কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

তুষ্টি ভট্টাচার্য




নাইজেল  



পাথরকে কেউ ভালবাসে? মানুষ কেন কোনো প্রাণীই সম্ভবত পাথরকে ভালবাসতে  পারবে না। অথচ সেই নাইজেল নামের গ্যানেট পাখিটি তো নিউজিল্যান্ডের এক প্রত্যন্ত দ্বীপে (মানা আইল্যান্ড) তার পাথরের সঙ্গিনীর পাশে কাটিয়ে দিল তার সারাটি জীবন। তার পাথুরে প্রেমিকাও গলা তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল নিঃশব্দে। এখনো সেভাবেই রয়েছে সঙ্গী হারিয়ে। তাদেরই প্রজাতির অন্য কিছু পাখি  এসে ওখানে বাসা বাঁধলেও সেই প্রেমিকটি কিন্তু শরীরের টানে বেছে নেয় নি কোনো সঙ্গিনীকে। পাথরকে ভালবেসে সে নিশ্চই অনুভব করেছে তার হৃদয়ের স্পন্দন। নইলে সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারত না। মানুষও তো পাখি হতে চেয়েছে আজীবন। উড়তে চেয়েছে, আবার বাসা বাঁধতেও চেয়েছে। ওড়া আর স্থিতি তার দুই বিপরীত স্বভাবের মধ্যে রেখেছে নিজেকে। আমিও তেমনি চেয়েছি। সেও, তুমিও। তবে পাথর হয়ে অনড় হয়ে থাকতে চায় নি কেউ। তবুও তো মানুষ পাথর হয়েছে। অনিচ্ছায়, ঘাতে-প্রতিঘাতে। চেয়ে থেকেছে অপলক ওই আকাশের দিকে। ওড়ার ইচ্ছেটি তার ঘুমিয়ে পড়ে নি, ঘুম পাড়ানো হয়েছে। তার হলুদ গলার মধ্যে ওঠানামা করতে চেয়েছে হিম মেশানো ভারি জলের মত কিছু পাথরওঠানামা করতে পারে নি তার কন্ঠার হাড়, গলার বাষ্প স্থির হয়ে থেকে যেতে যেতে শুকিয়ে পড়েছে। সেই মানুষটিকে আমরা তো পাথরই বলব। যদিও তার শ্বাস পড়ছে, নড়াচড়া করছে তার শরীর। মন তো আর দেখা যায় না, বায়বীয় পদার্থ এক, নাকি নিছকই অস্তিত্বহীন কল্পনা মাত্র! আমরা অত জানি না, জেনেছি ওই পাথর সঙ্গিনীর পাশে মরে পড়ে থাকা নাইজেলের গল্পটি। সত্যি গল্প এক, যাকে নিয়ে আলোচনা করছে মিডিয়া, সাধারণ মানুষ। এই আশ্চর্যকে আমরা ছুঁতে পারি নি বলে, আমাদের ধারণার বাইরে এমন পাথর সঙ্গিনী বেছে মৃত্যু বরণের ঘটনা। আমরা কেউ পাথর হতে চাই নি, চাইব না কোনোদিন। আমাদের সঙ্গী বদল হবে, হাসিকান্নার কারণ  বদলে যাবে, আমাদের প্রেম, বিরহ, বিচ্ছেদ, বেদনা বদলে যাবে। তবুও আমরা নাইজেল হব না, তবুও আমরা পাথর হতে চাইব না, পাথরকে ভালবাসতেও পারব না। পাথর আসলে এক জমাট হয়ে যাওয়া মাটির গল্প, মাটি আসলে এক ক্ষয়ে যাওয়া পাথরের গল্প।



ন্যাশনাল অডেবন সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ক্রেস নাইজেলের সম্বন্ধে বলেন, “নাইজেল এক পথপ্রদর্শক আত্মা। তার মত সাহসী প্রাণ খুব কমই দেখা যায়, এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে একা কাটিয়ে যাওয়া মুখের কথা নয়” ক্রেস আসলে  জানতেন পথপ্রদর্শক হওয়ার সঠিক সংজ্ঞাটি। ১৯৭০সালে তিনি এই দ্বীপে এসেছিলেন কিছু করে দেখাবেন বলে। এই রকম পাথরের মূর্তি আর পাখির ডাক রেকর্ড করে তিনি অন্য সামুদ্রিক পাখিদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন প্রথমবার। মেইন আইল্যান্ডের বেশ কিছু দ্বীপে শিকারিদের বদান্যতায় এই সময়ে পাখিদের অস্তিত্ব প্রায় বিলোপ পেতে বসেছিলসেই সময়ে ইস্টার্ন এগ রক-এ আটলান্টিক পাফিনদের কোলোনি তৈরি করবেন বলে স্থির করেন। এ জন্য প্রথমে তিনি পাখির বাচ্চা নিয়ে এসে ওই দ্বীপে ছেড়ে দেন, আর আশায় থাকেন যে, ওরা একদিন বাসা বাঁধবে ওখানে। কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।  


                                                                            
তখন তিনি উপলব্ধি করেন যে এই ধরনের পাখিরা কোলোনি ছাড়া কখনই বাসা  বাঁধে না। আর তারপরেই মূর্তি আর রেকর্ডেড সাউন্ডের আইডিয়াটি কার্যকর করেন। এছাড়াও তিনি বোঝেন যে মূর্তি নড়াচড়া না করলে পাখিদের স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহ কমে যাবে। পাখিদের বোকা বানানো অত সহজও নয়। তাই ওখানে তিনি বেশ কিছু আয়না রেখে দেনপাখিরা নিজেরদের প্রতিফলন দেখে খুশি হত নিশ্চই! কারণ তার ফল পাওয়া যায় কিছুদিনের মধ্যেই। বর্তমানে ইস্টার্ন এগ রক-এ ১৭২ জোড়া পাফিন রয়েছে। ক্রেসের এই পদ্ধতি, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সোসাল অ্যাট্রাকশন’, সারা পৃথিবীতে বর্তমানে জনপ্রিয় হয়েছে। 





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন