কবিতার কালিমাটি ১০৮ |
দেবী
একটা লোক ঘরে
বসে থাকতে থাকতে
স্রেফ মরে গেল
ওর আত্মা এখন
যেন একটা ছোট্ট
হাইফেন
পা দোলায় পৃথিবী
আর কালের মাঝে
হাই তোলে আর
চরম আলস্যে তাকায়
মাঝেমাঝে যখন
খিদে পায় খুব
কবিতা চিবোয়
কড়মড় করে
পেটের ভিতর
হাত ঢুকিয়ে তুলে আনে
ছিবড়ানো অংশ,
নাড়াচাড়া করে
ছুঁড়ে ফেলে
সামনের জমিতে
জমিটার শুকনো
প্যাঁকাটি চেহারা
কে বা কারা
ধর্ষণ করে
উলঙ্গ ফেলে
গেছে খেয়াল মিটিয়ে
কবিতার ছিবড়ে
তুলে নেয় সে
কিছু ফুল দিয়ে
সাজিয়ে তুলে রাখে ঠাকুরঘরে
আর কিছুটা দিয়ে
নিজেকে সাজায়
নরম বিকেলের
ঘরে ফেরা আলোয়
ওকে দেখায় ঠিক
নাম-না জানা
দেবীর মতো
অতসী কাকি
চৌকাঠে হাল
ফ্যাশনের চটি
হাল্কারঙ শাড়ি
সরু পাড়
দেখে বুঝতে
পারি আজ গল্প জমবে ভারি
পড়া মুখস্থ
বলার মতো বলে যান পাড়ার খবর
জেনে যাই উড়ো
হাঁড়ির খবর, জোলো নুনের খবর
দুটো ব্লক পরে
কোনো মেয়ের মধ্যবয়সী প্রেমিকের খবর
হাঁ করে শুনি
সুরেলা কণ্ঠের জাদু
থার্ড ফ্লোরের
অশোক জেঠুর গোপন অসুখ
এমন করে বলেন
যেন মনে হয়
এখুনি ঘেটে
দেখে এসেছেন জীবনের অপার পরিহাস
ঘরে বৌমার পরপর
তিনবার মিসক্যারেজ
আলক্ষ্মী সংসার
হাওয়ার সঙ্গে
এভাবেই খেলেন তিনি
সময় থেমে যায়
তবু খেলা থামে না
অনেক রাতে ঘুমোনোর
আগে
শাড়ি কেচে মেলে
দেন টানটান করে
খোলা ছাদে সারারাত
ধীরেসুস্থে শুকোতে শুকোতে
দোল খায় ঝলসানো
নৈঃশব্দ্য
তিরিশ টাকার সংসার
তিরিশ টাকায়
প্রতিদিন নিত্যানন্দ সংসার বিক্রি করে
স্টিলের বাটি
তিরিশ টাকা, রূপোর ঝুড়ি তিরিশ টাকা,
হিরের ফুল তিরিশ
টাকা,সুখের আদর তিরিশ টাকা
গলার মালা তিরিশ
টাকা, হাতের বালা তিরিশ টাকা
ঘুম ঘুম সঙ্গ
তিরিশ টাকা, সোনালি স্বপ্ন তিরিশ টাকা
গমগমে স্বরে
নিত্যানন্দ রোজ এপাড়া ওপাড়া
ভ্যানগাড়ির
প্যাডেলে চাপ দিতে দিতে হেঁকে যায়
তিরিশ টাকা
মাত্র তিরিশ টাকা
সংসার কিনুন
তিরিশ টাকায়
মান-অভিমান
গল্প কিনুন তিরিশ টাকায়
কয়েক মাইল বৃষ্টি
কিনুন তিরিশ টাকায়
ঠাকুর কিনুন
তিরিশ টাকায়
পুকুর কিনুন
তিরিশ টাকায়
বিক্রি হোক
বা না হোক
দিন শেষে ঘরে
ফিরে অঝোর হাসিতে
চিকচিকিয়ে ওঠে
নিত্যানন্দের পাথরের চোখ
তিরিশ টাকার
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন