সমকালীন ছোটগল্প |
ফেরা
আকাট
মুখ্যুও কখনও বলে বসে জ্ঞানগর্ভ কথা!
কমলালেবু
গাছে একই সাথে ফলে মুসুম্বি।
হারানের
বৌটাকে যখন বাঁজা মেয়েমানুষ বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে ভাবছে, তার গর্ভেও ফোটে
ফুল। এ জীবন বড় অত্যাশ্চর্যের। নইলে, কেন এই সারা সপ্তমী জুড়ে এক নাগাড়ে বৃষ্টি পড়বে!
খানিক বিরক্ত হয়েই অষ্টমীর ভোর থাকতে বেরিয়ে পড়ি। রাস্তায় তখনও জল থই থই। তা হোক। চল
মন নিজ নিকেতনে। তা কোথায় তো জানি না! আর তাই বেরিয়ে পড়া। ভ্রমণ শিক্ষিত করে। প্রতিটি
ভ্রমণই। জীবন কি ভ্রমণ নয়? উদ্দেশ্যহীন এ বেরুনো দেখে কেউ ভাবতেই পারে, মানুষটা আদ্যন্ত
উদ্দেশ্যহীনই জীবনের ক্ষেত্রেও। হয়ত তাই! কাবাব, পোলাও না'ই বা হল! তবু তো জীবন শাক
ভাত নুন চিনি অল্প জিরে হলুদ সব মিলিয়েই এতটা...
ভোর,
যেভাবে পাপড়ি মেলে ধরে ফুল, আকাশ ফুটে উঠছে, দু’একটা পাখ পাখালি ডানা ঝাপটাচ্ছে। আর ওই কোণ জুড়ে অল্প সিঁদুর, একটু
পর পুরোটাই লাজরাঙা হয়ে উঠবে। একটা গানও কি এভাবেই বিস্তার পায়? প্যান্ট হাঁটু অবধি
গুটিয়ে, হাতে জুতোজোড়া নিয়ে জল ছপ ছপ করতে এগিয়ে চলেছি। বিশুদার চায়ের দোকানের ঝাঁপ
উঠছে। উনুনে আঁচ পড়বে। প্রতিটি ভোরের একটা নিজস্ব গন্ধ আছে। অনেকটা মা'র আঁচলের স্মৃতির
মতই! মেইন রোডে উঠে, একটা রিক্সা।
- যাবে
না'কি?
- কতদূর?
- যতদূর
নিয়ে যাবে...
দূরের
কোনও প্যান্ডেলে সানাই বাজছে নীচু সুরে। ভৈরবী। স্টেশনে সব মিলিয়ে জনা দশ যাত্রী। সোয়েটার
বেরিয়ে পড়েছে এরমধ্যেই। টিকিট কাটার বালাই নেই। ধরলে ধরবে! ট্রেন এলো। ফাঁকা ধু ধু
করছে। কামরায় উঠে জানলার ধারে বসে পড়লাম। ভোর ছড়িয়ে যাচ্ছে সবুজ ছুঁয়ে চোখের পাতায়!
সামনের সিটে প্রৌঢ়া ছোট ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বিড়বিড় করছেন। চোখ নিমীলিত। ভোর তো
প্রার্থনারই সময়। পাপীরা এ সময়ে ঘুমোয়। ধ্যানীরা জেগে ওঠেন,
ওঁ ভূর্ভুবঃ
স্বঃ
তৎ সবিতুর্বরেণ্যং
ভর্গো
দেবস্য ধীমহি
ধিয়ো
য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
'যা
হতে বাহিরে ছড়ায়ে পড়িছে পৃথিবী আকাশ তারা,
যা হতে
আমার অন্তরে আসে বুদ্ধি চেতনা ধারা
— তারি
পূজনীয় অসীম শক্তি ধ্যান করি আমি লইয়া ভক্তি'
পাশের
ছেলেটি ঘুমিয়ে বার বার ঢুলে পড়ছে আমার গায়ে। পড়ুক। প্রৌঢ়ার প্রেয়ার শেষ। আমার দিকেই
তাকিয়ে। মা বেঁচে থাকলে কি এনার বয়সীই? না হয়ত আর একটু বেশি হত। কাঁচাপাকা মেশানো চুল।
চোখে চশমা! বড় করে সিঁদুরের টিপ কপালের মাঝখানে। লালপাড় শাড়ি পরা সেকেলে স্টাইলে। মুখে
হালকা হাসি...
- কোথায়
চললে বাবা,চকাজে?
- জানিনা
তো!
- বাসায়
ঝগড়া করে বেরিয়েছো?
-
কেউ নেই তো বাড়িতে।
-
যাচ্ছো যেখানে সেখানে তো আছে! তবেই না যাচ্ছো।
বাইরে
কাশফুলের মেলা বসেছে। ট্রেনের গতিতে দুলছে, যেন একদল কিশোরী নাচছে কোমরে হাত দিয়ে!
বাইরের দিকে তাকিয়েই উত্তর করলাম,
- তাও
জানিনা!
ট্রেনের
এই এক মজা, কত সহস্র গৃহস্থর বাড়ির পাশ দিয়ে চলে যায়। কেউ স্নান করছে সবুজ পুকুরে।
কেউ দাঁত মাজছে। লাইনের পাশ দিয়েই সাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছেন কোনো এক সংসারী মানুষ!
মানব সংসারের মধ্য দিয়েই এ এক জীবন
রেখা!
এতক্ষণে
হকার উঠেছে। চায়গ্রম...
সাথে
বাচ্চা কোলে স্বামী স্ত্রী উঠলো। এক যুবতী। মুখশ্রীটি বেশ। ভরে যাচ্ছে আসনগুলো। গরম
শিঙাড়া, কচুরি, আলুর চপ। জিজ্ঞেস করলাম প্রৌঢ়াকে, চা খাবেন?
-
আমার উপোস। আজ তো ভর-এ বসবো। তুমি খাও।
চা
নিয়ে টাকা দিতে যেতেই আপত্তি জানালেন প্রৌঢ়া! আমি বয়সে বড় তো। আমি দেব।
-
সে আপনি খেলে দিতেন। আমি খাবো। আপনি দেবেন? তাই আবার হয়!
- হওয়ালেই
হয়! আপন ভাব আপনি আসে বুঝলে ছেলে!
হাসছেন।
তা বাপু তোমার বউবাচ্চা নিয়ে বেরোওনি কেন?
-
নেই তাই।
- বিয়ে
করনি?
-
করেছিলাম। আপনি ভর হন?
-
হ্যাঁ সন্তোষী মা'র। কত মানুষের কত দুঃখ, যদি কিছু মেটাতে পারি। এ জীবন কি শুধুই আমার?
ভোর
এখন সকালে পৌঁছেছে। একটা মিষ্টি রোদ যুবতীর গালে পড়েছে। ভ্রুক্ষেপহীন অথচ!
সামনে
খোলা মণীন্দ্র গুপ্তর ‘অক্ষয় মালবেরী’। গভীর কালো আর ধান সবুজ পাড়ের তাঁতের শাড়ি। প্রসাধন আছে। চোখে কাজল। ঠোঁটে স্যাবি
পিচ কালারের লিপস্টিক। চোখ বইয়ের পাতায়। জানলার ধারের মুখোমুখি সাইড সিটে বসে। চুল
উড়ছে হাওয়ায়।
- বইটা
একটু দেখতে পারি?
উত্তরহীন।
-
আপনাকে বলছি। বইটা একটু দেবেন?
উত্তরহীন।
কিন্তু এগিয়ে দিলো।
- বিরক্ত
হননি তো?
- যদি
হই কী করবেন?
-
না, কি আর করব! নেবোনা। আমার খুব প্রিয় বই! বহুবার পড়া। আজ অষ্টমীর সকালটা আর একটু
ভালো হত। তাই...
-
বুঝেছি। পড়ুন। বাট আমিও পড়ব। আপনার সময় ১৫ মিনিট।
-
আচ্ছা তাই হোক। আমি মণিদার খুব ভক্ত ছিলাম।
উত্তরহীন।
বইয়ে
ডুব দিলাম।
ট্রেন
এগিয়ে চলেছে। কোথায় কতদূর এসেছি জানিনা। বাইরে স্টেশন আসে চলে যায়।
-
পনেরো মিনিট শেষ। দিন এবার!
এগিয়ে
দিলাম। বড্ড কাঠ কাঠ কথা। মুখের সাথে কথা মানায় না।
- তা
ছেলে বৌ এর সাথে কি মিললো না?
-
না, টিঁকলো না। সব কি আর টেঁকে?
-
মিলটাই আসল বুঝলে। শরীরে মিলতো?
-
হয়ত, হয়ত না।
প্রৌঢ়া
আবার শুরু করেছে। এবার একটু বিরক্ত লাগছে।
এত
লোকের মাঝে এসব ব্যক্তিগত প্রশ্ন অস্বস্তিকর! সকাল বড় হচ্ছে... বাইরে রোদের তাত! যুবতী
উঠে দাঁড়ালো। গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ট্রেন থামলো। নামলো। আরও কিছু লোক উঠলো। নামলো।
কতদূর এসেছি খেয়াল নেই। এখন ঘড়িতে সাড়ে নটা। তা প্রায় ঘন্টা সাড়ে তিন চলছি। ট্রেন দুলে
উঠে চলতে শুরু করার আগেই আমিও নেমে পড়লাম। দেখি জানলা দিয়ে প্রৌঢ়া ডাকছেন। প্ল্যাটফর্মে
দাঁড়িয়েই জানলায় এলাম।
- কিছু
বলবেন?
-
মিলবে গো বাছা। হয়ত আজই।
- কী
মিলবে?
-
যার মেলার।
-
আচ্ছা ভালো থাকবেন। আসি।
স্টেশনের
নাম মিলনপল্লী। হল্ট স্টেশন। এখানে কেন নামলাম জানিনা। নেমে পড়লাম এই আর কি! প্ল্যাটফর্ম বেয়ে নেমে এসে লাইন টপকালাম। ওপারে
গেলাম। যুবতীর হয়ত এখানে বাড়ি। চলে গেছে। কোথাও তাকে দেখলাম না। রেলের লাইন টপকে এপারে
আসতেই দেখলাম একটা গ্রামের পুজো হচ্ছে। গালে না কামানো দাড়ি। পাঞ্জাবি। আর ময়লা জিন্স।
কাচা হয়নি অনেক দিন। একটা আলপথ ধরে এগিয়ে চললাম কিছুটা! পথে এক বুড়ো মানুষের সাথে দেখা।
ক্ষেতে সার ছড়াচ্ছেন। - - জেঠু এ জায়গার নাম মিলনপল্লী কেন?
আমার
দিকে খানিক তাকিয়ে রইলেন। ভালো করে জরিপ করে বললেন, সামনে এগোও। বুঝতে পারবে।
কথা
শুনে এগোতে লাগলাম। কিছুটা এগোতে দেখি একটা রূপো চিকচিকে নদী। না সরু না চওড়া! নদীর
ধারে কাশফুলের ঝাড়! কাশের ঝাড় টপকে এগোতে দেখি রূপোলী বালি নদীর ধারে। নদীর ধার ধরে
কিছুটা এগিয়েছি ওমা! আরে সেই যুবতী না? এগিয়ে চলেছে কিছুটা আগে। সে অবশ্য পায়ের জুতো
খুলে নিয়েছে। জল ছুঁয়ে হাঁটছে। শাড়ি সামান্য তুলে নিয়েছে ডান হাত দিয়ে। কালো সায়ার
নীচে সাদা পা। এখন মোবাইল নিয়ে ছবি তুলছে নদীর। কাশবনের। নিজের পকেট থেকে মোবাইল বার
করতে গিয়ে দেখি আনতেই ভুলে গেছি। ভালোই হল। যোগাযোগহীন। এ কদিন অবশ্য যন্ত্রানুসঙ্গ
না থাকাই ভালো। নিজের মত বাঁচা। আর যোগেও তো কেউ নেই। যোগাযোগ আর করবে কে!
- আপনি
কি আমায় ফলো করছেন?
-
না'তো। আপনি কে যে ফলো করবো?
- তাহলে
আমার পিছু পিছু কেন?
- আপনার
কি মনে হয় আমি মেয়েধরা?
সামনে
এগিয়ে গেলাম। খুব কাছ থেকে দেখছি যুবতীকে। নাকের ডগায় ঘাম বিন্দু। কপালেও। ইস মুছিয়ে
দিলে হত!
-
আমার কি মনে হয় সে কথা বাদ থাক। আপনি তো আমার পেছনে পেছনেই এসেছেন।
- আমি
কি বলতে পারিনা আপনি আমার সামনে সামনে এসেছেন!
-
মজা করবেন না। মতলব কী বলুন৷
- কিছু
না!
এগিয়ে
গেলাম খানিকটা। নদীর ধার ধরে কিছুটা এগোলে একটা ছোট কেল্লা দেখা যায়! ওদিকটায় হেঁটে
গেলাম। এই প্রত্যন্তে কেল্লা বানালো কে? ব্যাপারটা দেখে আসি না হয়। দুপুর হয়েছে। খিদেয়
পেট চোঁ চাঁ। তা হোক আগে দেখে তো নিই। খানিক এগোলাম। কেল্লার কাছে অনেক শালিক একসাথে
বসে রয়েছে দিব্য। আশপাশে কেউ নেই। একটা মার্বেল গাঁথা রয়েছে। তাতে লেখা, হিয়ার লিভড
রাজা উদয়াদিত্য। বাই দ রিভার সাইড অব বিরহী হি ইরেকটেড দিস মনুমেন্ট ইন মেমরি অব হিজ
এল্ডার সান বিক্রমাদিত্য!
কেস
কী? কেন বিক্রমের জন্য এই স্মৃতিসৌধ? এ নদীর নামই বা বিরহী কেন? গেট খোলা। তবে লোকজন
আসে এখানে। অব্যবহৃত হলে একটা চাপা গন্ধ বেরুতো। সিঁড়ি ভেঙে উঠতে লাগলাম। খান কুড়ি
করে পাথরের সিঁড়ি। তারপর বেশ প্রশস্ত চাতাল। ওপরে উঠতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো বটেই। তবে
একটা এডভেঞ্চার যেন! যতই উঠছি তত দেখি আলো
কমে আসছে। লাস্ট ফ্লোরটাতে পৌঁছতেই একেবারে অন্ধকার। ঘাড়ের ওপর একপাল বাদুড় বা চামচিকে
ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর পেছন থেকে নারী কন্ঠের আর্তনাদ, আর বুকের ওপর কে যেন পড়ল। চোখটা ধাতস্থ
হতেই দেখি সেই যুবতী। একেবারে জাপটে ধরেছে আমায়। ভয়ে কাঁপছে।
- কী
হল? এবার তো বলতে হয় আপনি আমায় ফলো করছেন!
-
সরি। ভয় পেয়ে গেছিলাম।
-
ইটস অলরাইট। দাঁড়ান দেখি দরজাটা খোলা যায় কিনা দেখি।
গায়ের
মধ্যেই এসে পড়েছিল। তাই যুবতীর শরীরের গন্ধ ছুঁয়েছে আমার শরীর। সাথে মিষ্টি পারফিউমের
গন্ধও।
জোরে
ঠেলতেই দরজাটা খুলে গেল।
এটা
কেল্লার টপ। বাইরেটা এসে দাঁড়ালাম। নীচ দিয়ে বিরহী বয়ে চলেছে। অপরূপ দৃশ্যের কাছে আসলেই
আমার আবার আত্মহত্যার ইচ্ছে হয়। উঠতে যাচ্ছিলাম ঘেরা পাঁচিলটার ওপর। ওমা! দেখি সেই
যুবতী চিৎকার করছে, আরে করছেন কী? মেয়ে দেখলেই বুঝি বাহাদুরি দেখাতে হয়?
- আপনি
এভাবে কথা বলেন কেন?
-
ইচ্ছে। বেশ 'বাহাদুরি' উইথড্র করলাম!
-
আর মেয়ে দেখা মানে? আপনি মানুষ। আমিও। মেয়ে বা ছেলে এ কেমন বিভাজন?
-
বেশ সেটাও উইথড্র করলাম।
- কি
বলে ডাকবো? নাম তো জানিনা!
-
ঐশী। তার মানে আপনি ঈশ্বর সংশ্লিষ্ট। যাক এ যাত্রায় ঈশ্বর আমাদের সাথে রইল।
- আমাদের
মানে?
-
আপনার আমার যাত্রা পথ তো আজ মিলে যাচ্ছে। ছেলে বা মেয়ে নয় সহযাত্রী।
-
ছোট বকুলপুরের যাত্রী মনে পড়ে গেল। সহযাত্রী শব্দটি পছন্দ হল।
-
মাণিক আমার প্রিয়। খুব প্রিয়। ‘অতসী মামী’ নিয়ে তেমন কেউ বলেনা। আমার সেটিও প্রিয়। আসুন বিরহী কে দেখি ওপর থেকে। কি সুন্দর
তাই না জায়গাটা?
- নদীর
নাম বিরহী কী করে হল? জানেন কিছু?
-
না, তবে একটা কিছু কারণ আছে। দেখছি, জেনে ফেলবো নিশ্চিত। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
- আমায়
নিশ্চিন্ত করার আপনি কে?
-
আবার ওভাবে কথা বলছেন? ইনফোটা জেনে যাবো, সেটুকুই তো বললাম। উফফ! আপনি এত ক্যাঁটক্যাঁট
করে কথা বলেন কেন বলুন তো?
-
বলব না। এনিওয়েজ সরি।
-
ইটস অলরাইট। কাশফুল, রূপো চিকচিকে বালুচর, পাশ দিয়ে বিরহী বইছে। এ জায়গায় না আসলে জানতামই
না! কত বিস্ময় লুকিয়ে আছে এখনও ভাবলে অবাক লাগে।
ঐশী
উত্তরহীন। ঝুঁকে নীচের দিকে তাকিয়ে। বিড় বিড় করে বলে চলেছে -
স্বর্গ
যদি কোথাও থেকে থাকে, তা আছে এখানেই।
-
তা বটে। আসলে ঐশী জানেন, দেখার চোখ থাকলে কত কিছুর মধ্যেই সুন্দর ফুটে ওঠে। যেমন এই
মুহূর্তে আপনি আমার কাছে ঈশ্বর নির্মিত এক দেবকন্যা! আমি মুগ্ধ হয়ে আপনাকে দেখছি।
-
আমি? কেন? শাড়ির খসে পড়া আঁচল তুলতে তুলতে ঐশী বলে, আপনি মেয়ে পটাতে ওস্তাদ।
- প্রশংসা
করা মানে পটানো?
-
মেয়েরা প্রশংসায় ব্লাশ করবে। প্রেমে পড়বে। এতো সব পুরুষেরই ধারণা।
-
ঐশী এত ভেবে তো বলিনি। এ দৃশ্যে শুধু আপনাকেই মানায়। আপনি দারুণ মানিয়ে গেছেন। চলুন
নীচে নামি এবার। নদীর পাশে গিয়ে বসি একটু। যাবেন?
-
না। আপনি যা করবেন আমাকেও তাই করতে হবে? আশ্চর্য তো!
-
ঠিক আছে থাকুন তাহলে। আমি নামছি।
আমি
নামতে থাকি। পেছন থেকে শুনতে পাই ঐশী বলছে, মানুষ তো ওঠার চেষ্টাই করে। আপনি নামার
জন্য এত ব্যাকুল কেন? অদ্ভুত মানুষ তো!
ঐশীও
পেছন পেছন নামছে।
-
কি হল এই তো বললেন নামবেন না।
-
আপনি আচ্ছা লোক মশায়। নামতাম না। ওই বাদুড় চামচিকেরা যদি আবার ঘাড়ে পড়ে। গা ঘিন ঘিন
করে খুব। তাই নেমে এলাম।
কেল্লার
সামনের চৌহদ্দিতে এক বুড়ি বসে। ওঠার সময় খেয়াল করিনি। সামনে কিছু গাঁদার মালা। নারকেল।
পুজোর ডালা সাজিয়ে বসে।
ডাকছেন,
হ্যাঁগা তোমরা পুজো দিবে না? দম্পতির উপোকার হয়গা। সন্তানাদি নিয়ে ভালো থাকতে পুজো
দাও।
ঐশী
কি একটা বলতে যাচ্ছিলো। আমি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলি। এগিয়ে গিয়ে বসি তার কাছে।
৫০ টাকা একটা ডালার দাম। আমি একশো দিই। বুড়ি বলে আমার কাচে তো ভাঙতি নেই।
-
না না পুরোটাই রাখো।
-
এ নাও সংকল্প কর আগে। দুজনে দুজনের হাতে হাত রাখো।
মেরেছে!
এ মেয়ে যা! এ কি শুনবে?
-
আমি বুড়িকে বলি। থাক থাক। সে সব হবেখন। তুমি আমাদের এই কেল্লার গপ্পোটা বল দেখি।
বুড়ি
বলে-
বলছি,
আগে সংকল্প কর।
গল্পের
লোভে ঐশী হাত বাড়ায় আমার হাতে হাত রাখে।
এবার
বুড়ি যা করলো। তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না কেউই।
-
নাও বাবা বৌ এর কপালে সিঁদুরটা পড়াও।
-
আরে না না আমি সিঁদুর টিদুর পরিনা।
-
না পর, আজ তো পর। স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনায় পরতে হয়!
-
তুমিও বাপু কেমন ম্যাদা ম্যারা বেটাচেলে। পড়াও।
-
ঐশীর মুখ টকটকে লাল রাগে।
- হাসছি
আমি!
ঈশ্বর
যে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে জীবন কে নিয়ে যায়!
ঘন্টা
খানেক হয়নি এখনও পরিচয়ের, এরমধ্যে সিঁদুর পরাতে অনুরোধ।
ঐশী
অবাক করেই বলে, পড়ছি। কিন্তু গল্পটা বলতে হবে।
- এই
যে মশাই সিঁদুর পরান আর কি! পড়েছি মোঘলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে! উপায় কী!
আমি
ছোটো করে একটা সিঁদুরের টিপ এঁকে দিই ঐশীর কপালে।
বুড়ি
না খুশ।
-
তোমাদের শহরের লোকেদের এই এক মুশকিল। ভালো করে পরাও।
-
পরান পরান। মজা পান আর কী!
কেমন
শিউরে উঠি আমি। মনে পড়ে যাচ্ছে মিতুলের কথা। সিঁদুর পরাচ্ছিলাম মিতুলকে। মিতুল কি সুন্দর
মিষ্টি মুখ করে ভক্তিভরে পরছিলো। তখন আমার জন্য মিতুল পাগল। শুধু তখন না, প্রায় তার
আগের চার বছর ধরেই৷ আমার মত কবি সে আগে দেখেনি৷ আমার কবিতার মত কবিতা বাংলা ভাষায় আর
লেখা হয়নি। হবেওনা। মাইকেল রবীন্দ্রনাথের পর নাকি আমিই। জীবনানন্দও নয়। হাসতাম। সে
সব পাগলামিতে। তারপর যেই পলাশের সাথে আলাপ হল মিতুলের। ওমনি পলাশ হয়ে গেল শ্রেষ্ঠ কবি!
পলাশ অবশ্য তখন সুনীলদার স্নেহধন্য! ‘দেশে’ নিয়মিত কবিতা বের হয়। আর আমি প্রফুল্ল সরকার স্ট্রীট ছেড়ে
এসেছি, শুধু কবিতায় সম্পূর্ণ অবগাহনের জন্য! মিতুল যেদিন চলে যায় বলেও যায়নি। একটা
টেক্সট করেছিল কেবল-
'আমার
কাছে জীবন মুহূর্ত যাপন। পলাশকে আমার ভালো লাগছে। কি করব? আর তোমার যে আমায় ভালো লাগছে না তা আমি টের পাচ্ছিলাম
শুভ। তাই আলবিদা। খিটখিটানি ঝগড়া তর্কে কি লাভ! যে যার মত থাকি। জীবন তো একটাই!'
আমি
কিছু উত্তর করিনি। তখন আমার টাকা নেই পয়সা নেই! ঝোঁকের মাথায় চাকরি ছেড়েছি। খেতে তো
হয়! উপন্যাস লিখতে বলে শ্যামলদা। চেষ্টাও করি। পারিনা। সবাই তো আর জয়দা নয়! খিটখিটানি
তো আর এমনি আসেনা। সুখের সময় মিতুল ছিলো। দুঃখ কেন সে ভাগ করবে?
-
আরে পরান, কি হল? ঐশীর ডাকে সম্বিত ফেরে।
পরিয়ে
দিই মোটা করে সিঁদুর ঐশীর সিঁথিতে। ঐশীর মুখের দিকে আর তাকাইনি। পরে তো গালিগালাজ করবেই।
শুনতে হবে আর কী!
নাও
এবার বল তোমার গল্প।
উদয়াদিত্য
ছিল মল্ল রাজাদের বংশধর। যেমন দয়ালু তেমন বীর৷
ঐশী
ফুট কাটে, রাজারা সবাই তাইই হন। তা বিয়ে কটা ঠানদি?
-
না তিনি রাণীমাকে ছাড়া আর কারো দিকে ফিরে তাকাতেনও না। দুটো ফুটফুটে ছেলে জন্মালো।
যমজ বিক্রম অল্প আগে। আর আদিত্যনারায়ণ অল্প পর। দুই ছেলেই বাপের মত দেখতে।
আদিত্য
বদের ধাড়ি হল। ছোট থেকেই মাকে খুব কষ্ট দিতো। তবে কি রাজা রাজরার ছেলে। বড় তো হবেই।
বিক্রম আবার গানও শিখতো। ওই যে'গো বিষ্টুপুরী গান! যেমন গান গায় তেমন ঘোড়ায় চড়ে। তেমনই
আবার কবিতাও লেখে।
- আচ্ছা!
রাজা আবার কবিও! ঐশীর ফুট কাটায় আমি বললাম,
-
জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, ঔরঙ্গজেব, সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এরা সকলেই শিল্প
সংগীতের সমঝদার ছিলো। আকবর তো বটেই। এতে অবাক হবার বা টিটকিরি মারার কিছু নেই।
তখন
এ নদীর নাম ছিলো কানানদী। জলই থাকতো না। বিক্রমই
বালি তুলে নদীকে চওড়া করিয়ে মিশিয়ে দিলো দ্বারকেশ্বরের সাথে। সাঁতার জানতো খুব ভালো।
ভরা কোটালের মুখ থেকে যে কত গরীবগুর্বোকে বাঁচিয়েছে তা বলবার নয়।
-
মেইন স্টোরি তে আসো ঠানদি।
-
বিক্রম আর আদিত্য দুইই বড় হয়। বিক্রম যেমন সবার সাথে মিশতো আদিত্য আবার তা নয়। আদিত্যর
হালচাল আলাদা। বিক্রমের ওই মেশাই কাল হল! প্রেমে পড়ল আদিবাসী মেয়ে দুলিয়ার। সে প্রেম
মানে সাংঘাতিক প্রেম গো। দিন নেই রাত নেই দুজনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। নদীতে সাঁতার কাটে।
কেউ কাউকে ছাড়া একটুও থাকেনা। খবর উদয়াদিত্যর কাছে পৌঁছে গেল। তখন দুলিয়ার পেটে বিক্রমের
সন্তান। জানা মাত্রই বাপের কাছে গেল বিক্রম। সে বিয়ে করতে চায় দুলিয়াকে। তাই কী আর
হয়? উদয়াদিত্য মানবে কেন? যদিও রাণীমা বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করালো। আদিত্যনারায়ণ কল কাঠি
নাড়লো। - রাজবংশের কেউ আদিবাসী মেয়ে বিয়ে করলে রাজবংশের সম্মান বলে কি থাকে?
উদয়াদিত্য
না করে দিলো। বিক্রমকে নিষেধ করলো দুলিয়ার সাথে মিশতে। বিক্রম সে শোনার লোক কই? শোনেনি।
উদয়াদিত্য জানালো মেয়েটিকে গুলি করে মারবে। আটকে রেখে দিয়েছিলো বিক্রমকে।
ভালোবাসাকে
আটকানো কার সাধ্যি! এক ভরা কোটালের রাতে বিক্রম পালালো। কানা নদীতে ঝাঁপ দিলো দুলিয়া,
বিক্রম দুজনেই। বিক্রম যা সাঁতার জানতো তাতে
সে ডুবে যাবার লোক নয়। কিন্তু ডুবলো দুজনেই৷ মরে বোঝালো, ওরা মরার পরেও এক। নে কে আলাদা
করবি কর! দুটো শরীর যখন পাওয়া যায় তখনও দুজনে দুজনকে জড়িয়ে রয়েছে৷ এই সেই জায়গা। এখান
থেকেই ঝাঁপ দিয়েছিল দুজনে।
-
ও এরপর নদীর নাম হল বিরহী! বেশ তো গল্প।
বুড়ি
বললো - গল্প না সত্যি। ভরা কোটালের দিন তাই এখানে মেলা বসে। কত দূর দূর থেকে লোক আসে।
তোমরা জানোনা?
আমি
নদীর দিকে চেয়েছিলাম। কত গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে। এই
আজ যা ঘটে চলেছে সেও তো গল্পেরই মত।
আমি
নদীর দিকে হাঁটছি, ঐশী তখনও ঠানদির কাছে বসে কিসব নোট নিচ্ছে। একেবারে নদীর ধারে এসে
বসলাম জলে পা ডুবিয়ে। ঐশীও হাজির।
-
শুভদা আমার খুব সিগারেট তেষ্টা পেয়েছে। দেবেন একটা? নিতে ভুলে গেছি।
- সিগারেট
বাড়িয়ে দিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আমায় চেনেন?
- বাংলাকবিতা
যারা পড়ে বা লেখে, তারা কে আপনাকে চেনে না? এমন সব কথা বলেন!
- ওহ
আপনি আমার কবিতা পড়েন?
-
হুম! কেন পড়ব না। আমি তো আপনার কবিতার ভক্ত। চেষ্টা করি আমিও। অতটা পারিনা।
-
কবিতা কি আর চেষ্টা করে হয়? সে তো ভেতরের জিনিস।
-
হয়। আমি পারবো। মিতুলের সাথে একেবারেই আর কথা হয় না?
-
আপনি দেখি ঠিকুজ্জি কোষ্ঠী সব জানেন।
-
মিতুল তো আমার বন্ধু ছিলো।
-
তাই? তাহলে এতক্ষণ নাটক করলেন। বাহ!
-
মিতুল ভালোই আছে পলাশদার সাথে! আপনি কেন যে এমন দুঃখী দুঃখী ভাব করে ঘুরে বেড়ান, কে
জানে! আপনার তো নারীর অভাব নেই! একটা জুটিয়ে নিলেই পারেন।
- আবার
ওভাবে বলছেন?
-
সরি।
-
এ কি জোটানোর জিনিস! আর, আমার চাল নেই চুলো নেই। কেউ আমার সাথে থাকবেই বা কেন?
-
তাই? তা সিঁথিতে সিঁদুর পরাতে তো দেখলাম সিদ্ধহস্ত। কই হাত কাঁপলো না'তো।
-
জানতাম এটা আপনি বলবেন। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। মার্জনা করুন। সামান্য অভিনয়। গল্পটাতো
কাজে লাগবে। শুনলাম যে। যা হোক হাত জোড় করছি। সামান্য অভিনয়ই তো। ভুলে যান।
-
সে তো শুভদা এই মনুষ্য জীবনের সমস্তটাই অভিনয়। কিন্তু অভিনয়টাই কখন মানুষ বাস্তব ভেবে
বসে।
- মানে?
- মানে
এই যে যা আপনি অভিনয় ভাবছেন, তা তো কেউ বাস্তব ভেবে বসতেও পারে৷
-
ধুর ঐশী, তা কেউ কেনই বা ভাববে? আপনার স্বামী সন্তান বা কিছুই আমি তো জানিনা! মানে আপনার পরিবার বলতে চাইছি। সিঁদুরটা
মুছে ফেলুন। যদিও সিঁদুর পরে বেশ ভালোই লাগছে আপনাকে। আপনার গোটা সাজে এই সামান্য অসামঞ্জস্যটুকুই
ছিলো!
-
আমার স্বামী নেই। ছিলো। পটেনি। মিউচুয়ালি সেপারেটেড। গুড়িয়া আছে। আমার একমাত্র কন্যা।
ক্লাস ওয়ান। নব নালন্দা।
- বাহ!
তাকে আনেননি কেন?
-
বলেছিলাম। আসেনি। আমার বোন তৃষা, তার ছেলে জোজো। তাদের সাথে প্যাণ্ডেল হপিং করবে।
-
ঐশী আপনাকে দেখে কিন্তু বোঝা যায় না, বিবাহিত। সন্তানের মা।
-
আমি বোঝাতে চাইনা। তাই যায় না। আর সিঁদুর যদি না মুছি? থাকুক।
- কেন?
-আটের
অশ্বারোহী শুভ দাশগুপ্ত সিঁদুর পরিয়েছে। হয়ত অভিনয়ই। তবু থাক।
- ঐশী
আপনি কি পাগল?
-
হ্যাঁ মা’ও সে কথা বলতো। বোনও বলে। কিছু পাগলামি আছে, তাই তো বেঁচে আছি মনে হয়। নইলে
জীবন তো খুব ভ্যাতভ্যাতে।
-
সে'তো সবার জীবনই। কন্যা সন্তানের শখ ছিলো জানেন। তাকে নিজের মত করে বড় করবো। ঐশী মিতুলের
সন্তানাদি কিছু হয়েছে?
-
হ্যাঁ ছেলে তো। আপনি জানেন না?
-
না।
- মিতুলকে
মিস করেন?
-
না। আমি চিরকাল এমন কাউকে চেয়েছি যে আমার আলো নয়, আঁধারেরও সঙ্গী হবে। তেমন মানুষ কই?
পাইনি।
-
দেখার চোখ থাকলেই দেখতে পাওয়া যায় শুভদা। আপনি এত বড় কবি আর এটা জানেন না? মানুষ তো তার ইচ্ছে-অণুর সমষ্টি।
-
ভালো বললেন তো। ইচ্ছে-অণুর অমনিবাস বলুন।
- আচ্ছা
তাই!
-
হঠাৎ কি হল বলুন তো? যা বলছি সবেতেই সায় দিচ্ছেন! একটু আগেও তো প্রতিবাদে মুখর ছিলেন।
- হা!
হা! অত সহজে ধরা দিতে নেই কো!
- কার
কাছে?
-
নতুন গোঁসাই-এর কাছে।
- আপনি
কি কমললতা?
-
হুঁ।
- তা
শ্রীকান্ত কই?
-
কেন আমার পাশে বসে।
-
বাহ! ভালো বলেন তো! তা আমার জীবন অবশ্য শ্রীকান্তর মতই বাউণ্ডুলে।
- তাই
হয়ত ওইসব কবিতা লিখতে পারেন!
-
বড় কষ্ট হয় লিখতে! একটা কবিতা তো শুধু কবিতা নয়, অনেক যন্ত্রণা আগুন ব্যথার ভুমা থেকে
প্রস্ফুটিত।
-
দেখুন দেখুন শুভদা তিন শালিক। তিন শালিকে কি হয়?
-
বিয়ে।
- কার
সাথে?
- সে
আমি কি করে বলব?
-
এই জায়গাটা কেমন জানি চন্দনেশ্বরের মাচানতলা মনে হচ্ছে। তাই না?
-
হ্যাঁ স্বর্গীয়। শ্যামলদা অসামান্য। তেমন দর পেলোনা অথচ মানুষটা। বলছি মাচানতলা না
ছাদনাতলা?
ঐশী
হাসে। আকাশ লাল করে সুর্য ডুববে কিছু পর। তাকিয়ে বলি, চলুন ফিরতে হবে তো। সন্ধ্যে ঘনাবে
এরপর।
-
না ফিরলে হয় না শুভদা? কি দ্রুত দিনটা ফুরিয়ে গেল! এ জীবনও তাই। আমরা একে আটকাতে পারিনা?
-
আমরা কই, আমি একা। আপনিও। আমরা হলে হয়ত পারতাম!
- হাত
ধরবেন একটু?
শিউরে
উঠি। তবে সেই ট্রেনের প্রৌঢ়াই কি ঠিক!
হাত
বাড়িয়ে দিই। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। চোখ বুজে আসে। কানে আসছে ঐশী গাইছে -
কে বেশি
পাগল - কবি না কবিতা?
দরকার
নেই সেই হিসেব নেবার।
ঘুমোও
বাউন্ডুলে, ঘুমোও এবার।
সন্ধ্যে
ঘনালো। ফেরার তেমন তাড়া নেই আমারও। কোথায়ই বা যাবো!
ঐশী
ডাকছে, শুভদা চলুন এবার।
আমি
কেমন যেন স্বপ্নের ঘোরে। জিজ্ঞেস করি,
- কেন?
-
গুড়িয়াকে মিস করছি যে।
-
আচ্ছা আসুন।
- একা
যাবো?
- কেন
আমার কি আপনার সাথে যাবার কথা ছিলো? আমার তো কেউ নেই!
-
এই তো আছি। গুড়িয়াও না হয় আপনারই হবে। যাবেন আমার সাথে?
দুই
ছায়ামূর্তি তখন কেল্লা পেরিয়ে হাঁটছে বিরহীর পাশ দিয়ে। দূরের কোনো আলোয় আমার আর ঐশীর ছায়া তখন মস্ত বড় হয়ে কেল্লার গায়ে!
কিছু স্থান আসলেই ফেলে আসা যায় না। তবু ফিরছি আমরা। ফিরছিই... কে জানে!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন