কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

চিরশ্রী দেবনাথ


উট ও অন্যান্যরা 


এই মুহূর্তে দিশা তরুণকে ছুঁয়ে আছে। দিশা কী ভাবছে, তরুণ জানে না। তরুণ কী ভাবছে, দিশা জানে না। তারা একজন আর একজনের থেকে অনেক দূরে।  তবুও তারা পরস্পরকে ছুঁয়ে আছে। তাদের সামনে মরুভূমি। দশবছর পর সব কাজ ফেলে মরুভূমি দেখার জন্য সময় বের করা হয়েছে। অজস্র ক্যাকটাস সামনে। চড়চড়ে রোদ। যে উটের পিঠে চড়ে তরুণ আর দিশা প্রকৃত মরুভূমির  কাছাকাছি এসেছে, সেই উট আর উটের মালিক একটু দূরে বসে আছে। একটা দুটো ছাউনি। সরবত আর চায়ের দোকান। সামান্য নাস্তা পানি। দিশা–তরুণ রাজস্থানের রোদে পুড়ছে। সূর্য ডোবা দেখে যাবে। লাল রঙে কীরকম ছেয়ে যায় চারপাশ, আদিগন্ত -  সেসব দেখতেই তো আসা। না কি অন্যকিছু?

দিশার মাঝে মাঝে মনে হয়, কতযুগ আগে থেকে সে তরুণের সঙ্গে আছে। সদ্য বি এ পাশ করা এক উচ্ছ্বল মেয়ে ছিল সে। তরুণ তার চাইতে অনেকটাই বড়।  বিদ্যে, বুদ্ধি, মেধা সব দিক দিয়ে তরুণ তখন উজ্জ্বল এক যুবক। ভালো চাকরি করে। দারুণ ব্যস্ত। সব রকম দায়িত্ব পালন করে সে সংসারের। দিশাও আস্তে আস্তে নিজেকে পাল্টে ফেলল। আসলে পাল্টে ফেলা আর দূরে চলে যাওয়া বোধহয় একই। ভালোবাসাবাসিটা ঠিক কীরকম হয় যেন!  প্রথম প্রথম দিশার সবসময় তরুণকে কাছে পেতে ইচ্ছে করতো। মনে হতো, জড়িয়ে ধরে যখন  তখন। মনে হতো, সবকিছু ফেলে সে আর তরুণ কোথাও থেকে যদি ঘুরে আসতে পারতো! যেখানে কোন পরিচিত মানুষ থাকবে না। সেইসব মানুষই  থাকবে যারা তাদেরকে কোনদিন দেখেনি। সেখানে কোথাও বসে অনন্ত সময় ধরে গল্প করে যাবে। গল্পগুলো যেন কোথাও হারিয়ে গেছে এখন। আজকে দিশা একটি গল্পও খুঁজে পাচ্ছে না। যাও বা একটি দুটো কথা মনে হচ্ছে, নিজের কাছেও অবান্তর মনে হচ্ছে। তরুণ তো গল্প জুড়েছে উটের মালিকের সঙ্গে। উটের মালিকও এন আর সি সচেতন। ওদের পূর্বপুরুষ কবে আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেছিল, সব ডকুমেন্টই নাকি ওর আছে। এখন রাজস্থানে এন  আর সি  হলে দেখা যাবে। সে নাকি আসলি ভারতীয়। হায় রে! সব মানুষ আজকাল  বাস্তুহারা। সবার প্রমাণ দরকার। দিশার এসবে  কোন মন নেই। তার তরুণ আছে। তরুণের সঙ্গে কথা না হলেও দিশা জানে, একটি শক্ত কাঁধ আছে,  যেখানে সে মাথা রাখতে পারে। তরুণ কী ভাবছে? তরুণও কি ভাবছে, এই   পৃথিবীতে তার একটি নরম কোল আছে, খুব... খুব ক্লান্ত হলে সে যেখানে মাথা রাখতে পারে... দিশা কী ভাবছে, কী ভেবেছিল, কী ভাববে, এসব না জেনেও?

যাহ্! সূর্যাস্ত শুরু হয়ে গেলো তো! মরুভূমির বুকে কি এমনি করেই হঠাৎ সূর্যাস্ত শুরু হয়ে যায়! 
দিশা, তরুণ, উটের মালিক আর উট সূর্যাস্ত দেখতে লাগল... 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন