশে ছড়িয়ে দেয়।
জয়ন্ত ম’কে জড়িয়ে
ধরে। তাদের শরীর থেকে তখন ঝরে পড়ছে আনন্দ। মাঠের ফটোগ্রাফিক প্লেটে তখন উষ্ণতার
আবছায়া। আকাশ তারাবাজি দেখাতে শুরু করেছে।
জয়ন্ত ম’কে শরীরের
সাথে জড়িয়ে নেয়, চেপে ধরে, আরও জোরে চেপে ধরে। পাঁজরের হাড় গুঁড়ো
হয়ে যাবার উপক্রম হলেও ম’য়ের শরীর জুড়ে আনন্দের স্রোত। সে যেন নিজের শরীর ছেড়ে উড়ে
বেড়াচ্ছে আকাশে, বাতাসে। জয়ন্তর আঙুলের ফাঁক দিয়ে মাটি আর নরম ঘাস মিশে যাচ্ছে তার
শরীরে। চাঁদ থেকে শিশিরবিন্দু ঝরে পড়ছে তার চোখে। সে আবেশে চোখ বন্ধ করে।
ম’ পরে তাকে বলেছিল, আমার ঘাড়ে ব্যথা।
স্পন্ডেলাইসিস আছে। তুমি সেদিন এত জোরে চেপে ধরেছিলে, ঘাড়ে আধ ইঞ্চি ফাঁক হয়ে গেছে।
জয়ন্ত ম’এর
দ্বিধাহীন বাঁ হাতটা ধরে। অনামিকার আংটির ওপর হাত পড়তে অস্বস্তি হয়। কঙ্কালের
আঙুলের মতো ম’র আঙুলটা ঠাণ্ডা মনে হয়। আংটিটা সে ম’কে দেয় নি। দেওয়ার কথাও নয়। ম’র
সাথে পৃথিবীর কোনো দেওয়া নেওয়ার
সম্পর্ক তার নয়। তবুও একবুক কষ্ট হয়।
কষ্টটাকে বুকের মধ্যে জমিয়ে রেখে হাল্কা করে দু’বাহুর মধ্যে ম’কে জড়িয়ে ধরে। প্রশ্ন করে, এক্স রে করিয়েছ?
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন