কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৭ |
নকল গল্প
ওটা কি টারান্টুলা?
সকাল সকাল চা খেতে খেতে বাইরে তাকিয়ে
দেখলো বাড়ির সামনের উঠোনে পড়ে আছে। বাদামী রঙের, বড়সড়। দেখে তো খেলনা মনে হচ্ছে।
হয়ত আশেপাশের বাড়ির কোন বাচ্চা খেলাধুলো করে দিনের শেষে ফেলে গেছে। ওর এয়ার বিএনবি
বাড়ির উঠোনখানা খোলা। যে কেউ আসা যাওয়া করতে পারে। ইলেক্ট্রনিক লক কেবল এন্ট্রেন্সে
ডোরে। নাকি কেউ অতিথি অভ্যর্থনায় এসেছিল, ওকে ভয় দেখাবে বলে? হয়ত কেউ ছুঁড়ে ফেলেছে
বাইরে থেকে। এয়ার বিএনবির সাময়িক বাসার লোককে বিব্রত করবে বলে। সম্ভাবনা অসীম যে কোন পরিস্থিতির মতই। ও কিভাবে দেখবে সেটা ওর ওপর।
আর তার ওপর নির্ভর করবে ওর মন শান্ত থাকছে নাকি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে।
সেদিন একটু পর ও কাজে বেরিয়ে গেল মাকড়শার মৃতদেহকে সরোজমিনে তদন্ত না করে। রাতের অন্ধকারে উঠোনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে টর্চ জ্বেলে দেখে নিল, কোণে ঠিক আগের জায়গাতেই আছে কিনা টারান্টুলা। হাওয়া কি তাকে একটুও নাড়িয়ে দেয়নি? মৃত শরীরে কি আরেকবার প্রাণের সঞ্চার করতে চায়নি উন্মুক্ত বাতাস? তাকে কি বলতে চায়নি, "আয়, আরেকবার ফিরে আয় পৃথিবীর বুকে! দেখ তোর নিথর শরীরের চারপাশে সবকিছু কত জীবন্ত!"
পরেরদিন সকালে আবার চা খেতে খেতে ও দেখলো, বড় এক কাঠবিড়ালি এসে টারান্টুলাকে শুঁকে টুকে চলে গেল। খেল না, বদহজম হবে? এবার ওর সন্দেহ হল। আজ কাজে বেরোনোর সময় পায়ের আলতো টোকায় নাড়িয়ে দেখলো শরীর। পচন নেই দেহে। সেখানে প্রাণের বাসা ছিল না কোনোদিন। উলের নরম শরীর। চিপলে রক্ত বা দুধ কোনোটাই বেরোবে না। ও বুঝে গেল টারান্টুলা নকল, খেলনা।
তারপর ওর পাশের ঘরে আরেক এয়ার বিএনবি ফ্ল্যাটমেট এল। ওরা একসঙ্গে দেখে হাসাহাসি করলো খেলনা টারান্টুলাকে নিয়ে। ও কি করে ওখানে এলো জানা গেল না, জানা যাবে না কোনোদিন। তাই আর গল্প হল না টারান্টুলা থেকে। তবে মাকড়শা যখন আসল নয়, খেলনা বলে জানা গেল তখন থেকে সে অবহেলার শিকার হয়ে গেল। আর কেউ পাত্তা দিল না উঠোনে পড়ে থাকা নরম দাঁড়াগুলোকে। মৃত্যু হয়নি সেখানে। পচনহীন সে শরীর।
একদিন কাজে বেরোনোর সময় ও দেখলো সামনের নুয়ে থাকা শিউলি ফুলের গাছ থেকে কিছু সাদা ফুল ঝরে পড়েছে ওর বুকে। নকলকে আসল সাজাবার চেষ্টা করছে। একটা মৃত্যু তৈরী করতে চাইছে শিউলি। ও দেখলো আর ভাবলো গল্পের সম্ভাবনা অসীম। তাই তো ও গল্প লিখতে পারে না!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন