কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

০৮ মেঘ অদিতি

যদিও সন্ধ্যা
মেঘ অদিতি


সারাদিনের ছড়িয়ে থাকা কমলা রঙটা এবার খুব ধীরে সূর্যটার গায়ে এসে ঠিকঠাক মাপে বসছে। তখনই চোখ পড়ে সবুজে মাথা উঁচিয়ে থাকা একটা ন্যাড়া গাছের দিকে...

তীর্থও আজকাল আমাকে একটা ন্যাড়া গাছই ভাবে। পুষ্প-পল্লবহীন। অথচ আদ্যন্ত সৎ থাকার চেষ্টায় সম্পর্কের সর্বত্র স্বচ্ছতা বজায় রাখতে শুরু থেকে আমরা দুজনেই বদ্ধপরিকর ছিলাম। তীর্থ তার কতটা রাখল! সেই তো বুকের ভেতরটা চিরে গেল। এখন ঝলকে ঝলকে ওঠা রক্তপাত সামলে আমার উদাস মুখ ময়নামতির বাতাসে খুঁজছে চীবরের কোণ, মুণ্ডিত মাথার শ্রমণ মুখ, খণ্ডিত ইতিহাস।

গল্পগুলো এভাবে শুরুতে যত মনোরম, ধারাবাহিকতায় সে সুর আর রাখতে পারে না। তখন তাকে সেখানেই থামিয়ে দাও, নইলে সে চলতে শুরু করবে তার পুরনো পথ ধরে অর্থাৎ সর্বার্থেই বোরিং। যে কারণে এ মুহূর্তে ইতিহাস খোঁজার চেষ্টাই সার, ফাঁক গলে ফাটলটা এখান থেকেও তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে গল্পে ঢুকে পড়তে।

গাঢ় কমলা রঙ আস্তে আস্তে ম্লান হলো। আলো নিভিয়ে দেবার সময় হলে একটা সোঁদা গন্ধ উঠে এল মাটি থেকে। এই গন্ধটার সাথে আমার শৈশব মিশে আছে। বাড়ি ফিরেও যাওয়া যেত, কিন্তু দিনের শেষে পায়ের কাছে নেমে আসা সংক্ষিপ্ত এই সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আপাতত ময়নামতির এই কোটিলমুড়া ছেড়ে অন্য কোনো গন্তব্য আমি ভাবছি না।

স্মৃতি, যার কোনো আলো-অন্ধকার, সময়-অসময় আসলে নেই। যখন তখন হুট করে মনের ভেতর ছবি হয়ে ঢুকে পড়াই তার কাজ। বিহ্বল আমি তাই একবার এদিকে ফিরি তো আরেকবার ওদিকে। নিজেকে তো কিছুটা জানি। ভয় - সেখানেই। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তীর্থকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে কাছে পেতে আমার যে আবার ইচ্ছে করবে, সে আশঙ্কা ভেতর ভেতর ঘটতে থাকে... আবার এই রক্তপাত, সেও তো অর্থহীন নয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় অহেতুক যে আঙুল তীর্থ তুলেছে আমার দিকে, তা শরীরে বিঁধে গেছে চিরদিনের মতো। অতীতের সেই ফিরে আসা, তাকে কত ভাবেই না লুকিয়ে ফেলছিল তীর্থ, তবু খেলাটা আর শেষ অবধি সামলাতে পারল না সে। এই আমি, বহুবার বোঝাতে গিয়ে বলেছি, জায়গা বদল করে একবার ভাবো তীর্থ, নিজে হলে আমার বেলায় এসবের কতটা নিতে পারতে!

তীর্থ, সে সময় তোমার এক্সপ্লোশানটা... দেখার মতো বটে।

খুব ইচ্ছে করছে এখন শৃঙ্খলা শব্দটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে অন্ধকারের শরীরের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিতে। স্তম্ভের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে মনে হলো, রাস্তা আছে। থাকতেই হয়।

রাস্তাটা থাকে বলে সেই নদীটার কথা আমরা কখনই ভুলি না...








0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন