কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪

প্রশান্ত গুহমজুমদার

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৭

সময়

কানের গোড়ায় ট্রিগার টেপার সঙ্গে সঙ্গে দেয়ালে ছায়াটা একটু টলে গেল। কোন শব্দ নেই। সাইলেন্সার লাগানো আছে। পাশে রাখা হরির কাছ থেকে চেয়ে আনা ক্ষুরটা দেখলো। সময়। হাঃ! শেষ অবধি সময়। নাহলে কি দিনই না গ্যাছে! টিনের বাড়িতে কেউ একজন বলেছিল, এবার থেকে অপদার্থের ভাতের পাশে এক চিমটে ছাই রেখে দিও। না হলে দেখতে হয়, অগ্রজ তার পিতৃদেবকে বলছে, জুতো মেরে বেজন্মাটাকে বাড়ি থেকে দূর করে দেবো! বাবা নির্বিকার। অথচ এই মানুষটা পাশে না থাকলে ওর পড়াশুনো কিছুই হতো না। হাঃ! সময় কতো দ্রুতই না বদলে দিলো মানচিত্র। একে একে মুছে দিলো কত্তোসব। ক্যানভাসে নতুন ছবি। ও ক্রমে ৬ ফিট। চমৎকার স্বাস্থ্য। বেশ লোভনীয় কোম্পানিতে ভারি পে প্যাকেটের চাকরি, পার্কে হাঁটার মতো পাশে চটকদার মেয়ে, পশ এরিয়ায় তিন ঘরের ফ্ল্যাট আর সময়ের প্যালেট সবটুকু নিয়ে তার উঠে এল ক্যানভাসে, স্লাইড শোয়ের মতো বদলে বদলে। অনিল মাঝেমধ্যেই দাড়ি কাটার সময়ে গালে গলায় ব্লেড দিয়ে একটু কেটে দেয়। রক্ত চুঁইয়ে নামে। মুগ্ধ চোখে দেখে। জ্বালাটা উপভোগ করে। গলার কাছে আর একটু চেপে দিলে কী হতে পারে। ক্যানভাস বড়োজোর আবার শূন্যের দিকে যাবে। পূর্ণতা কাকে বলে? অনিল  কি পূর্ণ! পূর্ণ হলে এইসব হয় বুঝি! এতসব! কাদাজল ভেঙে টিনের বাড়িটা কখনও দেখতে যায়। দূর থেকে। সময় সারা বাড়ি জুড়ে গলে গলে নামছে। শীতের বিকেল আর সিঁড়ি ক্রমে অন্ধকার। রাজলক্ষী মাসি বলেছিল, দুঃখ করিস না। দেখিস, তোর একদিন সময় আসবে। এসেছে। সারাক্ষণ পায়ের কাছ বসে থাকে। কী বর্ণময়!  এগারোতলা ফ্ল্যাটের জানালার সামনে সোফায় বসে মদের টলটলে কালচে লাল যখন চোখের সামনে তুলে  ধরে, দেখতে পায়, সিলিঙে, দেয়ালজোড়া আয়নায় সময় খুশিতে গরগর করছে। টাইয়ের নট্‌ বাঁধতে বাঁধতে দ্যাখে, দেয়ালের ঘোড়াটা ছুটছে। ও কি জানে, ঐ সাদাকালো শরীর নিয়ে ও কোথায় যাচ্ছে? ভাবতে ভাবতেই লিফ্‌টে। আজ বোর্ড মিটিং। আর একটা লিফট। আরো একটু ভারি পে প্যাকেট। হয়ত নতুন আর একটা গাড়ি। খুব একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে জীবন। এত ভালো ওর আর সহ্য হচ্ছে না। সেদিনও মেয়েটাকে নিয়ে ফ্ল্যাটে এসেছিল। দুর্দান্ত জমেছিল। তাল কেটে দিলো স্মিতার একটা প্রশ্ন, what ‘bout our settlement? U r going to be father. কথাটা যখন অনিলের কানে ঢুকলো, ও তখন সবে স্মিতার নিচে নেমে এসে ঘোড়াটার সামনে দাঁড়ালো। ‘কতদূরে যাবো! আমি? আমি কি সার্কাসের সেই রিং অফ ফায়ারের মধ্যে কোথাও একটা আটকে আছি!’ উফ্‌, রিংটা তা হলে পূর্ণ হল। নাঃ, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, সবটাই তবে তার দেখা হয়ে গেল! আর নয়। এবার সময় হয়েছে সময়কেই স্থির করে দেওয়ার। কাবার্ড থেকে সেই লাইসেন্সড রিভলবার, একটা বুলেট আর ক্ষুরটা। একটা চিঠি লিখলো। কিছু টাকা এনে টেবিলে রাখলো। হরির জন্য।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন