কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

রিমি দে

চিলিচিকেন   

      
ঙুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে হালকা হলদে রস প্রায় কনুইয়ের কাছে সেটা আবার চেটে খাওয়ার চেষ্টা চলছে প্রবলভাবে। মাথার ঝুঁটিটাও কালচে সাদা মেলে দুলছে। আসলে গ্রেভিটা একটু বেশি হয়ে গেছিলইনফ্যাক্ট রিদিমা ওরকমই রেঁধেছি্ল চিলিচিকেনটা তার অবশ্য কারণ রয়েছে। একে তো আনটাইমলি কুট্টির বাহানা,  দ্বিতীয়ত চিকেনের পিসগুলো যাতে একটু বেশি বয়েল হয়, সেজন্য করণগুঁড়ো গোলা লেবুজল বেশি ঢেলেছিল। যাতে পাশাপাশি একটু থকথকেও হয়কুট্টির তো আর মনে থাকে না যে বয়স বাড়ছেবুঝলাম, রুটক্যানেলিং করে দাঁত ঠিক করা হয়েছে, কিন্তু আরথারাইটিস! ইউরিক অ্যাসিড! এই দুটোর মেলবন্ধন যার একসাথে ঘটেছে তার তো অবস্থা কাহিল! কুট্টি কিন্তু দুটো রোগেরই শিকার। হতে পারে শ্বাশুড়িমায়ের  বোন। তাতে কী! তিন কুলে কেউ নেই। 

আরে ধর্মেরও ভয় করতে হয় কেয়ার না করলে চলবে! শ্বাশুড়ি কি ওপার
থেকে দেখছেন না! আসলে রিদিমাও কুট্টির ওপর ভীষণ দুর্বল
কুট্টি কত বলে - রিদি এট্টু খাওয়ায় দে না!
রিদি খুব কঠোর কন্ঠে - না। কেন না, শোন এবার বলি। একেই তো নড়াচড়া প্রায় করোই না। তার ওপর  যদি খাইয়ে দি, তবে তোমার আর তো কিছুই করার থাকবে না এই যে খাবার আগে বেসিনে গিয়ে হাত ধুচ্ছ, মুখ ধুচ্ছ, মুছছ, ডাইনিং- এ যাচ্ছ, এতে তো তোমারই উপকার হচ্ছে। বডি সঞ্চালনের প্রয়োজন আছে না!
কুট্টি ঠোঁটের কোণে হাসি লাগিয়ে বলে – হুঁ
রিদি বলল - তো খাও ভালো করে মেখে। আমি বসে আছি কুট্টি ঘাড় নামিয়ে খাবারে মনোসংযোগ করে। লাল সবুজ হলুদ ক্যাপ্সিকাম কুচিয়ে কাটা হয়েছে বলে আলাদা করা যাচ্ছে না সেগুলো। অথচ কুট্টি আলাদা ভাবে সেগুলোর স্বাদ নিতে চাইছে। দুটো হাতেরই আঙুলগুলো কিন্তু বেঁকে গেছে। ডান হাতেরটা একটু বেশি। একটি একটি করে হাড়হীন চিকেনের ছোটপিসগুলো মাখানো ভাত থেকে আলাদা করে একগুচ্ছ পাশে রেখেছে। বয়স খুব একটা বেশি নয়, কিন্তু রোগভোগে নিজের পর  নিয়ন্ত্র অনেকটাই হারিয়েছে কুট্টি অর্থাৎ মাসিশ্বাশুড়ি। ঘি রঙের ম্যাক্সি পরেছে। শাড়ি সামলানো কুট্টির পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না দেখে রিদি এই ম্যাক্সি পরানোর অভ্যেস করিয়ে ফেলেছে তাও তা নিয়ে কম জেদ করেনি! নিজের পেটের মেয়ের মতো অধিকার রিদির ওপর। বিয়ে করেনি। প্রাইমারি স্কুলে পড়াতদিদির কাছেই মানে রিদিমার শ্বাশুরির কাছেই বহু বছর থেকে। 
মাখাভাত মুখ থেকে পড়ছে। মুখের সামনে গুচ্ছ সাদা কোঁকড়ান চুল। টকটকে গায়ের রং। ঠোঁটের ওপর ও নিচে হলদে দাগ দাঁতের ফাঁকে থুতনিতে লাল-হলদে–সবুজ ক্যাপ্সিকামের খোসা লেগে আছে।

তিনটে চিকেন টুকরো মুখে পুরে দেবার চেষ্টা করল, একটা মুখে গেল, একটা
থালায় পড়ল, অন্যটা টেবিলের কোণে লেগে মাটিতে গড়াল। রিদিমা এমন একটা ভাব  করল, যেন বিষয়টা ওভারলুক করেছে! কুট্টিও বোকাবোকা মুখটা নর্মাল করে খাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল। মুখের কোণটাও ঈষৎ বেঁকেছে হলদে দাঁত, জিভ আর ঠোঁটের সাথে চিলি চিকেনের কুস্তি চলতে থাকে। বাঁকাঠোট, পেয়াজকুচি হালকা হলদের সাথে তিনরঙা ক্যাপ্সিকামের খোসা, লংকাকুচি আর হাড়হীন কুচনো মুরগী খেতে খেতে এবং ফেলতে ফেলতে বেঁকে যাওয়া মুখ বেয়ে যেন লালঝোল তেলমাখা কুট্টি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। কুট্টি থালায় চিকেন পিস হাতড়াচ্ছে। আবার হারিয়ে ফেলছে। আবার নাড়ছে। নিজেকেই যেন আর খুঁজে পাচ্ছে না। বিরক্ত হচ্ছে। খুশি হচ্ছে। মাথার ঝুঁটি দুলিয়ে খাচ্ছে। হালকা হলদে মুরগি যেন থালা থেকে খাবার ঠোকরাচ্ছে।  তারপর নিজেই উঠে ধীরে ধীরে খুঁড়িয়ে বেসিনে যাচ্ছে। যেন মুটিয়ে যাওয়া মুরগি। আবার ঠোকরাতে আসবে ডাইনিং টেবিলে হালকা হলদে খাবার খেতে ঘিয়ে রঙের পালকে নিজেকে মুড়িয়ে
খুদকুড়োর গন্ধে রিদিমার পেট গুলিয়ে আসে।

            


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন