সেমসাইড
সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ
পাথরঘাটা থেকে ঢাকায় ফিরছিল রুদ্র শায়ক। স্টিমারে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় ছেড়েছে, সন্ধ্যে নাগাদ সদরঘাটে পৌঁছে যাবে। সারাদিন কেবিনে শুয়ে-বসে, বই পড়ে-টিভি দেখে বোর হয়ে যাচ্ছিল। এসি কেবিন হওয়ায় কিছুটা রক্ষে। যে গরম পড়ছে, এসি না থাকলে সেদ্ধ হয়ে যেত।
স্টিমার চাঁদপুর ছেড়ে এসেছে অনেক আগে। মেঘনার পশ্চিমাকাশ রবির রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। আর একটু পরেই সন্ধে নামবে। কেবিন থেকে বাইরে এলো রুদ্র। ডেক-এ রেলিংএ ভর করে দাঁড়ালো। সামনে তাকালো। শুধুই অথৈ পানি। সীমাহীন।
কতদিন পর আবার মেঘনার খোলা হাওয়ায় নিজেকে মেলে দিলো। তা হবে দু’যুগ। তার মানে চব্বিশটা বছর পর আবার সেই মেঘনার উন্মুক্ত ডেকএ...
চব্বিশ বছর আগে শেষবার এই স্টিমারে ঢাকা থেকে আমতলি গিয়েছিল রুদ্র। সেবার ওর পাশে ছিল শ্রেয়সী। ওর ক্লাশমেট। যাকে ও মন-প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিল। বিয়ে করবে বলে ঠিকও করে ফেলেছিল।
মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ। কথা ছিল, গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে ওরা রেজিষ্ট্রিটা করে রাখবে। তারপর একটা চাকরি-বাকরি জুটে গেলে ছোট্ট সুখনীড় বাঁধবে।
শ্রেয়সীকে আমতলি পৌঁছে দিয়ে পাথরঘাটা গেল রুদ্র। সপ্তাহ খানেক গ্রামে থেকে ঢাকায় ফিরে চাকরি খুঁজতে লেগে গেল।
ওদিকে শ্রেয়সী সেই যে বাড়ি গেছে, আর ফেরার নাম নেই। দিন গেল, সপ্তাহ গেল, মাস গেল, শ্রেয়সী আর ঢাকায় ফিরলো না। চিঠি লিখলো রুদ্র। উত্তর এলো না।
একদিন মতিঝিল অফিস পাড়ায় বন্ধু মাসুদের সাথে দেখা। মাস্টার্স করে ওর মতো চাকরি খুঁজছে। রফিকের কাছে জানলো, শ্রেয়সীর বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর সাথে চিটাগাংএ থাকে। শ্রেয়সীর স্বামী য়্যুনিভার্সিটির টিচার।
শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো রুদ্রর। এ জন্যই বুঝি ওর চিঠিরও কোনো উত্তর দেয় না। চাকরি খোঁজা বন্ধ হলো। বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করলো। রাগে ক্ষোভে অপমানে বাইরের পৃথিবীর সাথে সব সম্পর্ক ছেদ করে দিলো।
হঠাৎ করেই য়্যুরোপ যাওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে গেল রুদ্র। ফিনল্যান্ডে। সুযোগটা হাতছাড়া করলো না। শ্রেয়সীহীন এ শহর ওর আর ভালো লাগছিল না। তারচে’ এই ভালো। এই শহর, এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে দূরে, বহু দূরে। একদিন সত্যি সত্যি চলেও গেল সেই সুদূর ফিনল্যান্ডে। তারপর কেটে গেল চব্বিশটা বছর। চব্বিশ বছর পর এই প্রথম দেশে ফেরা।
ওর পাশে একজন ভদ্রমহিলাও রেলিংএ ভর দিয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্যের অস্ত-গমন দেখার অপেক্ষায় উন্মুখ। ভদ্রমহিলার পুরো মুখটা দেখা যাচ্ছে না। মুখের একপাশ দেখতে পাচ্ছে রুদ্র। অনেকটা শ্রেয়সীর মতো। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। না, ও নাম আর মনে করতে চায় না। চোখ ফিরিয়ে নিলো। কিন্তু চোখ আর মন তো কারো শাসন মানে না! আবার তাকালো। এবার ওর দিকে তাকালেন ভদ্রমহিলা। রুদ্র দেখলো, শ্রেয়সীর মতো নয়; শ্রেয়সীই। চব্বিশ বছর পরও চিনতে এতটুকু কষ্ট হলো না।
মনে ভয়-সংশয়, দ্বিধা-সংকোচ নিয়ে এগিয়ে গেল রুদ্র। বললো : তুমি!
শ্রেয়সী ওকে আগেই দেখেছিল। এ জন্যে চমকালো না। উত্তর দিলো : চিনতে পারছো না, নাকি চিনেও না চেনার ভান করছো?
না, মানে তোমার সাথে আর কেউ নেই তো, তাই!
আর কেউ মানে?
তোমার স্বামী, সন্তানেরা
বিয়ে হলেই না স্বামী-সন্তান।
মাসুদ যে আমাকে...
মাসুদ তো আমাকেও বলেছিল, তুমি নাকি বিয়ে করে বউ নিয়ে বিদেশে চলে গেছ।
তার মানে তুমি বিয়ে করনি?
কেন, তুমি পারো আর আমি পারি না? ভালোবাসার সোল এজেন্সি কী তুমি একাই নিয়েছো নাকি?
শ্রেয়সীর এ কথার কোনো উত্তর দিতে পারলো না রুদ্র। অপলক চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো একরাশ স্নিগ্ধ মুগ্ধতায়।
পাথরঘাটা থেকে ঢাকায় ফিরছিল রুদ্র শায়ক। স্টিমারে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় ছেড়েছে, সন্ধ্যে নাগাদ সদরঘাটে পৌঁছে যাবে। সারাদিন কেবিনে শুয়ে-বসে, বই পড়ে-টিভি দেখে বোর হয়ে যাচ্ছিল। এসি কেবিন হওয়ায় কিছুটা রক্ষে। যে গরম পড়ছে, এসি না থাকলে সেদ্ধ হয়ে যেত।
স্টিমার চাঁদপুর ছেড়ে এসেছে অনেক আগে। মেঘনার পশ্চিমাকাশ রবির রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। আর একটু পরেই সন্ধে নামবে। কেবিন থেকে বাইরে এলো রুদ্র। ডেক-এ রেলিংএ ভর করে দাঁড়ালো। সামনে তাকালো। শুধুই অথৈ পানি। সীমাহীন।
কতদিন পর আবার মেঘনার খোলা হাওয়ায় নিজেকে মেলে দিলো। তা হবে দু’যুগ। তার মানে চব্বিশটা বছর পর আবার সেই মেঘনার উন্মুক্ত ডেকএ...
চব্বিশ বছর আগে শেষবার এই স্টিমারে ঢাকা থেকে আমতলি গিয়েছিল রুদ্র। সেবার ওর পাশে ছিল শ্রেয়সী। ওর ক্লাশমেট। যাকে ও মন-প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিল। বিয়ে করবে বলে ঠিকও করে ফেলেছিল।
মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ। কথা ছিল, গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে ওরা রেজিষ্ট্রিটা করে রাখবে। তারপর একটা চাকরি-বাকরি জুটে গেলে ছোট্ট সুখনীড় বাঁধবে।
শ্রেয়সীকে আমতলি পৌঁছে দিয়ে পাথরঘাটা গেল রুদ্র। সপ্তাহ খানেক গ্রামে থেকে ঢাকায় ফিরে চাকরি খুঁজতে লেগে গেল।
ওদিকে শ্রেয়সী সেই যে বাড়ি গেছে, আর ফেরার নাম নেই। দিন গেল, সপ্তাহ গেল, মাস গেল, শ্রেয়সী আর ঢাকায় ফিরলো না। চিঠি লিখলো রুদ্র। উত্তর এলো না।
একদিন মতিঝিল অফিস পাড়ায় বন্ধু মাসুদের সাথে দেখা। মাস্টার্স করে ওর মতো চাকরি খুঁজছে। রফিকের কাছে জানলো, শ্রেয়সীর বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর সাথে চিটাগাংএ থাকে। শ্রেয়সীর স্বামী য়্যুনিভার্সিটির টিচার।
শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো রুদ্রর। এ জন্যই বুঝি ওর চিঠিরও কোনো উত্তর দেয় না। চাকরি খোঁজা বন্ধ হলো। বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করলো। রাগে ক্ষোভে অপমানে বাইরের পৃথিবীর সাথে সব সম্পর্ক ছেদ করে দিলো।
হঠাৎ করেই য়্যুরোপ যাওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে গেল রুদ্র। ফিনল্যান্ডে। সুযোগটা হাতছাড়া করলো না। শ্রেয়সীহীন এ শহর ওর আর ভালো লাগছিল না। তারচে’ এই ভালো। এই শহর, এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে দূরে, বহু দূরে। একদিন সত্যি সত্যি চলেও গেল সেই সুদূর ফিনল্যান্ডে। তারপর কেটে গেল চব্বিশটা বছর। চব্বিশ বছর পর এই প্রথম দেশে ফেরা।
ওর পাশে একজন ভদ্রমহিলাও রেলিংএ ভর দিয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্যের অস্ত-গমন দেখার অপেক্ষায় উন্মুখ। ভদ্রমহিলার পুরো মুখটা দেখা যাচ্ছে না। মুখের একপাশ দেখতে পাচ্ছে রুদ্র। অনেকটা শ্রেয়সীর মতো। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। না, ও নাম আর মনে করতে চায় না। চোখ ফিরিয়ে নিলো। কিন্তু চোখ আর মন তো কারো শাসন মানে না! আবার তাকালো। এবার ওর দিকে তাকালেন ভদ্রমহিলা। রুদ্র দেখলো, শ্রেয়সীর মতো নয়; শ্রেয়সীই। চব্বিশ বছর পরও চিনতে এতটুকু কষ্ট হলো না।
মনে ভয়-সংশয়, দ্বিধা-সংকোচ নিয়ে এগিয়ে গেল রুদ্র। বললো : তুমি!
শ্রেয়সী ওকে আগেই দেখেছিল। এ জন্যে চমকালো না। উত্তর দিলো : চিনতে পারছো না, নাকি চিনেও না চেনার ভান করছো?
না, মানে তোমার সাথে আর কেউ নেই তো, তাই!
আর কেউ মানে?
তোমার স্বামী, সন্তানেরা
বিয়ে হলেই না স্বামী-সন্তান।
মাসুদ যে আমাকে...
মাসুদ তো আমাকেও বলেছিল, তুমি নাকি বিয়ে করে বউ নিয়ে বিদেশে চলে গেছ।
তার মানে তুমি বিয়ে করনি?
কেন, তুমি পারো আর আমি পারি না? ভালোবাসার সোল এজেন্সি কী তুমি একাই নিয়েছো নাকি?
শ্রেয়সীর এ কথার কোনো উত্তর দিতে পারলো না রুদ্র। অপলক চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো একরাশ স্নিগ্ধ মুগ্ধতায়।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন