কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

 

সমকালীন ছোটগল্প


স্ট্রং কফির শুরু এবং শেষের সাত পা


টিয়া-রং সবুজ শাড়ি ঢাকা দুটো ডাব যেন ভেসে উঠলো পুকুরের জলে। টিকালো  নাকের ডগা থেকে টপে পড়া জলের ফোঁটা টুকরো হিরে হয়ে ঝরছে। পুকুরে সাঁতার কাটতে শেখাচ্ছেন লীনা দিদিমনি। আপাতত দশটা অনাথ জেলেদের বাচ্চা নিয়ে ওঁর ইংরেজি স্কুল। ডোনেশান জুটে যায় অল্প হলেও। লীনা ক্রিস্টোফার বছর দুয়েক আগে নর্থ ক্যারোলিনা থেকে দেশে ফিরেছেন পাকাপাকিভাবে। নিখুঁত সুন্দরী শিক্ষিতা লীনা দিদিমনি কখনো মাথা ঘুরিয়ে দেবার ইচ্ছে নিয়ে কারোর সঙ্গে মেশেননি বরং উল্টো তিনি নিজেই মানুষকে বিশ্বাস করে মরেছেন। ক্যারোলিনাতে যার হাত ধরে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাকি জীবনটা, তিনিও শেষপর্যন্ত তার এক ছাত্রীর প্রবল প্রেমের হাতছানিতে লীনা দিদিমনিকে টা টা জানিয়ে দিয়েছেন একসময়।

ক্যারোলিনার রাস্তায় একলা নেমে এসে তীব্র হাওয়ার সাথে উড়িয়ে দিয়েছেন গায়ের শীতপোষাক। আকাশের দিকে তাকিয়ে দুহাত তুলে পাগলের মতো হেসে উঠছিলেন, আবার খানিকটা রাস্তা হেঁটে যেতে যেতে শুয়ে পড়েছিলেন রাস্তার ধারে। দূর থেকে লীনার এইসব কান্ডকারখানা দেখতে দেখতে একদিন পিছু নিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার। হিউম্যান রাইটস নিয়ে কাজ করছেন পৃথিবী বিভিন্ন  দেশ ঘুরে। সেই উদ্দেশ্যে ক্রিস্টোফার ছিলেন তখন ক্যারোলিনাতে। তার মধ্যে কোনো নারীকে এভাবে দেখে কৌতূহল তৈরি হল। একসময় দেখলেন জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছেন লীনা।

চোখ মেলে তাকালেন সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে পরিপাটি বিছানায় শুয়ে একদম অচেনা দুজন মানুষের সামনে। একজন ডাক্তার। অপেক্ষায় ছিলেন যেন লীনার চোখ মেলে তাকাবার। আরেকজন হলেন ক্রিস্টোফার, যিনি সংজ্ঞাহীন  অবস্থায় লীনাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নিজের ঘরে এনে ডাক্তার ডেকে শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুলতে চাইছেন। পরিচয় পর্ব চললো। ডাক্তার নিশ্চিন্ত হতে বলে আরও কিছু দরকারী পরামর্শ দিয়ে চলে গেলেন। লীনা ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে ক্রিস্টোফার বললেন, এখানে অন্য কেউ তো আর আপনার চেনা নেই বলছেন। তাহলে যাবেন কোথায়? দেশেই যদি ফিরবেন  তাহলে আমিও আপনার সঙ্গী হতে চাই। ইন্ডিয়াতে আমার কাজ করার ইচ্ছে বহুদিনের। অনুরোধ করছি, এখানে কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিন। আমিও একজন সঙ্গী পাবো।‌ চিন্তা করবেন না, আমি আপনি দুজনেই কাজ করে নিজেদের খাবার যোগাড় করে নেবো যাতে কারোরই কারো উপর নির্ভরশীল বলে মনে না হয়। আমার একজন অ্যাসিস্টেন্ট দরকার ছিলো। দেশে দেশে গিয়ে আমার কাজ।‌ কে রাজি হবে আরেক ভবঘুরে ছাড়া! অন্ততঃ ইন্ডিয়া পর্যন্ত সঙ্গী হবেন আশা করি!

কয়েকদিন ধরে লীনা দেখলেন পুরুষেরই সম্পূর্ণ অদেখা এক রূপ। সঙ্গে সঙ্গে এতগুলো বছর ধরে তৈরি হয়ে ওঠা ধারণাও গজগজ করছে ভিতরে ভিতরে। সুগারকোট গলে ধুয়ে গেলে সব পুরুষই একরকম। এসব ভাবলেও কৃতজ্ঞতা বশতঃ মুখে হাসি ফুটিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কফির কাপ অফার করে ক্রিস্টোফার নিজের কফি নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে বললেন, আমার সঙ্গে দেখা না হলে দেশে‌  ফিরে কী ধরনের জব খুঁজতেন? ওখানে তো চাকরি সহজে পাওয়া যায় না শুনেছি। সেরকম ইনফ্লুয়েন্সিয়াল কেউ আছে আপনার চেনা জানা? ক্রিস্টোফারের কথাগুলো শুনে লীনা একটু ডিফেন্সিভ হলেন। বললেন, আছে মানে বহুদিন যোগাযোগ নেই, তবে ইংলিশ মিডিয়াম কোনো স্কুলে টিচিং জব পেয়ে যাবো। তাছাড়া দেশে ফরেন ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির একটা দাম আছে।

তো, সেখানকার পে রোল কেমন? ক্রিস্টোফার জানতে চাইলে লীনা বিষম খেলেন। ক্যারোলিনাতে ওর এক বন্ধুনী বিয়ে হয়ে এসেছে তিনবছর আগে। দেশে সে একটা প্রাইভেট স্কুলে পড়াতো। তার কাছেই শুনেছেন স্যালারির বহর, তবে টিউশন থেকে তার দ্বিগুণ টাকা রোজগার করতো সেকথাও শুনেছেন। লীনা উত্তর দিলেন, আমি একলা মানুষ, যেটুকু পাবো আমার চলে যাবে। ক্রিস্টোফার বললেন, আর আমার যদি আপনার সাহায্যের দরকার হয়? করবেন না ? লীনা হেসে উঠলেন। বললেন, আমি কিন্তু সুস্থ হয়ে গেছি আর আপনি খুব টেস্টি স্ট্রং কফি বানান।

You have just started - ক্রিস্টোফার স্মিত হেসে বলেছিলেন।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন