শিলাবৃষ্টি
হুইস্কির গেলাসে প্রথম চুমুকটা দিয়ে বললাম – কী একটা
গল্প লিখেছিস বলছিলি, পড়ে শোনাতে পারিস।
সায়ন্তন নিজের গেলাসে টপটপ করে চার-পাঁচটা বরফের
টুকরো ফেলে বলল – গল্পের নাম শিলাবৃষ্টি। শোন্ তাহলে!
সে অনেক দিনের কথা। কলেজে পড়ি। গরমের ছুটিতে বাড়ি
এসেছি। সাড়ে তিনটে-চারটের সময় জানালার কপাট ঝটাস্ করে খুলে গেল। দরজাটা বন্ধ হলো দড়াম
করে। ভাতঘুম দিচ্ছিলাম, উঠে দেখলাম ঝড় এসেছে। কালবৈশাখী। সর্বনাশ – উই ধরেছিল বলে
পুরনো বইপত্তর সব ছাদে রোদ্দুরে
দিয়েছিলাম। শুধু ঝড় নয় বৃষ্টিও নামল। ছাতা নিয়ে ছাদে
উঠলাম। হাওয়ার যা জোর, ছাতাটা পটাস্ করে উল্টে গেল। সোজা করতে গিয়ে দুটো শিক গেল
ভেঙ্গে। তাই হাতে নিয়ে বইগুলো উদ্ধার করতে গিয়ে বুঝলাম শিল পড়ছে। বেশ বড় বড়। একটা
ঠকাস্ করে ল্যাণ্ড করল ব্রক্ষ্মতালুতে। এক হাতে উল্টে যাওয়া শিক-ভাঙ্গা বিকলাঙ্গ লেডিস ছাতা। আর এক হাত মাথায় বোলাচ্ছি, রক্তফক্ত বেরোচ্ছে
না তো!
এমন সময় পাশের ফ্ল্যাট থেকে ইস্কুলের বারো ক্লাসে পড়া
মেয়েটা আমাকে দেখে হি হি করে হেসে উঠল। বৃষ্টিতে জামাকাপড় তুলতে এসে সেও ভিজেছে. তবে
আমার মতো যাচ্ছেতাই রকমের অসহায় অবস্থা তার
নয়।
একটা বইয়ের
ভেতর আমার একটা রঙিন
ফটো ছিল – ক্লাস টেনে ইস্কুলে নাটক করেছিলাম, তার। ঝড়ে সে ব্যাটা ছাড়া
পেয়ে সারা ছাদ নেচে বেড়িয়েছে। জলে ভিজে রং ধেবড়ে গিয়ে মনে হচ্ছে এ যেন পিকাসো-ফিকাসো কারুর আঁকা
মডার্ন আর্ট।
আমাকে আর চেনা যাবে না সে ছবিতে।
এখনো চোখ বুজে ইচ্ছে করলেই সেই শিলাবৃষ্টিতে ভিজে
যেতে পারি। সব দেখতে পাই, শুনতেও পাই। এমনকি সেই হাসির শব্দটাও।
- হয়ে
গেল গল্প?
- হ্যাঁ।
- তুই
আজকাল বেশ বাজে লিখছিস।
- ভালো লাগল না তাহলে – ভাষাটার জন্যে বোধহয়! যদি এটা ইংরেজিতে লিখি কেমন হবে?
- সম্ভবত
আরও খারাপ লাগবে। তা শিলাবৃষ্টির ইংরেজি কি করবি – হেইল স্টর্ম...
সায়ন্তন একটা সিগারেট ধরিয়েছে।
ধোঁয়া ফিকে হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে জানালার বাইরে। সেদিকে তাকিয়ে আনমনে বলল – শিলাবৃষ্টির
জায়গায় যদি লিখি ফার্স্ট লাভ...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন