কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪ |
কোভিড
ফল উইণ্টার কবে পার হয়ে
গেছে। মাইনাস কুড়ির ভারি বরফ মাস দুই তিন সহ্য করেও দু’চারটে কমলা হলুদ রাণী
রঙের ম্যাপল পাতা এখনো বিষণ্ন গাছে টিকে রয়েছে। মাত্র ছয় মাস আগে দু’ পাশাড়ি বাহারি
ম্যাপেলের ঝাঁক যখন পার হচ্ছিল তখন উইন্ড স্ক্রীনে বাতাস বসন্ত বাহার গাইছিল। এখন
যেন শত শত শুয়োরের মরণ কাঁদন। মাদুরা উইন্ডো গ্লাস তুলে দিয়ে এসি অন
করল। প্রায় মাস আটেক পর তাপমান কমিয়ে পনেরোতে সেট করছে। আহ কী ভালো লাগছে। বিশাল চওড়া
রোড একেবারে স্তব্ধ। গাইতে গাইতে রেয়ার মিররে চোখ
পড়তেই দেখলো পিছনের সিটে রায়া। ঘুমিয়ে কাদা। মুখের এন ৯৫ মাস্ক সরে গেছে। মাদুরার
হঠাৎ
শীত করতে লাগলো। কেঁপে উঠলো সারা দেহ। নিজের মুখে হাত বুলিয়ে টের পেল নির্জীব
খড়খড়ে মাস্ক। এই গোয়ার্তুমির কোনো মানে হয় না। আগে থেকেই ওর ইমিউনিটি কম। সঙ্গে
সঙ্গে তাপমান তুলে দিল আঠাশ ডিগ্রিতে। মাস্ক ঢাকা রায়াকে ভারী সুন্দর দেখায়। এতো
শান্ত গভীর কালো চোখ মাদুরা কখনো দেখেনি। যেন মনে হয় দেখতেই থাকি, দেখতেই থাকি। ওকে
মুখ খুলে হাসতে দেখেনি একবারও। এমনকি বছর দেড়েক আগে নিউইয়র্কের মন্দিরে না, পরের দিনে ম্যারেজ
রেজিস্ট্রির সময়েও। সঙ্গম দূরের কথা। ওই এক দু’ মিনিট চোখে চোখ মেলানো, ঠোঁটে ঠোঁট মেলানো, একটু জড়িয়ে ধরা। এই
অব্দি। তারপর দুর্ভাগ্যক্রম। ছাড়াছাড়ি। বন্ধুরা বলে, এমন আয়রনি যেন কারোর না হয়।
বিয়ের আগে কেউ কাউকে জানল না শুনল না। বিয়ের পরও না। অবশ্যি ওর সাথে কিছু
যে হয়নি তা নয়,
তবে সব
ভার্চুয়াল। রায়া ম্যানহাটানের ছোটো বাথরুমের কামোটে বসে আর মাদুরা ওয়াশিংটন
স্টেটের একটা বড় লিভিং রুমে। একটা উত্কট দুর্গন্ধ নাকে এলো যেন? মাদুরা নাক ঘুরিয়ে
শুকতে লাগলো। পচা মাংসের গন্ধ? মাদুরা দেখলো রাস্তার দুদিকে অনেকগুলো ওল্ড এজ হোম।
একেবারেই জনহীন মৃতপুরী। একদুটো ঘরের বাইরে সাদা কফিন। একটা মিষ্টি মাদক
গন্ধ ভেসে এলো নাকে। রায়া ঘুমঘোরে ফর্সা বাঁ বাহু মাথার উপর তুলেছে। বগলে সোনালী
রেশম লোম। রায়ার জন্যে শরীর ছটফট করছে। কিন্তু ও যে ইনফেক্টেড!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন