রূপা
মশারীর ভেতর থেকে বেরিয়ে ভালো করে চারপাশ গুঁজে দিলো রূপা। বেডসাইড টেবিলে অয়েন্টমেন্টগুলো রেখে, পানিভরা গ্লাসটা কোস্টারে ঢেকে দিয়ে ডিমলাইট জ্বেলে দিলো। তারপর মায়ের ঘর থেকে বের হবার সময় দরজাটা সাবধানে টেনে দিলো রূপা।
মায়ের সদ্য পোড়াক্ষত চামড়া এভাবেই খুব যত্ন নিয়ে ড্রেসিং করে রূপা। মা যখন তখন চিৎকার করে কাঁদে, পোশাক গায়ে রাখতে চায় না। পরম মমতায় মাকে শক্ত করে চেপে ধরে থাকে সে। বার বার বলতে থাকে আমি আছি, আমি আছি! গত একমাস ধরে এই চলছে।
সন্ধ্যাবেলায়
বাড়িওয়ালা ডাক্তার ইমরান নূর সাহেব আসবেন। বাড়ি ভাড়ার টাকা খামে ভরে রেডী করে রাখে
রূপা। ঘরের খুঁটিনাটি হালকা কাজ শেষ করে ক্লাসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে সে।
ড. ইমরান এই ফ্যামিলীকে নিয়ে বিপদে পড়েছেন। ভাড়াটিয়া হিসেবে মা-মেয়েকে তিনিই পছন্দ করে নিজেই সমস্ত বিপদ ঘরে ডেকেছেন। রূপার আম্মার চিকিৎসাটাও তাকেই করতে হছে। এই স্পর্শকাতর বিষয়ে যত কম লোক জানাজানি হয় ততোই ভালো।
কফির কাপ হাতে চুপচাপ মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে রূপা। টেবিলে বাড়ি ভাড়ার টাকাভরা খাম রাখা এবং ডাক্তার ইমরান টেবিলের উল্টো দিকের সোফায় বসে আছেন।
“রূপা তুমি এই জঘন্য কাজটি করেছ এবং দিব্যি খুশীমনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছো। আমি তোমাকে দেখে দেখে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কীভাবে তুমি এই কাজটি করলে?”
রূপা একদম চুপ। ছোট ছোট চুমুকে ধোঁয়াওড়া কফি খাচ্ছে সে। যেন কফি খাওয়ার চাইতে এই মুহূর্তে আর কো্নো জরুরী ঘটনাই নেই।
“ইমরান মামা”, রূপা কথা শুরু করে, “আপনাকে আমি অনেক সম্মান করি। আপনি এই বিপদে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেননি মামা, আপনি আমার মা বাপ”।
এটুকু বলে হঠাৎ কেঁদে ফেললো রূপা। আবার দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে নেয়।
“আম্মাকে ফুটন্ত গরম পানি পিঠে ঢেলে দিতে আমার একবারের জন্যও হাত কাঁপেনি বিশ্বাস করেন!” রূপা খুব স্বাভাবিক। “আমি বহুদিনের একটা পেইণ্ডিং কাজ আজ করছি। আমি কাজটি করেই পালিয়ে যেতে পারতাম। ব্যাগ গোছানোই ছিলো। আমি চেয়েছিলাম এই নর্দমার কীট গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে হাহাকার করুক সারাজীবন। যে আমার দেখা সব চেয়ে গোছালো একজন মিথ্যাবাদী। যে প্রায়ই তার চাচাতো দেবরটাকে বাসায় রেখে নিজে কোথায় যেন চলে যেত। আমি প্রথমে কিছুই বুঝিনি মামা। আব্বা দু’বছর ধরে প্যারালাইজড, সব কিছু আমাকেই করতে হতো। সেই সুযোগেই আমাদের সংসারের উলঙ্গ ফাঁকটাতে ঢুকে পড়ে আব্বার চাচাতো ভাই। হুহু করে টাকা আসতে থাকে সংসারে। আমি ধীরে ধীরে বুঝতে শিখি”।
“এটুকুই থাক। আমি বুঝতে পারছি আপনি আমার কথা বুঝেছেন। এখন আপনি যদি মনে করেন থানা পুলিশ করবেন, করতে পারেন। আমি মনের আনন্দে জেল খাটবো। অসীম আগ্রহে মৃত্যুদন্ডের জন্য অপেক্ষা করব। আপনি শিওর থাকবেন”।
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে পা তুলে সোফায় বসে মন দিয়ে ‘মাষ্টার শেফ’ দেখা শুরু করেছে রূপা। রিমোট দিয়ে সাউন্ড বাড়াচ্ছে।
অপলক রূপার দিকে তাকিয়ে আছেন ড. ইমরান। কী অসম্ভব নিটোল মিষ্টি চেহারা এই মেয়ের! আজ তার উচ্ছল প্রাণবন্ত হাসি মিলিয়ে গিয়ে মায়ের প্রতি অপরিসীম ঘৃণা দু’চোখের কর্ণিয়া বেয়ে উপচে পড়ছে। সে খুব শান্ত ভঙ্গীতে আজ সব স্বীকার করেছে। একটু একটু করে প্রতিদিন জমা হয়েছে ক্ষোভের আস্তরণ, যা ঘৃণার নামান্তর। রূপা ধীরে ধীরে প্রচন্ড মিথ্যাবাদী মায়ের সকল উদ্ধত আচরণের, নির্যাতনের বিপরীতে নিজস্ব তাড়নায় প্রতিবাদ করে।
ঘটনা শুনতে শুনতে ড. ইমরান পুরোপুরি পাথর হয়ে যান। তাঁর কিছুতেই বিশ্বাস হতে চায় না। মা’কে পেছন থেকে গরম পানির হাঁড়ি ঢালার আগের মুহূর্তে মা হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে পুরো পানিটাই মায়ের গায়ে ঢেলে ফেলেছে রূপা। নইলে নাকি আধা হাঁড়িতেই হয়ে যেত। অনিচ্ছায় শরীর দেবার যন্ত্রণার তুলনায় এই আধাহাঁড়ি গরম পানি কিছুই না। যত অগ্নিকান্ড ঘটেছিল রূপার শরীরে, সেই তুলনায় এই গরম পানির তীব্রতা কিছুই না।
হঠাৎ মায়ের গোঙানি শুনতে পেয়ে ঘরের দিকে দৌড় দেয় রূপা।
“এই যে আমি, সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখো! এখনই cetrimide লাগিয়ে দিচ্ছি। লক্ষ্মীমা!”
ইদানিং রূপার আম্মার কথাবার্তা অসংলগ্ন। নিদারুণ যন্ত্রণা তাঁর সারা শরীরে। তিনি ভালো করে কাউকে চিনতে পারছেন না। ড. ইমরান শুনতে পেলেন রূপার আম্মা রূপাকেই ডেকে বলছেন, '”পালিয়েছে মা পালিয়েছে। আমার গায়ে গরম পানি ঢেলে রূপা পালিয়েছে”।
ড. ইমরান এই ফ্যামিলীকে নিয়ে বিপদে পড়েছেন। ভাড়াটিয়া হিসেবে মা-মেয়েকে তিনিই পছন্দ করে নিজেই সমস্ত বিপদ ঘরে ডেকেছেন। রূপার আম্মার চিকিৎসাটাও তাকেই করতে হছে। এই স্পর্শকাতর বিষয়ে যত কম লোক জানাজানি হয় ততোই ভালো।
কফির কাপ হাতে চুপচাপ মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে রূপা। টেবিলে বাড়ি ভাড়ার টাকাভরা খাম রাখা এবং ডাক্তার ইমরান টেবিলের উল্টো দিকের সোফায় বসে আছেন।
“রূপা তুমি এই জঘন্য কাজটি করেছ এবং দিব্যি খুশীমনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছো। আমি তোমাকে দেখে দেখে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। কীভাবে তুমি এই কাজটি করলে?”
রূপা একদম চুপ। ছোট ছোট চুমুকে ধোঁয়াওড়া কফি খাচ্ছে সে। যেন কফি খাওয়ার চাইতে এই মুহূর্তে আর কো্নো জরুরী ঘটনাই নেই।
“ইমরান মামা”, রূপা কথা শুরু করে, “আপনাকে আমি অনেক সম্মান করি। আপনি এই বিপদে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেননি মামা, আপনি আমার মা বাপ”।
এটুকু বলে হঠাৎ কেঁদে ফেললো রূপা। আবার দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে নেয়।
“আম্মাকে ফুটন্ত গরম পানি পিঠে ঢেলে দিতে আমার একবারের জন্যও হাত কাঁপেনি বিশ্বাস করেন!” রূপা খুব স্বাভাবিক। “আমি বহুদিনের একটা পেইণ্ডিং কাজ আজ করছি। আমি কাজটি করেই পালিয়ে যেতে পারতাম। ব্যাগ গোছানোই ছিলো। আমি চেয়েছিলাম এই নর্দমার কীট গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে হাহাকার করুক সারাজীবন। যে আমার দেখা সব চেয়ে গোছালো একজন মিথ্যাবাদী। যে প্রায়ই তার চাচাতো দেবরটাকে বাসায় রেখে নিজে কোথায় যেন চলে যেত। আমি প্রথমে কিছুই বুঝিনি মামা। আব্বা দু’বছর ধরে প্যারালাইজড, সব কিছু আমাকেই করতে হতো। সেই সুযোগেই আমাদের সংসারের উলঙ্গ ফাঁকটাতে ঢুকে পড়ে আব্বার চাচাতো ভাই। হুহু করে টাকা আসতে থাকে সংসারে। আমি ধীরে ধীরে বুঝতে শিখি”।
“এটুকুই থাক। আমি বুঝতে পারছি আপনি আমার কথা বুঝেছেন। এখন আপনি যদি মনে করেন থানা পুলিশ করবেন, করতে পারেন। আমি মনের আনন্দে জেল খাটবো। অসীম আগ্রহে মৃত্যুদন্ডের জন্য অপেক্ষা করব। আপনি শিওর থাকবেন”।
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে পা তুলে সোফায় বসে মন দিয়ে ‘মাষ্টার শেফ’ দেখা শুরু করেছে রূপা। রিমোট দিয়ে সাউন্ড বাড়াচ্ছে।
অপলক রূপার দিকে তাকিয়ে আছেন ড. ইমরান। কী অসম্ভব নিটোল মিষ্টি চেহারা এই মেয়ের! আজ তার উচ্ছল প্রাণবন্ত হাসি মিলিয়ে গিয়ে মায়ের প্রতি অপরিসীম ঘৃণা দু’চোখের কর্ণিয়া বেয়ে উপচে পড়ছে। সে খুব শান্ত ভঙ্গীতে আজ সব স্বীকার করেছে। একটু একটু করে প্রতিদিন জমা হয়েছে ক্ষোভের আস্তরণ, যা ঘৃণার নামান্তর। রূপা ধীরে ধীরে প্রচন্ড মিথ্যাবাদী মায়ের সকল উদ্ধত আচরণের, নির্যাতনের বিপরীতে নিজস্ব তাড়নায় প্রতিবাদ করে।
ঘটনা শুনতে শুনতে ড. ইমরান পুরোপুরি পাথর হয়ে যান। তাঁর কিছুতেই বিশ্বাস হতে চায় না। মা’কে পেছন থেকে গরম পানির হাঁড়ি ঢালার আগের মুহূর্তে মা হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে পুরো পানিটাই মায়ের গায়ে ঢেলে ফেলেছে রূপা। নইলে নাকি আধা হাঁড়িতেই হয়ে যেত। অনিচ্ছায় শরীর দেবার যন্ত্রণার তুলনায় এই আধাহাঁড়ি গরম পানি কিছুই না। যত অগ্নিকান্ড ঘটেছিল রূপার শরীরে, সেই তুলনায় এই গরম পানির তীব্রতা কিছুই না।
হঠাৎ মায়ের গোঙানি শুনতে পেয়ে ঘরের দিকে দৌড় দেয় রূপা।
“এই যে আমি, সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখো! এখনই cetrimide লাগিয়ে দিচ্ছি। লক্ষ্মীমা!”
ইদানিং রূপার আম্মার কথাবার্তা অসংলগ্ন। নিদারুণ যন্ত্রণা তাঁর সারা শরীরে। তিনি ভালো করে কাউকে চিনতে পারছেন না। ড. ইমরান শুনতে পেলেন রূপার আম্মা রূপাকেই ডেকে বলছেন, '”পালিয়েছে মা পালিয়েছে। আমার গায়ে গরম পানি ঢেলে রূপা পালিয়েছে”।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন