কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

১৫ অভিষেক ঝা

হোঃ!
অভিষেক ঝা

হোঃ! এই বাটিটাও ওখান থেকে উঠে এল! পেতলের কানাউঁচু জামবাটি। নাক ডুবিয়ে দুধ খেতাম। গোঁফ ডুবিয়ে বাবা। বিকেলে বাবার হাত ধরে মাছ দেখতে যেতাম। কত রঙের যে মাছ! লাল, হলুদ, লাজুলি। কোনো কো্নোদিন বিপিনশা বাগান পেরিয়ে রাধিকার পুকুর। পাঁক থেকে ঝিনুক খুঁজে আনতাম। দেওয়ালে ঘষে ঘষে মাঝখানে ছ্যাদা করতাম। কাঁচা আম ছিলতাম। আম থেকে কইলটা বের করে ...“ কইল কইল কইল ঝুনুয়ার বিহা হবে কোনদিকে বইল!” তা সেই বাটি একদিন হারিয়ে গেল। দুঃখ হতো । বাবার হতো কিনা, কে জানে! তারপর একদিন দুঃখটাও হারিয়ে গেল। হারিয়েই গেল। মানে, যেভাবে হারিয়ে গেলে আর মনে পড়ে না, কীভাবে। তারপর হঠাৎ একদিন এই হোঃ!

“হদ দ্যাখ মাস্টার! একঠও চাঁদিক চমমচ ভি ছাও!” এইভাবে উঠে আসে এগুলো। কত বছর পর? কাঁসার বাটি, রূপোর চামচ, বাচ্চাদের ঝুনঝুনি, দুধ খাওয়ানোর ঝিনুক, নাক-কানের সোনালি-রূপালি ফুল, দড়ি-ছেঁড়া বালতি, আর দলা পাকিয়ে না-চিনতে-পারা কী সব। লোকটা দড়ি বেঁধে ইঁদারার গা বেয়ে বেয়ে নেমে যায়। গা শিরশির করে ওঠে। এই জলে রোজ নিমপাতা ঝরে -- সারাদিন ধরে -- বালতিতে করে উঠে আসে জল। অদ্ভুত এক গন্ধ নিয়ে। ভালো না, খারাপ না... কী রকম যেন! সেই জলের ভিতর জলে লোকটা নেমে যায়। খানিক তড়পিয়ে জল এখন স্থির। উঁকি মারা মুখেদের কাঁপা কাঁপা ছায়া। খানিক স্থির জল এখন তড়পায়। ছায়াগুলো ভেঙে জুড়ে একটা মানুষ মতো মাথা তুলে। দড়িতে টান পরে। উঠে আসে বালতি ভর্তি শ্যাওলাময় দলা। আর তা ঘাঁটতে ঘাঁটতেই... “হদ দ্যাখ মাস্টার! একঠও চাঁদিক চমমচ ভি ছাও!”

তেঁতুল, ছাই দিয়ে জমে থাকা দাগ তুলে ফেলার চেষ্টা করছে ঠাকুমা। রোদে শুকোতে দিচ্ছে সার দিয়ে। “হাঁ বহিন, দুধক ঝিন্নুক তো জিল্লা দেছে!”-- ভারতীর মা জানায়। “মোহান্ত থানেক মেলা মে কিনেছেও। লুসি, হাম্মার সেজকা বেটি, উস বছছর মরলাহ...”, ঠাকুমা জানায়। ঠাকুমার হাতে ঘষতে থাকা সেই ঝিনুক রোদে শুকোতে আসতে আসতে লুসিপিসির-ই গল্প হয়ে যায়। আস্তে আস্তে উঠে আসা জিনিসগুলো নিয়ে গল্প শুরু হয়। ঝুনঝুনি, নথ, একটা খড়ম। গলা নামিয়ে আস্তে আস্তে গল্প করে বুজুপিসি, ঝর্ণামা, ননছু বুড়িহা। আসতে আসতে গল্পগুলো হয়ে যায় ননছু-বুড়িহা-ঝর্ণামা-বুজুপিসি। আস্তে আস্তে এইভাবেই ভিতরের জল থেকে উঠে আসে বাটিটা। জামবাটি। কাণা উঁচু। পেতলের। ...আসতে আসতে...

হোঃ!

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন