কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৩


ঐ মই


সুপর্ণা সোমবার এসে দেখলো, কে বা কারা তার অফিস রুমের জানালার বাইরে একটা মই রেখে গেছে। অফিস বিল্ডিং পরিষ্কার করা হচ্ছে। তাই মই। অথচ কেন জানি না, সুপর্ণার কাছে সকাল সকাল সপ্তাহের শুরুতে ঐ মই অন্য এক ব্যঞ্জনা নিয়ে এলো।

ব্যঞ্জনা পাখি, ব্যঞ্জনী পাখি। 

সুপর্ণার মনে অনেকগুলো মই খুলে গেল। মাথার ভেতর সেসব মই দেখতে পেল  সে। সাপ নেই, অথচ মই আছে। তাহলে মইয়ের মানে কী? সুপর্ণার মনে হল ঐ  মইটাই তার একমাত্র ভরসা। ঐ মই তার সামনে এক প্রশ্ন রাখছে: কী মানে নিরন্তর প্রাত্যহিকতার? কেন প্রতি সোমবার এই অফিসে আসা আর ডেস্কটপের সামনে বসে সারাটা দিন কাটিয়ে দেওয়া? কেন ব্যঞ্জনা পাখি, ব্যঞ্জনী পাখির ডাক শুনতে না পাওয়া? ঐ মই যেন এক এক্সিট প্ল্যান। সুপর্ণার কাছে জীবনের মানে পাল্টে ফেলার এক ইশারা যা পাদানি ধরে নিচে নেমে গেছে। জানলা খুলে মই ধরে নেমে যাবে কি? বহুতল নয়, তিনতলা। দোতলার ল্যান্ডিংয়ে নেমে যেতে পারবে মই থেকে। লোকে কী বলবে? কলিগরা কি পাগল ভাববে সুপর্ণাকে? ভাবলে ভাবুক। ঐ মই সুপর্ণাকে ভাবতে শেখাচ্ছে, স্বপ্ন দেখতে শেখাচ্ছে।  

মই ধরে নিচে নেমে গেলে সুপর্ণা অফিস বিল্ডিংয়ের কোন এক চোরাঘরের খোঁজ পেতে পারে বা নতুন কোন স্পেস-টাইম, ডাইমেনশন খুঁজে পেতে পারে। এসব হতে পারে কিন্তু হবে না কারণ এটা গল্প নয়। এটা কেবল গল্পের সম্ভাবনা। সম্ভাবনা-মুহূর্তেই জীবনের মত শেষ হয়ে যাক এই আখ্যান-ইঙ্গিত।

সুপর্ণা সোমবার এসে দেখলো, কে বা কারা তার অফিস রুমের জানালার বাইরে একটা মই রেখে গেছে। একবার আড়চোখে দেখে নিয়ে নিজের রোজকার সিটে বসে রোজকার মত কম্পিউটার চালাবার সুইচ টিপতে গিয়ে দেখল উইকেন্ডে অন ছিল সিস্টেম। ইউন্ডোজ আপডেট নিচ্ছিল।

জানালার দিকে আরেকবার তাকালো সুপর্ণা। মইয়ের কাজ শেষ। ক্লিনার মই সরিয়ে নিচ্ছে। যেভাবে তেরছা হয়ে ঐ মই জানলার চোখের বাইরে হারিয়ে গেল তার মধ্যে এক জ্যামিতিক যন্ত্রণা ছিল। ব্যঞ্জনা পাখি, ব্যঞ্জনী পাখি উড়ে গেল মই ছেড়ে। সুপর্ণার বুকে হাল্কা মোচড় দিয়ে উঠলো।

ইউন্ডোজ ঠিক তখন তাকে ওয়েলকাম জানাচ্ছে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন