কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৬

ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী

শক্তি শোষণকারিণী


দৃশ্য ১

ঠাকুমার পান খাওয়া দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছে। চোখে সেই এক ডাণ্ডা-ওয়ালা চশমা (পয়মন্ত ছিল বলে ঠাকুমা ডাণ্ডা বদলায়নি)। ঠাকুমা চিবিয়ে চিবিয়ে বলছে, “বুঝঝস রূপু, আমাগো গ্রামে এক ধরনের মাইয়া আছিল যাগো আমরা ডাইনি কইতাম। তারা  জুয়ান পোলা দেখলাই তাগোর দিকা ড্যাব ড্যাব কইরা চাইয়া থাকত। অতৃপ্তি। শরীর থাইক্যা সমস্ত শক্তি শুইশা লইত, আর ছ্যামড়াগুলা একেবাইরে শ্যাষ হইয়া যাইত।”

দৃশ্য ২

রূপু থুড়ি রূপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ঘুম থেকে উঠে পড়ে। পিঠটা পুরোপুরি ঘামে ভিজে  গেছে। পাখাটা এত উঁচুতে যে হাওয়াটা তাকে সম্পূর্ণ ভাবে ছুঁতে পারছে না। দাঁড়িয়ে পড়ে, ঢাকা দেওয়া জল খায়। জল খেয়ে একটু স্বস্তি পায়। বাইরে বেড়িয়ে এসে সিগারেট ধরায়। ঠাকুমার কথাটা তখন কানে বাজতে থাকে, “কোনো ছেমড়ি যদি  অমন ভাবে তাকায়, তলার পৈতাটা ধইরা গায়ত্রী মন্ত্র জপ করবা, সে ছেমড়ি আর কোনো সাহস পাইব না।”  

পিছনে ফেরাঃ  আমাদের মূল গল্প ১

রূপঙ্কর কাকদ্বীপের এক সরকারী কলেজে আজ ছমাস হলো ফলিত গণিত পড়াতে  এসেছে। এই বছর নতুন ক্লাস, সদ্য স্কুলের গণ্ডি পেরনো ছাত্র ছাত্রীরা এসেছে। গণিতের ক্লাস সবাই অঙ্কে স্নাতক হতে এসেছে। কেউ কেউ হয়তো পরে মাস্টার্স  করবে। প্রথম ক্লাস রূপঙ্কর খুব যত্ন সহকারে পড়াতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পড়ানোর পর রূপু লক্ষ্য করে, একটি মেয়ে ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। প্রথমে সে একটু  অস্বস্তিতে পড়ে। হাজার হোক ছাত্রী বলে কথা! তারপর সে ভালো করে ব্যাপারটা  উপভোগ করতে থাকে। এরপরে পড়ানোর ফাঁকে সে মেয়েটিকে ভালো করে দেখে  ছিপছিপে দেখতে মেয়েটি বেশ সুন্দরী। অবশ্য রূপুর বন্ধু ও আত্মীয়মহলে সুপুরুষ হিসেবে খ্যাতি আছে তারসে ব্যাপারটা উপভোগ করার জন্য মেয়েটির দিকে মাঝে  মাঝে তাকায়, আর ভাবে যে এরকম সুন্দরী মেয়ে সচরাচর দেখা যায় না। সেদিন বাড়ি ফিরেই রূপু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তারপরে আরও দু সপ্তাহ ধরে একই ঘটনা লতে থাকে – মেয়েটি রোজই ক্লাসে রূপুকে দেখতে থাকে শুধু তাই নয়, ক্লাসের  বাইরে করিডোরে বা যেখানে সুযোগ পায়, সেখানেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। পড়া  বুঝতে আসলেও সেই একই দৃষ্টি। কেমন যেন! আসতে আসতে রূপুর অস্বস্তি বাড়তে  থাকে। মাঝে মাঝে ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি কিছু বলতে চাও?” মেয়েটি কিছুই  বলে না।

বিরতি

আমাদের কাহিনী এই পর্যন্ত হলে হয়তো ঠিক ছিল কিন্তু তাহলে হয়তো সেই   নাটকীয়তা আসত না। নাটক থাকবে কি খাকবে না, সেটা তর্কের ব্যাপার গল্প এখানে শেষ করে দিয়ে হয়তো পাঠকের মনে হয়তো অবধারিত প্রশ্নের ঝড় তুলে  দেওয়া যেত। “অতঃপর কি হইল?” কিন্তু সে সম্ভাবনায় অন্তত এই গল্পে যাচ্ছি না। যাইহোক মূল গল্পে ফিরে আসা যাক।

পিছনে ফেরাঃ আমাদের মূল গল্প ২

এর কিছু দিনের মধ্যেই রূপু জ্বরে পড়ে। জ্বর চলতে থাকে অনেকদিন। জ্বর কমে  যাওয়ার পরেও তার শরীরে শক্তি বলতে কিছু অবশিষ্ট থাকে না দিনের পর দিন দুর্বল হতে থাকে অনেক ডাক্তারের কাছে যায়। এরপর সে একদিন রাতে সে স্বপ্নটা  দেখে এবং সন্দেহটা মনে আরও বদ্ধমূল হয়। মনে মনে ঠিক করে সে মেয়েটিকে এড়িয়ে চলবে। সময়ের সাথে সাথে মেয়েটি কোথায় হারিয়ে যায় আর রূপুও ভালো হয়ে ওঠে। মনে মনে সে ঠাকুমাকে অনেক ধন্যবাদ দেয়।

শেষ দৃশ্য (ছ বছর পর)
রূপু স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে তার সদ্য বিবাহিত বউ বাপের বাড়ির থেকে ফিরবে। এমন সময় কেউ পিছন থেকে বলে ওঠে, “স্যার ভালো আছেন?” রূপু পিছন ফিরে  দেখে সেই মেয়েটি। যা! নামটাই বলা হয়নি! ওর নাম ছিল রমা। রূপু কিছু বলার  আগে রমা রূপুকে প্রণাম করে বসল। রূপু কিছুই বলতে পাছিল না, শুধু হাতটা  একটু তুলল। রমা কাউকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,শোনো, এদিকে এস একটু”। একটি ছেলে এগিয়ে আসাতে রমা রূপুকে দেখিয়ে বলল, “ইনি আমার স্যার। আর  স্যার, ওর নাম বিকাশ, আমার হাসব্যান্ড।” বিকাশ রূপুকে প্রণাম করতে গেছিল।  রুপু কোনোক্রমে তাকে আটকাল।  
“আমরা আসি স্যার! ট্রেন ধরতে হবে।”
রূপু শুধু রমাকে দেখছিল। অসামান্য সুন্দরী লাগছে মেয়েটিকে। অবিকল সেই এক  দৃষ্টি। রূপু অস্ফুট স্বরে বলল, “এস।”  
কোথায় যাচ্ছে ওরা? শ্রীক্ষেত্র?
রূপুর হঠাৎ মনে হলো, মেয়েটি কি তাচ্ছিল্য করল তাকে! রূপুর কেন মনে পড়ল  মারটিনা নাভ্রাতিলভার একটি কথা, “যে মনে করে হার জিতে কিছু নেই, সে সম্ভবত  হেরেছে”।
রূপু দূর থেকে ওদের দেখছিল। ওদের চেহারায় কত বৈপরীত্য! তবে কি রূপু রেসিস্ট হয়ে গেল?


  
 
   


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন