কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

১১) ইন্দ্রনীল ঘোষ


দেবাঞ্জন ও মার্কোপোলো : কবিতার গ্রাম


-- গ্রামটা আসলে কবিতার
-- কবিতার গ্রাম?
-- হ্যাঁপ্রত্যেকটা মানুষের জীবদ্দশায়, তার কিছু কবিতা থাকেমানুষটা মারা গেলে সেই কবিতাগুলো একা হয়ে পড়েতাদের আর দেখার কেউ থাকে নাকবিতারা তো আমাদের মতো টক করে মরে যেতে পারে নাফলে এ কোণে ও কোণে না খেয়ে না ঘুমিয়ে চোখের কোলে কালি পড়ে যায়রোগা, দূর্বল... ভারি খারাপ কাটেতারপর শহরের ধূলো ধোঁয়ায় কষ্ট পেতে পেতে একসময় ক্ষয়ে যায়আমরা তাই সেই সব কবিতাদের পুনর্বাসনের জন্য এখানে শহর থেকে অনেক দূরে নির্জন ড্যামের ধারে একটা গ্রাম বানালামএখানের জলটাও খুব ভালো, বুঝলেন? যেই খবর পাই কোথাও কোনও কবিতা একা  হয়েছে, গিয়ে নিয়ে আসিআমার নাম বাবলু ভট্টাচার্য, আর ও হলো রমেশ দত্তআমরাও এক সময় লিখতামকাজের চাপে ছেড়ে দিইতবে ভালোবাসাটা থেকেই গেছিলউশখুশ করতামতারপর একদিন কাজকর্ম সব ছেড়ে এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়িশুরুতে নানা অসুবিধা হয়েছিল বটে...

পায়ের কাছে একটা সুটকেস রাখা ছিলএতক্ষণ খেয়াল করিনিবাবলুর কথা শেষ হওয়ার আগেই রমেশ সুটকেস হাতড়িয়ে এই তো এই দেখুন না...লে একটা কাঠের ফ্রেম বার করেযে ফ্রেমে ছবি টাঙানো হয়, সেরকমইশুধু কাচ বা ওই বোর্ডটা নেই, ফাঁকা
-- এইটা নিয়ে বেনারসে যাচ্ছিলাম, একটা কবিতাকেই আনতে
আমি: ফ্রেম নিয়ে? কেন?
রমেশ: ও মা! প্রত্যেকটা কবিতার একটা নির্দিষ্ট সাইজ আর শেপ থাকে তো... ফ্রেম নইলে আনবো কী করে?
বাবলু: বেনারসের পুরো গল্পটা শুনলে তো আর সামলাতে পারবেন নামন্নু নাম ছিল লোকটার, বুঝলেন? খুব বড় মাপের গুন্ডালোক-টোক খুন করে  বেড়াতপ্রথমে শুরুটা করেছিল তেরো বছর বয়েসেতখন অবশ্য ছোটখাটো পকেটমার, ধরা পড়ে পাবলিকের পেটানি আর জেলজেল থেকে বেরিয়ে আরও বড় গুন্ডাএভাবে প্রত্যেকবার জেল ঘুরে ঘুরে তার প্রোমোশন হতে থাকলকম্মের মধ্যে কম্ম, এইসময় একটা বড়লোক মেয়ের সাথে প্রেম করে  বসে, খুব সিরিয়াস প্রেম, প্রেমিকাটিওকিন্তু জানতে পেরে প্রেমিকার বাড়ি থেকে বাগড়া দেয়মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় আমেরিকা প্রবাসী এক ভারতীয়র সাথে তো মন্নু বেচারা কী করে, আমেরিকা গিয়ে তো আর মেরে আসতে পারে নাএখানেই আরও বেশি বেশি করে খুন করতে থাকেথাকার মধ্যে ওর কাছে ছিল 0.32” একটা পিস্তলপাতি
দেবা: চা খাবেন?
বাবলু: নাহচলুন বেরোইআবার ফিরেও আসতে হবে তাড়াতাড়ি
আমি: হুমযাওয়াই যায়Interesting লাগছেব্যাগগুলো নিয়ে আসা যাক কী বলিস?
বাবলু: গল্পটা শুনে নিন তো হলো কী, তিন বছর পর সেই প্রেমিকা বেনারসে ফিরলোবর বাচ্চা সমেতকিন্তু একবারের জন্য দেখা করল মন্নুর সাথেবরের সঙ্গেই এলোভালোবাসার টান, বুঝতেই পারছেনবরকে বাইরে রেখে মন্নুর হাতে তুলে দিল খাঁটি বিলিতি মাল, Browning-এর HiPower Standard 9mm 4.62"বলল, ইয়ে লে মন্নু তেরে লিয়ে... অর কুছ তো তেরে কো দে ন্যই প্যয়ি! মন্নুর সে যে কী অবস্থা! সেই পিস্তলটাকেই জড়িয়ে ধরে  ঘুমোতোমদ খেয়ে পিস্তল ধরে কাঁদতগা মুছিয়ে দিত, ঘুম পেয়েছে কি না জানতে চাইত
আমি: মরলো কীভাবে? Encounter-এ?
-- আরে না নামরলোও তো ও ভাবেইএকদিন প্রচুর মদ খেয়ে পিস্তল জড়িয়ে ঘুমোচ্ছেআচমকা চাপ টাপ পড়ে দড়াম ফটকিন্তু ওরও যে একটা কবিতা আছে, সেটা বোঝা গেল ও মরার পরেকবে কখন যে সেটা তৈরি হয়েছিল, কেউ জানে না হয়তো মন্নু নিজেও জানতো না
আমি: Sad...
দেবা: হুম চল ব্যাগগুলো নিয়ে আসি
ব্যাগ আনতে আনতে দেবাকে বলি, এই জায়গাটার নাম কী জানিস?
-- কোডারমা তো!
-- হ্যাঁ কোডারমা জেলাআর শহরটার নাম ঝুমরি তিলাইয়া...

দুধের পাহাড় কুলের বন
পেরিয়ে গিরি গোবর্ধন
নাইতে
ঝুমরি তিলাইয়ার কাছে
যে নদীটি থমকে আছে
তাইতে  

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন