কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

অভিজিৎ মিত্র

 

সমকালীন ছোটগল্প 


টোটোন vs খোকন         

              

- এই, যা তো, মালটাকে তুলে আন্‌। বড্ড বাড় বেড়েছে। আজ ওটাকে সাইজ করতে হবে। কানপট্টির নিচে কয়েকটা লাগালে বাঞ্চোত তবেই সিধে হবে।

টোটোন তার অনুগামীদের দিকে তাকিয়ে হাঁক পাড়ে। গড়গড়িখালের বিধায়ক হবার পর থেকে টোটোনের হাঁকডাক আজকাল বেশ বেড়ে গেছে। তার অনুগামীরা তো আরও এক কাঠি ওপরে। সে ধরে আনতে বললে ওরা তাকে আধমরা করে আনে। গড়গড়িখালের দক্ষিণ দিকে এখন টোটোন আর তার চামচাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। ওরা যা চায়, লোকেরা বিনা প্রতিবাদে  তা দিয়ে দেয়। এই যেমন কয়েকদিন আগেই এক বৃদ্ধের খালি একবিঘে জমি টোটোন মাত্র দুলাখ টাকায় বন্দুক রেখে কিনে নিল। এরকম আরো অনেক বিঘে।

অবশ্য আজকের কেসটা একটু অন্য। এখানকার একমাত্র কেবল্‌ অপারেটর খোকন বিধায়ক টোটোনের ডাক সত্বেও আসেনি। অথচ টোটোনের বাড়িতে খোকনের কেবল্‌ লাইন চলে। এবং টোটোন তাকে ডাকছিল নিজের বাড়িতে আরেকটা লাইন ফ্রি-তে করিয়ে নেবে বলে। যদিও এখানে খোকনের মোনোপলি, গোটা গড়গড়িখালের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম, সবদিকেই খোকনের কেবল্‌  টিভির লাইন কারণ ও এখানকার এম-এস-ও। কিন্তু টোটোন ডাকবে আর  খোকন আসবে না, তা কি হয়? অতএব খোকনকে মারতে মারতে এনে টোটোনের কাছে ফেলা হল।

- কি রে শালা, তোর তো দেখছি ঘাড়ে রাবনের মত মাথা ফুটে উঠেছে। ফোনে ডাকলাম। কাল মেয়ে জামাই আসবে। ওদের জন্য আরেকটা লাইন আজ করে দিতে বললাম। কিন্তু তোর পাত্তা নেই। কি ভাবিস রে? মাথাগুলো কেটে দেব?

খোকন মনে মনে ভাবে একে কী বলবে। সেই স্কুলজীবন থেকে, বহু বছর তুই- তোকারি করেই ডাকত। কিন্তু এখন বিধায়ক, সবার সামনে তুই বলাটা ঠিক হবে না।

- একটু অপেক্ষা করুন। আপনাকে তো বলেছিলাম আমার হাতে এখন নতুন কানেকশনের মাল নেই। কলকাতা থেকে আসুক। এলেই করে দেব। দুদিনের ভেতর।

- তোর এইসব ছালের কথা রাখ। আজকের ভেতর করে দে। নইলে এলাকায় আর ব্যবসা করতে পারবি না।

এবার টোটোনের এক চামচা বলে ওঠে,

- দাদা, আমিও তো আগে কেবল্‌ টিভির ব্যবসা করতাম। আমি জানি হাতে মাল না থাকলে নতুন লাইন দেওয়া যায় না। আপনি বরং দুদিন ওয়েট করুন না। খোকনদা যেটা বলেছে। না হলে ওকে তুলে আনব।

বাইকে চেপে আসতে আসতে খোকন মাঠের ধারে সিগারেট ধরাতে দাঁড়ায়। ভাবে, একসঙ্গে টোটোন আর সে স্কুলে পড়ত। ক্লাস ফাইভে টোটোন পড়া ছেড়ে চটের বস্তার ব্যবসা শুরু করল। যখন খোকনের দলের সরকার ছিল, তখন এই টোটোন এসে রোজ ওর বাড়িতে চুপচাপ বসে থাকত। ঘন্টার পর ঘন্টা। খোকন ওর ব্যবসার লাইসেন্স বের করে দিয়েছিল। আর দশ বছর আগে, সরকার চেঞ্জ হয়ে টোটোনরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ওর বাড় বাড়ন্ত। সেই থেকে খোকন রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় ঢুকে গেছে। আর আজ, টোটোন বিধায়ক হয়ে মহান মস্তান!  

রাত দশটা। খোকনের ফোনে টোটোনের ফোন। ওপাড় থেকে অসহায় গলা।

- একবার আয় না, ভাই। প্রদীপের আগুন থেকে কেবল্‌ আর ইলেট্রিকের তার, সবকিছুতে আগুন ধরে গেছে। আশেপাশে কেউ নেই। ঘরে আমি আর তোর বৌদি একা।

- মেন সুইচটা এক্ষুনি বন্ধ করে দে। ছাদের ওপর খোলা হাওয়ায় চলে যা। বদ্ধ ঘরে থাকিস না। আমি... 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন