কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

১০) মেঘ অদিতি

একা রাই আর তার সন্ধ্যা
মেঘ অদিতি



আয়না দেখি। কিন্তু কী দেখি!

ধোঁয়া ধোঁয়া ভাবনা চক্রাকারে ঘুরপাক খায় আমাকে ঘিরে। একরাশ কালো চুল, কোমর ছাপিয়ে যায়। ঘুরে ফিরে আয়নায় সে ঢল দেখি। ধোঁয়াটে রাস্তায় একাকী হেঁটে চলা আবছায়া এক রাইকে দেখি। আয়নার আরও কাছে মুখ নিলে দেখতে দেখতে চোখ হয়ে যায় প্রজাপতি। বর্ণিল ডানায় ঘরময় ছুটোছুটি আবার ফের সে চোখ হয়ে যেতে মনে হয় ভ্রমরের কথা। ভ্রমর কালো চুল।

বিকেল পাঁচটা। রেস্তোরাঁয় কোণের টেবিলে আজ ভালোবাসার বর্ষপূর্তি। লুকটা পালটে ফেললে কেমন হয়...

সৌম্যের বরাবর ক্লাসিকাল লুক পছন্দ। ওকে বলি, ঠিক পাঁচটা বেজে এক মিনিট। হেরিটেজ ফিউশন কুইজিন-এ পৌঁছে যাব।

পরের ক’ ঘন্টা আমি পারসোনাকে দিই অথবা আমাকে ওরা যথেচ্ছ দলাই মালাই করে। ফের আয়নায় যখন, তখন আমার চুলে ওমব্রে হেয়ার ট্রেন্ড লুক। বেশ সেক্সি এন্ড সুইট এ্যাজ পাই... মমম.. ঠোঁটে একটা গ্লসি টাচ। আয়না... কে বেশি সুন্দর আগের রাই না এখনকার!



বিকেল ৫টা বেজে ১০:

না লাঞ্চ না ডিনার এমন সান্ধ্যপ্রহরে সাউথ কাফের বদল হেরিটেজ কেন পছন্দ করলাম, সে নিয়ে বার দু’য়েক গজগজ করার পর সৌম্য এখন চুপ। পারসোনার বদৌলতে চেহারার এই বদলও ওর পছন্দ নয়, তা ওর মুখ দেখেই বিলক্ষণ টের পাই। এদিকে আমি গুনগুন... ওস্তাদ রশীদ আলী খানের মালকোষ। গত রাতে পেট্রোল বোমায় ঝলসে যাওয়া মানুষগুলোর কাছ থেকে বহুদূর আমাকে ভাসিয়ে রেখেছিল এই মালকোষ, সেই রেশ মেখে এখন আবার কিছু সময় ভেসে থাকি শূন্যে।

সৌম্যকে বলি, সাউথ কাফে! উহুঁ, আজ তো হেরিটেজ মাস্ট। ওর চোখে চোখ রেখে আমি রাই, মিষ্টি হেসে বলি, আজ সাড়ে পাঁচটায় এখানে... তারপর থেমে যাই অকারণ (যদিও আজ, কোনোভাবেই চাইছি না এরকম কিছু ঘটুক যা আমাকে একলা করে দেয়)

সৌম্য অবাক চোখে আমাকে দেখে।

মনে মনে বলি, রাই, একবার অন্তত তোমার অনুমান ভুল রাস্তায় যাক, একবার। আমার স্মাজড শেডেড চোখের পাতা প্রার্থনায় নুয়ে আসে... পরমুহূর্তে সামলে নিই। যদি সৌম্যকে ভালোবাসি আমি, তবে যা কিছুই ঘটুক তা আমি মেনে নিতে রাজি আছি।



৫ টা বেজে ৩০:

সৌম্য আমার হাতে গিফট বক্সটা তুলে দিচ্ছে। সে কী! ওর জন্য কিছু কিনতে বেমালুম ভুলে গেলাম কী করে আমি! সাড়ে পাঁচটায় ঘটতে যাওয়া কোনো ঘটনা আমাকে একটা গিফট কেনা থেকে বিরত করে দিল! বিব্রত মুখে সে কথা বলতে গিয়ে চেপে যাই। জুয়েলারি বক্সে ঝলমল করে ওঠে হীরককুচি। আনন্দের হাত ধরতে গিয়ে একদলা বিষাদ গিলে ফেলি আর টেবিলে তখন একটা ছায়া পড়ে...

আমাদের ঘিরে মোম মাখানো আলোর ঢল নামে। সৌম্য হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। হীরকচ্ছটাকে অন্ধকার করে দিয়ে এক আলোময়ী সৌম্যকে দু’হাতে জড়িয়ে নিয়ে আলো মাখায়।



৫টা বেজে ৩৫:

সৌম্যর হারিয়ে যাওয়া গুড়িয়ার কথা আমি জানতাম। কেবল তার ফিরে আসাটা এভাবে, জেনেছি দুদিন আগের এক ভোরবেলায়।

টের পেয়ে যাই। আমার সমস্ত পূর্বানুমান অবশেষে ঠিক রাস্তায় এসে দাঁড়ায়।

ওদের দু’জনকে একসাথে রেখে একটা জরুরী ফোন করার কথা বলে বাইরে বেরিয়ে আসি। অঘ্রাণের এই সন্ধ্যায়, সপ্তাহব্যাপী ডাকা অবরোধের রাস্তা ধরে দূরে চলে যায় আরও একটা দিন।

এলোমেলো অনেকটা পথ হেঁটে যাই, একা...




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন