কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

গোলাম কিবরিয়া পিনু

 

কবিতার কালিমাটি ১০৮


গহীন অরণ্যের লবণাক্ত অঞ্চলে

 

(আইসোলেশনে থাকা ১১দিনের অনুভব)

 

ঘরের ভেতর পড়ে আছি

নিজেকে করেছি বিচ্ছিন্ন ও দূরবর্তী

                     --নক্ষত্রের আলো!

স্পর্শ যেন না করি কেউ কাউকে

যেন কেউ কাছে না আসে,

          যত বিচ্ছিন্নতা--ততই  নিরাপদ!

 

মনে হয় ভেঙে পড়া ঘর

ভস্ম হওয়া উঠানের গাছ

 

মুখের নিকটে মুখ ফুটে কথা বলছে না কেউ

বিষণ্নতার ভেতর শুধু নীরবতা,

সপ্তাহের প্রতিটি দিনই ঊর্ণা মেঘ দিয়ে তৈরী

সূর্যডোবা হয়ে--শুনশান, নিঝুম ও নিশুতি!

 

বিলাপধ্বনির ভেতর ডুবে গিয়ে

একটা জলহস্তির গ্রাস থেকে বেঁচে উঠবার

আগ্রহ ও উদ্দীপনা--প্রতি কোষে কোষে

                  জেগে তুলতে হচ্ছে!

 

যুগজীর্ণ এ- কোন্ সময় দীর্ণ করে ফেলছে!

মনে হচ্ছে কত হাজার বছরের বন্দীত্ব ও শৃঙ্খল

বিপুল শক্তির আধার হয়ে--আমাকে আটকে রেখেছে!

 

যে ঘরে আছি--সে ঘর থেকে

প্রত্যেকটি ঘর লাগোয়া হলেও--তা এখন দূরবর্তী,

                                      মায়ের ঘরও!

পাশে থাকা সন্তানের ঘরও যোজন দূরে,

জীবনসাথীও--সে ও গুটিয়ে রেখেছে তার ছায়া

                     কোনো এক বেলাভূমিতে!

 

আমি এখন নিজেকে ছাড়া

কাউকে ছুঁইতে পারি না!

 

এমন সময় অস্থির সময়

হৃদয়ের ভূগোলে পড়ে থাকে রক্তাক্ত জ্যোৎস্না!

এর পর কুয়াশার ভেতর ছুটতে ছুটতে

                   একা একা সঙ্গীসাথীহীন হয়ে--

পড়ে থাকা নিজের জীবনটাকে কুড়াতে হচ্ছে!

জীবনের দোঁআশলা মাটিতে ফোটে যে সকল স্বর্ণপুষ্প

তা থেকেও বেশ দূরে থাকতে হচ্ছে এ-মুহূর্তে!

আমি এখন নিঃসঙ্গ একা

নিজ ঘরে--নিজের আস্তানায়,

             কাকতাড়ুয়ার পোশাক পরে আছি যেন!

 

স্তব্দতার অশ্রু হয় না--হয় শুধুই পাথর

                  পাথরের মধ্যে বসবাস!

আমি যেন আমারই প্রতিবেশী

আমি যেন আমারই পরিত্রাণকারী;

প্রতিকূলতার ভেতর শোকাচ্ছন্ন হয়ে আছি!

 

ঘরময় এক শিলালিপিতে শুধুই নিয়মাবলী লেখা আছে

এ-এক অভিনব রাজত্বকাল,

কোনো এক প্রাচীন রাজ-অনুশাসনের অধীনে যেন একাকী থাকা!

মনে হয় পড়ে আছি-- মৌর্য আমলের

গহীন অরণ্যের লবণাক্ত অঞ্চলে!

 

 

টাইমটেবিলে মৃত্যু এখন

 

টাইমটেবিলে

          হুমড়ি খাচ্ছে মৃত্যু এখন!

সূর্যঘড়িতে--কালপঞ্জিতে

                 কী নিদানকাল!

 

ইহলীলা--দেহপাত--পটলতোলা

মরণদশা ও মরণকান্না,

                 কী মৃতকল্প!

 

ভূত ও পেত্নী, দত্যি-দানো, পিশাচ-পিশাচী

                  নাচছে এখন!

মদ চোয়ানোর কারখানার দখল নিয়ে

ভরিয়ে তুলছে মুত্যু এখন

               বোতলে বোতলে!

শুধু বোতলেই নয়--লেপ বালিশের খোল থেকে

নৌকার খোলও ভরিয়ে তুলছে!

 

ভূতে-পাওয়া ভয় গা ছমছম-

মৃত্যুও আজ করছে এতটা অপমান হায়

জানা তা ছিল না!

দুর্গতি-দুর্দশা নিয়ে মৃত্যু এখন

               --ছড়িয়ে পড়েছে!

মৃত্যু এতটা পরিস্ফুট ও অবারিত

সর্বনাশকারী ও লাঞ্ছনাদায়ক!

 

কী চক্র পেঁচিয়ে ধরছে কালচক্র!

 

 

স্পর্শকাতরতা

 

আজকাল দাঁতের ফাঁকেও কিছু একটা আটকে থাকলে

আর সহ্য হয় না!

                বেশ অস্বস্তি লাগে!

স্পর্শকাতরতায় অস্থির হয়ে পড়ি!

যা তা  কোনোকিছুকে স্থান দিতে পারি না এখন!

মাঢ়িও মাড়ির খপ্পরে পড়ে থাক--তা তো চাই না!

 

জাউ আটকে থাকে না--তরলেও না!

মাছও না--সবজিও না!

নিষিদ্ধ মাংস খেলেই ঝামেলা!

 

পাকস্থলির জিনিস দাঁতের গোড়ায় ও ফাঁকে আটকে থাকুক

তা তো সমীচীন নয়--

               তাতে দাঁতেরও ক্ষয়!

 

যতটুকু পারি দাঁত পরিষ্কার রাখি

সব কিছুই চিবুতে চাই না--গিলতে চাই না!

 

 

ঝাঁকের কই

 

ঝাঁকের কই, ঝাঁকে ফিরছে না, জলের

উচ্ছ্বাস নিজের ভেতর নিয়ে অন্যদিকে চোখ

রাখছে, অন্যদিকে যাচ্ছে! যে কই গড়পড়তার

বাইরে, সে একটু নিজের ওপর বিশ্বাস

বাড়ায়, দাঁড়ায়--স্বাধীনতা অর্জন করতে সাহসী

হয়ে ওঠে, সে-কারণে কানকো বন্ধক রাখে

না, ঝাঁকেও চলতে চায় না, ঝাঁকের কই ঝাঁকে

থাকে না!

 

 

অন্তর্বাস

 

জীবন অনেক সময়ে রূঢ় হয়ে ওঠে, আশীর্বাদ কোনো

কাজে লাগে না, প্রতিশ্রুতিতেও বিশ্বাস থাকে না,

বিজ্ঞাপনগুলো অক্ষরহীন হয়ে পড়ে, লাগে টাকা ও

পয়সা, এমন রিয়েলিটি অর্থবহ হয়ে ওঠে, মূল্যবান হয়ে

ওঠে; শেষতক জীবনের অর্থ পালটে যায়--গিরগিটির

রঙ পাল্টানোর মতন! মাথার উপর থাকা মাতব্বরও

কোনো কাজে লাগে না, তখন জীবনও বলে--জামাটা

পাল্টাও, অন্তর্বাসও!


1 কমেন্টস্:

  1. ভারি চমত্কার লেখা,বেশ ভালো লাগল। ভালো থাকবেন।
    বিমল চক্রবর্তী জামশেদপুর।

    উত্তরমুছুন