কবিতার কালিমাটি ১৩৭ |
তার
প্রতিটি ইলেকট্রিক শকে মৃত্যুর পর
আত্মশক্তির কাছে কাঁদে, আত্ম-পরাভব
নিয়ন্ত্রিত, জড়ত্ব, অভিধার অন্তঃচেতনে
ধ্বংসের সুপরিবাহী শরীর, শাঁসের ভিতর
রসের ভিতর, রক্তের ভিতর, মনের ভিতর
প্রতিটি ইলেকট্রিক শকে মৃত্যুর পর
তড়িদাহত, বড় স্তব্ধ, শান্ত, অবিকৃত, জড়
নিস্তরঙ্গ, শুকনো, সংকুচিত, ফ্যাকাশে
ফের একবার জ্বলতে না-পারা ফিলামেন্ট
আলোক সন্ধানীর আশ্চর্য এক নির্বাপন
প্রতিটি ইলেকট্রিক শকে মৃত্যুর পর।
শব্দের মধ্যে নিঃশব্দ
একটি শব্দ অনেকক্ষণ ভাবাতে পারে
আপনাকে,
একটি প্রেক্ষিত একটি বোধকে খুঁজে এনে
তার গায়ে পরিয়ে দেয় কোনো একটি ধ্বনির সভ্য জামা,
তবে উত্তেজনা বা আবেগ বা বিরক্তির দরজাটি
তেমন কপাট-ভাঙা হলে, অথবা উচ্চারণের
চৌকাঠ যদি একান্ত খোলাই থাকে--
শব্দটি চঞ্চল বালকের মতো ঘর ছুটে
বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়
অথচ মানুষের শ্রবণের এতো যানজট
মস্তিষ্কের চৌরাস্তায় হঠাৎ একটি সংঘর্ষ-- অসম্ভব
নয়,
আমরা তো দুর্ঘটনা পর্যন্ত অপেক্ষা করি--
যেখান থেকে আমাদের শুরু হয়-- মনন, সংবেদন, সমবেদনা
প্রভৃতি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রাণ যেতে পারে উড়ে
শব্দের প্রক্ষেপ এতো কেন দুর্ঘটনা প্রবণ...
সিদ্ধ
সময়ের খণ্ডিত খণ্ডগুলির সঙ্গে
ঘটমানের খোসা ছাড়ানো দানা
দুইই মিশিয়ে, দিই হাঁড়িতে বসিয়ে
মুখোমুখি বসে দেখি-- তার টগবগ
ব্যথিত তরলের নিচে, মৃত্যুর আঁচ।
খিদে ছিল, খিদে আছে, বারোমাস
তবু অসম ব্যঞ্জনের অসিদ্ধ গানে
গন্ধ-বিজ্ঞানে, সে ধোঁয়া ও বুদবুদে
রেখেছে-- কী দারুণ ক্ষুধার্ত করে।
সন্ধের আগে-- নিশ্চয়ই নেমে যাবে
নেমে যাবে, রসহীন রসনার ফাঁকে
এই বিশ্বাস আগুনের শিখা-চোখে
জঠরে যখন নিঃসৃত ষড়রস এসে
চুপ, ধারণাকে ধরেছে ঢাকনার মুখে।
নায়িকা
পূর্বাপর পোস্টারে দেখেছি, মুখটি সুখী সৌখিন
সুযোগে তাকে খুঁজে, কাঁচা আঠার দেয়াল থেকে
লেপ্টে যাওয়ার ফাঁকে টেনে, ছিঁড়ে, মুখটা এনে
সেঁটেছি দরমা বেড়ার ঘরে, ফাঁক বোজাতে।
কেরোসিন সংস্কৃতির আলো নিভিয়ে বাড়িয়ে
ঢেউটিন চালা থেকে ছলকানো সূর্যে বা ছায়ায়
দেখেছি দীর্ঘ মুখ চেয়ে তার, খিদে ঘুমে, যাপনে
পূর্বাপর নতুন কাহিনির, নবতম পোস্টার দেয়ালে।
সেও যে দেখেনি তা নয়, মুখোমুখি একই ঘরে
দেখেছে সে চুপ, জ্যান্ত কান্নায় বা উলঙ্গ অবয়বে
দিনে রাতে খিদে, রক্তপাতে, অলস ও নিরলস-এ
সেই পোস্টার থেকে, চির সিনেমার মতো মুখ করে।
বাসন্তিকা
এই যে তুমি বলো, আহা হা বসন্ত!
এই যে পলাশে, শিমুলে তুমি গলিত
সব রং এসে তোমার বুকে লাগে
তুমি কচি মেহগনি পাতা বোধ করো,
আমি তোমাকে একটা মার্চের দুপুর দিলাম
টেবিলে জলের গেলাসে চাপা কাগজ
কলমের খুলেছ মুখ, লেখোনি তখনও
প্রথম ফ্যানের হাওয়া, না জানলার রোদ্দুর
কোনটা ঠিক লাগে যখন জানো না তুমিও,
আচ্ছা, ঘর ছেড়ে বারান্দায় না হয়
না হয় তো গেট পেরিয়ে গলি, পেরিয়ে রাস্তা
রাস্তা ধরে খানিকটা ভিডিও গেমের শহর
হেঁটে যাও না জানি, গাড়ি করে একটু গেলে গ্রাম
চলো দেখি, শোনাও তোমার বসন্তের নাম গান,
কোথায় দেখেছ দুরন্ত প্রেম, চুপচাপ ধানক্ষেত
ঝরাপাতা প্রসঙ্গ বিলাপ তখনও গাছের পাড়ায়
ধুলো জমে আছে হাজার সবুজের উপর
এলোমেলো দক্ষিণ হাওয়ায় উড়ছে শুকনো শব।
প্রতিটি কবিতার শব্দ কারুকাজ ও অঙ্গিক মুগ্ধ করল !
উত্তরমুছুন