কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

অশোক তাঁতী

ইদিপাস
  
-         কে?
এই ছোট্ট শব্দটা এত কঠিন হবে ভাবতে পারিনি। কিছুতে ‘কে’টা বলতে পারছি না। রবীন্দ্রনাথ প্ল্যানচেট করছেন। কেউ এসেছে বুঝতে পেরে তিনি প্রশ্ন করবেন – কে?
তিনি তীব্রভাবে আশা করেন কাদম্বরী দেবী আসবে। কোন্ গলাতে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন? দরজার বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, বোঝা যাচ্ছে না, জানতে চাইবেন? অথবা শান্তিনিকেতনি ঢঙে মৃদু মেদুর গলায় নিজের উচ্চারিত শব্দ কতটা কাব্যময় হবে জানার জন্য বাতাসে কানখাড়া করে নিজেকেই বলবেন, কে? অথবা সাংখ্যযোগ যেমন বলেছে, সমস্ত অজ্ঞতা দূর করতে হবে, তেমনি এক জ্ঞানী পুরুষের গলায় বলবেন, কে?
    তুই বললি - আমি মরে গেলে যখন তোর জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব আবছায়ায়, তখন তুই ঘুমের ঘোরে আমাকে ভেবে তীব্রভাবে যেমন উচ্চারণ করবি, ঠিক তেমনি
    আমি হো হো করে হেসে ফেললাম তোর গলাতে কি রাগ ছিল? বুঝতে পারিনি ছেলে দূরে চলে গেছে বলে তুই একা ছেলেরা বড় হলে দূরে চলে যায় বড় হয়ে গেলে ছেলের মাথা বুকের মধ্যে নিয়ে চুলের গন্ধ শোঁকা যায় না তাই ছেলের পাঠানো ছবি তুই আমাদের ফরোয়ার্ড করিস আমিও দেখি একসার মেরুন  টিউলিপ ঘন কোনও মনখারাপের চিহ্ন নেই ঝকঝকে নতুন - তুই কেন মেরুন লিপস্টিক পরিস না?
-         বরকে বললে তোকে এ্যায়সা পেঁদাবে, বুঝতে পারবি।
-         তোর বর কি যমরাজের পোষ্য?
তুই হিহি করে হাসতে হাসতে আমার গায়ে গড়িয়ে পড়লি। তোর এই হাসিটা  আমার অসহ্য লাগে। শিব্রাম চক্রবর্তীও কাউকে এত হাসাতে পারবেন না। কোথা  থেকে তোর মধ্যে মাঝেমাঝে এত হাসি আসে, কে জানে! আমার মনে পড়ল, 'নীলাম্বরী শাড়ি পরি, নীল যমুনায়, কে যায়'- জানিস এই গানটা গাওয়ার জন্যে  স্যার আমাকে বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল!
-         বেশ করেছে। অমন দাঁড়কাকের মতো চেঁচালে তাই করা উচিৎ।
- সেই স্যারকে একদিন বললাম, স্যার ‘কে’ শব্দটা কি ইদিপাস কমপ্লেক্স থেকে জন্মায়?
-         কে হচ্ছে ইতিহাস।
-         স্যার, ইতিহাস তো একদিন শেষ হবে।
-         ইতিহাস রোজ শেষ হয়। প্রত্যেক মুহূর্তে ইতিহাসের সমাপ্তি। ইদিপাস ইতিহাসের চরিত্র। তাই ইদিপাসও এক সময় শেষ হবে।
-         তারপর কী থাকবে, স্যার?  
-         ইতিহাসের শেষে শুধু ছাই থাকে না, টিউলিপও থাকে। 
তার মানে যে কি হলো, কেউ বলতে পারবে না। কোনও গল্প হলো না, স্বীকারোক্তিও হলো না। কাশ্মীরের গুলবাগে আকবরের পর আবার গোলাপ লাগানো  হয়েছে। বাগান জুড়ে ভুরভুরে আকবরি গন্ধ। আকবরের মাথায় একটা অদ্ভুত পাগড়ি ছিল।
সাধুবাবার মাথায়ও তেমনি পাগড়ি। টাক নয়, জটা ঢাকার জন্য। ধুনির সামনে বসে একদিন এক সাধুবাবাকে প্রশ্ন করলাম, কে?
তিনি চিমটেতে করে কিছু কাঠকুটো ধুনিতে ছড়িয়ে দিয়ে চিমটেটা আমার মাথার ওপর মেরে বললেন, যা বেটা!  
এর যে কি মানে দাঁড়াল, তাও জানি না। তবে আমার মনে হলো, বাবাকে দশ  বছর দেখিনি। মৃত বাবার কথা ভেবে দু'চোখ ছাপিয়ে জল। ছ’বছর আগে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়ে একটা ভার্টিব্রা ভেঙে এত কষ্ট হয় নি। বেঁচে থাকার কষ্ট যে এত আনন্দের, তা এই প্রথম জানলাম। মৃতদের ভালোবাসার গন্ধ বাতাসে রেণুর  মতো উড়তে থাকে।      
- তুই একদিন রেগে বললি, তোর সঙ্গে নাটক করতে চাওয়াটাই ভুল হয়েছে।
-         আমি কি একদম পারছি না!  
-         তোর মধ্যে বড় দ্বিধা, দ্বন্দ্ব। মনটা পরিষ্কার কর। 

   - তুই কি কিছু মনে করবি, যদি তোর বুকে মাথা রেখে প্রশ্ন করি - কে? 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন