কবিতার কালিমাটি ১০০ |
করোনাকাল বিষয়ক
করোনাকাল – ১
ফোন
নাম্বারটাইএকঘেয়ে লাগছে
এই
যে পিঠচুলকানো কাঠের হাত, ফোনের ঢাকনা
বাবার
পায়ের মতো পায়ের বুড়োআঙ্গুল, ই-মেইলগুলোর পাসওয়ার্ড,
ব্যাংক
অ্যাকাউন্টের টাকার দলা একঘেয়ে লাগছে।
ল্যাপটপের
ডালা ওল্টালে টকটকে স্ক্রিন, অনলাইনে কেনা জুতোজোড়ার হা-মুখ,
বাদামের
খোসা সরিয়ে টসটসে বাদাম, সসপ্যানে অলিভ ওয়েল…
ফোঁসফোঁস
পেঁয়াজ বাদামী
দৃশ্যগুলো
দেয়ালে ঝোলানো নকশিকাঁথার সাথে অসমান মিশে যাচ্ছে।
মেলায়
প্রকাশিত বইগুলোর স্তুপ, বালিশে থেঁতলে থাকা মাথার ভাঁজ,
সোফার
কোণায় পড়ে থাকা অসভ্য কুশন, তাকের ওপরে দু’মুখ করে পড়ে থাকা
খরগোশ
ক্যাঙ্গারুপুতুল অসহ্য লাগছে।
হ্যান্ড
স্যানিটাইজারের পাশে শুয়ে থাকা চশমার খোলস, তার পাশে
ক্রেডিটকার্ডের
বিল,
অব্যবহৃত
রান্নার বই, টিস্যুবাক্স থেকে বেরিয়ে আসা পাতলা আলোড়ন, ফেসবুক লাইভের আমন্ত্রণ, ফ্রিজে
জমে থাকা রান্নার মতো বাসী হয়ে যাচ্ছে ক্লান্তি ছড়াচ্ছে। ঘুষঘুষ জ্বর ছড়াচ্ছে
করোনা
করোনা অন্ধ ভিড় গলিতে।
রান্নাঘরে
কার্ডবোর্ডটার সাথে কালোবাট ছুরিটা ইউটিউব রেসিপির মতো অভ্যস্ত সব্জি কাটছে,
অন্ধকারটা
সরছে না, নেটফ্লিক্সের চারকোণা সারি সারি ছবির পোস্টার নড়ছে না…
গৃহবন্দিটা
বন্দি হয়ে আছে সময়ের ধর্মগ্রন্থে।
নাকের
বাম পাশের তিলটা, বুকের খাঁচার বামদিকের লাবডাব, প্রেসারকুকারে ওম হয়ে থাকা যাবতীয়
সব্জি-খিচুড়ি, ইনবক্সে জমে থাকা শত শত অসহ্য ভিডিও
সারাদিন
প্যাঁচপ্যাঁচে কাদার মতো থকথক করছে। সবাই না তাকিয়েই দেখছে যে একঘেয়েটাই একঘেয়ে হয়ে
গেল।
আজ
সমস্তক্ষণটুকুন অবিকল একঘেয়েমির কার্বনকপি হয়ে যাচ্ছে… যাচ্ছে… যাচ্ছে…
করোনাকাল - ২
এই
সোফাটা ফেলে দিতে চেয়েছিলাম সেদিন, যেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল না
অনেকদিন।
ঘরে বাইরে কার্নিশে রোদের পুলিশ ব্যারাক
জানালা
খুলে দিলে বাতাসময় রোদ নামে,
ঘেমে
গেলেও ঘাম হয় আবার। বারান্দায় দাঁড়ালেই শোনা যায়
আদার
কেজি ২৫০ টাকা। আবার নিজের ঘরে ফিরে এলেই সেই
ল্যাপটপ,
সেই চেয়ারে পা তুলে দেয়া।
এই
ঘরে রাত ফুরোয় না, বাতিগুলো পাহারা দেয় রাতের ঘুমকে
নিয়ম
করেই ভোরের আলো জানান দেয়; আমি ঘুম নিয়ে এসেছি,
এই
সোফা তখন বালিকা রতনের মতো বিছানা সাজিয়ে নেয়…
ফোন
পড়ে থাকে চেয়ারের পাটাতনে।
সময়
যাচ্ছে, কেউ কেউ চলে যাচ্ছে। বন্দিগৃহটা যাচ্ছে না, সময়টা করাত কলে
কাটছে,
ইভা কবিতা চাইছে, গ্লাভসের বাক্স থেকে গ্লাভস উড়ে যাচ্ছে…
দাড়ি
গজাচ্ছে, পেইন্টিং থমকে আছে… প্লেগ করোনাকে হাত ধরে সোফায় বসিয়ে রাখছে।
লাইভে
যে গান করছে তাকে অদ্ভুত ক্লান্ত লাগছে
অদৃশ্য
ভয়ের মিছিল মার্চপাস্ট করছে।
নীপবন
কবিতা পড়ছে, ট্রেডমিলটানি:সঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে, কবি রান্না করতে যেয়ে
গরম
তেলে হাতে ফোস্কা পড়ছে। বিড়ালটা সারাক্ষণ করিডোরে হাঁটতে চায় বলে
মিউ
ডাকছে; অধ্যাপক তার ছাদ বাগানে পাখিদের খাবার ছিটিয়ে রাখছে।
খাবারের
আকাল কোথাও, বেঁচে থাকার সংগ্রাম ভাসছে আকাল…
রোদের
দাপট নাচছে
মানুষ
তবু সর্বগ্রাসী, সময়টাকেই একদম খেয়ে ফেলছে।
এখন ওদের
রাজত্ব
কে জানে কোথায় চাঁদ নেমে আছে,
কে জানে সারারাত
বিধূ থেকে অনল আলো সে ধরে আছে,
পৃথিবী তারে ওলো চাঁদসোনা ডাকে
কেউ ঠোঁট গোল করেপূর্ণিমা মাখে।
কেউ ঠোঁট গোল করেপূর্ণিমা মাখে।
কে জানে নিশি পায় কাকে কে জানে সে মৃয়মাণ হাঁটে
কে জানে সে নবনী তাহা সে যে তারে আচানক দেখে
চোখ তুলে বলে : আহা দেখো চাঁদ নেমে গেছে।
কে জানে সে নবনী তাহা সে যে তারে আচানক দেখে
চোখ তুলে বলে : আহা দেখো চাঁদ নেমে গেছে।
নদী থাকে দুইহাতে ভরাট কপাট, ডাকাতিয়া ডাকে : আমার মাটি নেই,
বাগান আছে
নদী কখনো অন্ধ নয়, তার চাঁদ খোলাশরীর;
কে জানে কোন উপুতবালিকা ছাদ ছুঁয়ে থাকে, জীবনের জ্যামিতি আঁকে।
নদী কখনো অন্ধ নয়, তার চাঁদ খোলাশরীর;
কে জানে কোন উপুতবালিকা ছাদ ছুঁয়ে থাকে, জীবনের জ্যামিতি আঁকে।
চিবুকে হাত দিয়ে বসে থাকে সাদাবকের সরু ঠোঁটের লম্বা মিছিল
মাছ তো অবিকল সরল, চোখের পাতা নেই, টলটলে জলে সে ভেসে থাকে।
মাছ তো অবিকল সরল, চোখের পাতা নেই, টলটলে জলে সে ভেসে থাকে।
লেজ নেড়ে বকেরে ডাকে:
দেখো দেখো চাঁদ নেমেআছে।
অপার প্রণয়ে
যদি সবুজলাল প্রণয়ে হালুম থাকো তুমি
দিতে পারি ফেনায়িত অপার কফি। পানের আড়ালে ভুলে যাও পুরনো ঘ্রাণ, দু:খসাম্বা।
এতো হলুদাভ ভেঙ্গে থাকা বেলেহরিজেন্তো, নীল হয়ে যায় অভাবী পাহাড়িমানুষ,
তুমি কাঁদো তুমি হাসো।
তুমি কাঁদো তুমি হাসো।
যদি আলোর নিশানা মেলে ধরো সমার্থক মৃন্ময় বাউলের সামনে দরাজ সুরে।
অনলে যখন গা পুড়ে যায়, তোমার বাতাসে জেগে ওঠে আমার উন্মূলবৃষ্টির নূহ
টের কি পাও,ওকাম্পো ?
অনলে যখন গা পুড়ে যায়, তোমার বাতাসে জেগে ওঠে আমার উন্মূলবৃষ্টির নূহ
টের কি পাও,ওকাম্পো ?
যাদু দেখাও কালের করোনা।
আমি জাগতিক প্রণয়ের ভিড়ে তোমার গন্ধে বিভোর এত মৃদঙ্গ,
এত রুপটান এত তুমি তুমি
চুমু করে ছুঁয়ে দিই নাগরিককিরণ, ঊর্মিলা কেঁপে উঠুক কুমারীসৈকত, দু’জনা।
এসো পাতার লাবণ্য, অন্তরগোলাপ, তুলে নাও এই কবিতা করপুট
আমিও ভেবে নেব মূর্ছনাবৈভব তোমার প্রমিতমুকুট।
আমিও ভেবে নেব মূর্ছনাবৈভব তোমার প্রমিতমুকুট।
গোলাপের ভ্রুণে তোমার সৃষ্টি,
দৈবাৎ বীজতলা থেকে ডান থেকে বামে এসে দাঁড়াও
নদীর মুগ্ধতা বৃষ্টিসমান,আমি মনপুর বাড়ি থেকে চিঠি লিখি, ছুঁড়ে দিই খাম
জানালায় আঁকি মুখ, তোমার চিহ্ন।
নদীর মুগ্ধতা বৃষ্টিসমান,আমি মনপুর বাড়ি থেকে চিঠি লিখি, ছুঁড়ে দিই খাম
জানালায় আঁকি মুখ, তোমার চিহ্ন।
যদি বেঁচে থাকি তোমার প্রেমে প্রজাপতি করে ছেড়ে দিও তোমার গোলাপে সৌরভে।
আমিও বলি : ও চাতকী জল দেবে দাও, আমাদের প্রবালের বাতিঘরে
তোমার চিহ্ন দেবে দাও
শাসনের মতো এতো ঘন হয়ে থাকুক আমাদের অন্নপূর্ণাজীবন
শাসনের মতো এতো ঘন হয়ে থাকুক আমাদের অন্নপূর্ণাজীবন
কিংবা বোধ, বাংলাদেশ।
কী অপার সরোদে তুমি নীলিমা করো
ও সখী ঘুমাও যত্ন করে, ঘুম যদি ভেঙ্গে যায় মনে রেখো
কাল সারারাত আমিও ছিলাম যারে যা পাখি,
বাংলাদেশ বাতাসের সরল ঊর্মিলা অণু।
অসহ্য সুন্দর কবিতা
উত্তরমুছুন