কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

১৩ ভূদেব ভকত

চিড়
ভূদেব ভকত


শরীরে চিনির আধিক্য হয়েছে। ডাক্তারবাবু বলেছেন, রোজ সকালে অন্তত কুড়ি মিনিট হাঁটতে। অগত্যা হাঁটতে বেরিয়েছি। এপথ ওপথ অচেনা পথগুলোতে হেঁটে বেড়াই। একদিন হঠাৎ দেখি, একটি বাড়ির দরজায় নাম লেখা আছে ড. এস অধিকারী। ইনি কি তবে সেই অধিকারী, যাঁর ডিস্পেনসারির সামনে আমার স্কুটারটা রেখে বাজার করতে যাই? স্কুটার রাখতে রাখতেই তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ এবং ঘনিষ্ঠতা। তাঁর পুরো নাম ড. শ্যামসুন্দর অধিকারী। মনোবিদ। বেশ আলাপী ভদ্রলোক। মাঝে মাঝে কিছুটা আড্ডাও হয়ে যায় তাঁর সাথে। আড্ডা মারতে মারতেই বলেন মানুষের হাজার সমস্যা, অবসাদের কথা। নারী ঘটিত সম্পর্কের চিড় সংক্রান্ত অনেক সমস্যার কথাও বলেন। মনোবিদ তিনি, সেইসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।

নামটা দেখে ভাবলাম, দরজায় টোকা দিই। আসলে ভেতরটা চা-চা করছে। এই সময় ডাক্তারবৌদির হাতের এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। দিলাম টোকা। দরজা খুলে গেল। হ্যাঁ, কোনো ভুল নয়, ইনি সেই ডাক্তার অধিকারীই। আমাকে দেখে অবাক। “একি! আপনি হঠাৎ!” বললাম, “মর্নিংওয়াকে বেরিয়েছি। দরজায় আপনার নামটা দেখে ভাবলাম, বৌদির হাতের এককাপ চা না খেয়ে যাচ্ছি না”।

বসার ঘরে বেশ কিছুক্ষণ গল্প হলো আমাদের। কিন্তু মনোবিদ মহাশয় চা’য়ের ব্যাপারে কোনো উচ্চবাচ্যই করলেন না। অপেক্ষা করে করে শেষপর্যন্ত সংকোচ না করেই বলে বসলাম, “কৈ, ডাকুন বৌদিকে! এককাপ চা অন্তত বৌদির হাতের...”। ডাক্তারবাবু আমার কথায় কেমন যেন উদাস হয়ে গেলেন। আমি বিব্রত বোধ করলাম। কিছুটা বোকার মতো তাকিয়ে থাকলাম মনোবিদের দিকে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার অধিকারী খুব বিষণ্ন গলায় বললেন, “ আসলে কী জানেন... বিয়ে আমার হয়েছিল ঠিকই...!” আবার থামলেন তিনি। তারপর কেমন যেন শূন্য দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার বউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে!”

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন