কবিতার কালিমাটি ১৩৭ |
বোতাম
রঙিন বোতাম নিয়ে সেসব খেলা বালিকাবেলার, সমুদ্রের কাল্পনিক জমিনে
ভাড়া করা শৈশবী ফ্রকে সেঁটে থাকত চাঁদমণি লাল নীল, টোপা বোতামের বুকে খেলে ফেরা আঙুলের
নকশা
কখনো বা নীল, হলুদ অথবা দু একটা সবুজের গোলে অনেকগুলো
স্বপ্ন রামধনু পাড়ি দিত,
দিন বদলের সেসব গপ্পো, বালিকাটি নিখোঁজ গেছে বহুদিন।
এখন সে কলম টানে, আঁক কষে মিলাতে চায় নিষ্ফল স্বপ্নের
সন্ধিদাগ
দু চারটে দাগে স্বপ্নের চোরাকাঠি খুঁজে ফেরে প্যান্ডোরার
বাক্সের চাবি, গুপ্ত মানচিত্র, আতস কাঁচটা।
এখনও সুযোগ মেলে
হাতে আসে বোতামের চিঠি
সাজুগুজু বেলা, ঢের সৈন্য, রাজকীয় শকট, বাদ্যসরঞ্জাম
পঙ্খীরাজ উড়ে ঘনঘন আমাদের নিরিমিষি ছাদে, হাতছানি,
পক্ষীরাজ, ইস্তেহারী ইকেবোনা, ক্রচেটে রঙ উপচায়।
যথাকালে জুটে যায় বোতামভরা শৈশব ফ্রক, হাততালি
ফেটে পড়ে নেপথ্যের সঙ্গীতে,
আঙুল ছোঁয়াতেই বোতামের মুখগুলো একসাথে হেসে ওঠে
সবটা অন্ধকার হঠাৎ
এবড়া কা ড্যাবড়া গিলি গিলি ছুঃ!
বোধিমঙ্গল
একাকিত্ব থেকে গজিয়ে ওঠা তোমার সন্তানদের নাম বোধিমঙ্গল।
জন্মলগ্ন থেকে তাদের গায়ে অলৌকিকের আঁচড়। ভালো না বেসে যাবে কোথায়, বাৎসল্য ও বাসুকী
মিলে পারতপক্ষে আঁচলের খুঁটে চাবির গোছার মত অনেক অনেক সংস্পর্শগত এক সূত্রাকার অভিধান,
নিত্যদিনের বাস্তুজ্বালায় আঁচল ছিঁড়ে যায়, মিটে যায় কপালের চূড়ান্ত প্রাতে খোদাই করা
বাঁধনবীণার অলঙ্ঘ্য সত্যরুপ, রক্তবর্ণ এক চিরায়িত ইতিবৃত্ত। অপত্যকণ্ঠে বেঁজে উঠবে
দেবপ্রেরিত সেসব সতর্কবার্তা, গভীর পুষ্করিণীর মত থিরায়িত বুকে যারা সেই অনড়, মৃত্যুহীন
প্রভারক পাথরখন্ড, কুহুডাকের অসময়ী আশংকায়, যাদের প্রাণভ্রমরাবলী অতলের পাতায় ডুবে
খায় জল, আর ফিনফিনে ডানায় বয়ে নিয়ে যায় পাতালপুরের গোপন জটলায়, রূপকথার শরীরেই কতবার
একেকটা আলো নিজের মত ফুটে ওঠে
কত প্রস্তুতি আর তাৎপর্যহীন ছবির ভেতর থেকে
অলভ্য বস্তুটির নিষ্ক্রমণ,
চমৎকারের নাফরমানী দিয়ে রিপুরঞ্জক মন
দূর্বাদি ঘাসের আলোড়ন তোলা হায়েনা স্তবকগুলো পুরনো
ছবির মত এক অতীত চুম্বন, প্রায়শই ডুরো কাটা রাতনকশায় কালপুরুষের কান্না শোনে।
ট্যাটু
পুরনো ক্ষতের মত অবিভক্ত সভ্যতায়
হাত পাতি
ভিখিরি সৌজন্যে মোড়া আমার তৃতীয় নয়ন।
কবচ কুন্ডলহীন এক পরাজয় নিয়ে নেমে পড়ি ফলজ্ঞাত
অজ্ঞতায়
তারপর কত কত অর্জুন ছিনিয়ে নেবে সব,
বংশকলংকের ধারাভিতে আমি সংক্রামিত হবো
স্থিতিস্থাপক কিছু ক্যালকুলাস ধাঁধায়
আমারও পরাজয় নিয়ে মেতে উঠবে ধোঁয়াটে রণক্ষেত্র
বিচুর্ণ দেহের ব্যাভিচারায়
রোয়া অজীর্ণ
সভ্য ট্যাটুঘোর।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন