কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রণব চক্রবর্তী

 

সমকালীন ছোটগল্প


ঈগল ও সাধুবাবার বচন

ঈগলের ঠোঁট হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ভ্যাবলা। এই একমাত্র টোটকা দিয়েই পাঁচীকে এমন করে তার সাথে সাঁটিয়ে দেবে, পাঁচীর সাত পুরুষের ক্ষমতা নেই লটবট করে। সাধুবাবা বচন দিয়েছে। আর সাধুবাবার বচন মানে বচন। কানাগাবলার বাপ সেদিন এক বচনে ডগা ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলো, নিজের চোখে দেখেছে সে। সাধুবাবার গাঁজার এমন তেজ, প্রসাদের ছিলিমে একবার কলজে জুড়লেই কান-মাথা ধাঁ হয়ে যাবে। কানাগাবলার বাপও সেদিন বচন নেবার আগে বাবার গাঁজাপ্রসাদ পেয়েছিলো। সাধুবাবার বচন নিতে সেই বাউড়ী পাড়া থেকে ঘাবলা মেয়েছেলে অই ঘুটঘুট অন্ধকারে অত রাতেও এসে সাধুবাবার উড়ু ছুঁয়ে কেতড়ে বসে থাকে। বাবার ছিলিমে সে রাত্রে বারদুয়েক টান দিয়ে ভ্যাবলা আর জেগে থাকতে পারছিলো না। যোগনিদ্রা থেকে বাবা সেদিন তার উদ্দেশ্যে ঈগলের ঠোঁটের বচনটা বার করতেই, সে সেই বচন প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়েই ধাঁ কোরে বেড়িয়ে এসেছে, কারণ তার নেশা জমে খুলিতে ঈগলের ঠোঁট খোঁচাতে শুরু করেছে। কী গাঁজা, আহা, তা নইলে ওসব ডাকিনী যোগিণী দলাই মালাই কোরে সরাসরি ক্ষেপীমা-র সঙ্গে কানেক্ট করা যায়! যোগনিদ্রায় সাধুবাবা সব টের পায়। সেই মাগী ওখানে আসবার আগেই বাবা ভ্যাবলাকে বলে রেখেছিলো, এখানে এক ডাকিনী, মেয়েছেলের রূপ ধরে আসছে, তোর বচনটা ক্ষেপীমা আমাকে জানিয়ে দিলেই আমি বলে দেবো, সেটা পেয়েই তুই এ তল্লাট ছেড়ে চলে যাবি। পেছনে তাকাবি না। সাধুবাবার কথামতোই সেই বাউড়ী পাড়ার মেয়েছেলেটা ওখানে এসে ঢুকেই বাবার উড়ু ছুঁয়ে বসে পড়লো। ভ্যাবলা উঠে পড়তেই সাধুবাবা একটুও দেরী না করে সেই ডাকিনীকে বাঁ হাতে টেনে নিয়ে চিৎ কোরে তার কোলে শোয়ালো। সাধুবাবার কথামতো ভ্যাবলার আর পেছনে তাকানো বারণ। তার সামনে বিপুল অন্ধকার আর সেই অন্ধকারে দুলে দুলে উঠছে এক টুকরো ঈগলের ঠোঁট, কিন্তু ভ্যাবলা সেটা ধরতে পারছে না। হাঁটতে হাঁটতেই তার হঠাৎ মনে হলো অন্ধকার ভেদ কোরে দ্রুত গতীতে চারদিক থেকে উড়ে আসছে অনন্ত ঈগল। তাকে ঘিরে ধরে তীক্ষ্ণ ঠোঁট তার দিকে তাক কোরে বৃত্তাকারে তারা ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতেই ক্রমেই ঘিরে ধরছে তাকে, তাদের তাড়াতে সে নিজেও উন্মাদের মত ঘুরতে থাকে। ঈগলেরা তাদের ক্ষুধার্ত ঠোঁট দিয়ে এবার তাকে কামড়ে ধরে গলার সমস্ত নালী শিরা উপশিরা। সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, ঈগলেরা খুবলে খাচ্ছে তার মাংস, তার হৃৎপিণ্ড, তার মূত্রনালী, তার অণ্ড, গুহ্যদ্বার-- সব... সবখানে ঈগলের ঠোঁটের তীব্র হামলা। ছিঁড়ে খুবলে নিচ্ছে তার চোখ, পাকস্থলী। সে বাধা দিতে পারছে না। অন্ধকারে এক অসম যুদ্ধে সে ক্লান্ত হয়ে ছিটকে পড়ে। সে শুধু বুঝতে পারে সে মরে যাচ্ছে।

চোখেমুখে তীব্র জলের ছিটে আর হাত পায়ের ঝাঁকানি টের পেয়ে যখন তার চোখ খোলে, দেখে সামনে লঙ্গোটি পরা সাধুবাবা দাঁড়িয়ে আছে। সে দেখতে পায় কারণ তার চারপাশে এখন তেমন ঘন কোনো অন্ধকার নেই। ধীরে ধীরে মনে পরে অন্ধকারে সাধুবাবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসা, ঈগলের ঠোঁট, বাউরি মেয়েছেলেকে সাধুবাবার কোলের উপর চিৎ কোরে টেনে নেয়া-- সব কিছু। ভ্যাবলা বুঝতে পারে গাঁজার নেশায় সে আর ঘরে ফিরতে পারেনি, পড়েছিলো এই রাস্তাতেই। কিছুটা উঠে বসতে গিয়েই চোখে পড়ে একটু দূরেই সেই মেয়েছেলেটা কাপড় তুলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পেচ্ছাপ করছে। তার মানে এ মেয়েছেলে কাল রাতে সাধুবাবার সাথেই রাত কাটিয়েছে। ওদের আবার কী! খানকীবাজী করেই তো পেট চালায়, সাধুবাবাও কাল ডাকিনী কচলেছে সারারাত। লাজলজ্জা বলে কিছু নাই, দুজন ব্যাটাছেলের সামনে দাঁড়িয়ে কাপড় তুলে ওভাবে কোনও মেয়েলোক মুততে পারে! ভ্যাবলার মটকা তেতে ওঠে। চড়াৎ কোরে উঠে দাঁড়ায়। সাধুবাবার সামনে একটা পেন্নাম মেরে ভ্যাবলা বলে বসে, মাগীটাকে বলো না আজ রাতে যেন আর একবার তোমার ওখানে আসে। কাল তুমি চেরাই-ফাটাই করেছো, আজ না হয় আমি করবো! সাধুবাবা কথাটা শুনেই বলে, করবি যে পয়সা আছে! ভ্যাবলা বলে, সে নাহয় ৫-১০ টাকা জোগাড় কোরে নিয়ে আসব। সাধুবাবা বললো, অত কমে দেবে না, একরাত কাটালে পুরো ৫০ টাকা নেবে। ভ্যাবলা বললো, তুমি একটু কায়দা কোরে বলো না ওকে একটা বচন দেবা, আজ রাতে আসতে হবে। তারপর একটান গাঁজা মারিয়ে আমার সাথে তোমার তাঁবুর ভেতরে ঢুকিয়ে দেবা। ব্যাস, বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নেব। আমি তো আর একবারের বেশি টানতে পারব না, বাকি রাত তো তোমারই থাকবে একেবারে উদোম। সাধুবাবা একবার ভ্যাবলাকে একঝলক দেখে, মেয়েছেলেটাকে হাতের ঈশারায় ডেকে সামনের দিকে এগোতে থাকে। কিছুটা গিয়ে থেমে, পেছন ঘুরে বলে, রাতে একবার আসিস। মালিশ দিয়ে দেব। তারপর ভোরের রাস্তায় এগিয়ে যায় খড়মের বাড়ি মারতে মারতে। ভ্যাবলা মনে মনে ভাবে, সে সাধুবাবার চ্যালা হয়ে সব নক্সা-ফক্সাগুলো শিখে নেবে, নিয়ে নিজেই সাধুগিরি করে গাঁয়েগঞ্জে ঘুরে বেড়াবে।

সে সব তো হয়ে ওঠার কথা ভবিষ্যৎ জানে। আপাতত ঈগলের ঠোঁট। ভাবতে ভাবতে ঘরের দিকে এগোতেই শুনতে পায় লোকজন এদিক সেদিক ছোট ছোট জটলা কোরে কি সব কানাঘুষো করছে। তার দু-একজন বন্ধু-বান্ধবও এদের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তাকে দেখেও কেউ ডেকে কথা বলছে না। কি ব্যাপার! ভ্যাবলা নিজেই এবার পাঁচীর ভাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে রে? আমাদের এদিকে কিছু হয়েছে নাকি? ছোট ছেলে লাফাতে লাফাতেই বলে বসে, আমার পাঁচীদি মরে গিয়েছে। গলায় দড়ি লাগিয়ে কেমন ঝুলে আছে দেখোগে। মানে ! ছেলেটা আর কোনো উত্তর না দিয়ে লাফাতে লাফাতেই অন্যদিকে চলে যায়। ভ্যাবলা প্রায় ছুটেই পাঁচীদের বাড়ীর দিকে যেতে গেলে সামনে এসে হাতকাটা হারু এসে দাঁড়িয়ে বলে, কোথায় যাচ্ছিস? ভ্যাবলা বলে, পাঁচীকে দেখতে। হাতকাটা হারু বলে, একদম ওদিকে যাস না। হাবিলদার তোকে দেখলেই ধরে নিয়ে যাবে। কথাটা বলেই হারু তাকে ডেকে নিয়ে একটা দরমার ঘরের আড়ালে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, কাল রাতে পাঁচীকে বাড়ীর পেছনের মাঠে একা পেয়ে, বোধহয় হাগু করতে গিয়েছিলো, তাকে ধরে মুখ বন্ধ কোরে কেউ এমন কোরে ঠাপিয়েছে, একেবারে রক্তারক্তি ব্যাপার। ঘরে আসতে দেরী হচ্ছে দেখে, ওর বাপ খুঁজতে গিয়ে, ওভাবে দেখে ওর বেহুঁশ শরীরটা তুলে নিয়ে আসে। অনেক পরে নাকি ওর হুঁশ ফিরে আসে। গা-গতর ধুয়ে টুয়ে ওরা সবাই রাতের মতো শুয়ে পড়ে, সকালে উঠে খোঁজখবর করবে ভেবে। ভোরবেলা পাঁচীর বাবা মাঠ দেখতে বেরিয়ে পরে, সেই ফাঁকে পাঁচী উঠে নাকি চালের বাঁশের সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে ঝুলে পড়েছে। কেউ কেউ কানাঘুষো করছে, খবর নিয়ে নাকি জেনেছে তুইও কাল রাতে বাড়িতে ছিলি না। পুলিশে কে খবর দিয়ে দিয়েছে, হাবিলদার এসে সব দেখে গেছে, বোধহয় তোর নামেও কেউ নালিশ করেছে। ভালো হবে তুই এখান থেকে এখন কেটে পড়লে। তারপর আমরা হাবিলদারকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলবো, ভ্যাবলা এটা করতেই পারেনা, কারণ সে পাঁচীকে ভালোবাসতো আর তাকে সে বিয়ে করতে চাইছিলো। শোন ভ্যাবলা, এ গাঁয়ে আমাদের অনেক শত্রু আছে, মাঝেমধ্যে টাকাপয়সা চাই বলে আমাদের ওপর অনেকের রাগ আছে, তারাই তোকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে বোধহয়। তুই সাধুবাবাকে বলে একটা বচন নিয়ে এদের থামানোর ব্যবস্থা করিয়ে নে। এখন এখান থেকে কেটে পর।

ভ্যাবলা আর কথা না বাড়িয়ে, যে পথ দিয়ে এদিকে এসেছিলো সে দিক দিয়েই একটু আড়ালে আড়ালে গাছপালার ফাঁক খুঁজে নিয়ে সাধুবাবার তাঁবুর কাছে এসে সোজা তাঁবুর ভেতরে ঢুকে যায়। বাবা তখন পুকুর ডুবিয়ে এসে চুলদাঁড়িতে জমিয়ে চিরুনী মারছে। একটু পরেই আশপাশের গ্রামগুলো চড়ে চালকলামূলো টাকাপয়সা যেখানে যা পাবে ঝোলায় ভরে নিয়ে আসবে। ভয়ে প্রায় হাতপাগুটোনো ভ্যাবলা হাতকাটা হারুর কাছে যা যা শুনেছিলো সব সাধুবাবার কাছে উগড়ে দেয়। সাধুবাবা সব কথা শুনে ভ্যাবলাকে বলে, তোকে আর ঈগলের ঠোঁট জোগাড় করতে হবে না, ঈগল নিজেই তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সাবধানে থাকবি। আর এই কথার মাঝখানেই তাঁবুর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে এক বিশাল চেহারার দাঁড়িয়াল ব্যাটাছেলে। ভ্যাবলা একবার তাকিয়েই বুঝতে পারে এ হচ্ছে এই দিগড়ের কুখ্যাত ডাকাত মেরকাশেম মোল্লা। কিন্তু সাধুবাবার তাঁবুর ভেতর সে কী করছিলো সেটা ভাববার আগেই ডাকাত মেরকাশেম কাঁধের গামছা দিয়ে মুখটা ডলতে ডলতে বলে, এটা আবার এ সকালে এখানে কী করতে এয়েচে? হাবিলদারের খোচর নয়তো? সাধুবাবা চুল সাইজ করা থামিয়ে দিয়ে বলে, এ আমার চ্যালা। ওর পছন্দের মেয়েছেলেকে কাল কে খুবলে খেয়েছে, সেই লাজে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে গিয়েছে সেই মেয়ে। পুলিশ এখন একে খুঁজছে ধরবে বলে। মেরকাশিম বলে, হায় আল্লা, কার দোষ কার ঘাড়ে গিয়ে পড়লো গো! অমন ডাঁশালো একটা মেয়ে মরি গেলো! সাধুবাবা বললো, সে তুই আর কি করবি, তুই তো আর তাকে মরতে বলিস নি, সে নিজেই মরেছে। মেরকাশিম ভ্যাবলার মাথায় হাত দিয়ে বললো, দুক্কু করিস নি রে, একটা গেলো তো কি হোলো, কত মেয়েছেলে আচে। তাঁবু থেকে বেরোতে বেরোতে মেরকাশেম বললো, আমার কি দোষ, বচন পেয়েছি কাজ নামায়ে দিয়েছি। চলি গো সাধুবাবা, আবার কাজ পেলে ডেকো। সাধুবাবা শুধু বলে, শালীকে একবার পাঠিয়ে দিস মনে করে, কাজ কোরে চলে যাবে। মেরকাশেম হাত নেড়ে চলে যায়।

মেরকাশেম আর সাধুবাবার সব কথাবার্তা শুনে ভ্যাবলার মাথায় কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। সবকিছুর মধ্যে যেন কিসের একটা তালমিল খুঁজে যাচ্ছে সে। হঠাৎই সাধুবাবা ভ্যাবলার দিকে তাকিয়ে বললো, নে, ছিলিমটা জ্বালা তো, একটা টান মেরে বেরোই, তুই তাঁবুর মধ্যে গিয়ে বসে থাক। আঁধার নামলে বাইরে বেরোবি। হাবিলদার খোঁজ করতে এইদিকে এলে কোনো সাড়া দিবি না। ভ্যাবলা হাবিলদারের কথা শুনে ছিলিমটায় ঝেড়ে দুটো টান দিয়ে সাধুবাবার হাতে তুলে দিয়ে প্রায় ছুটেই তাঁবুর মধ্যে ঢুকে যায়। সাধুবাবার উদ্দেশ্যে শুধু বলে, তুমি তাড়াতাড়ি ফিরবে তো! সাধুবাবা বলে, হ্যাঁ ফিরবো তো বটেই, তার আগে ঈগল গুলোকে একটু শান্ত কোরে আসি। না হলে তো তোকেও পাঁচীর কাছে পাঠিয়ে দেবে। তুই ভাবিস না, পাঁচী এখনও তোকে ছেড়ে চলে যায় নি, ঘরে গিয়ে শুয়ে থাক, দেখবি পাঁচী তোকে গরম কোরে দিয়ে যাবে। ওকে তাড়াবি না, যা কোরতে বলবে সব কোরে দিবি। সাধুবাবার কথাগুলো শুনতে শুনতে ভ্যাবলার যেন ভয়ে চোখ দুটো ঠেলে বেরিয়ে আসবার অবস্থা। সাধুবাবা চুল ঝাড়া দিয়ে বলে, এই তাঁবু ক্ষেপী-মা পাহারা দেয়, তোর কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। যা বললাম সে রকম করবি। পাঁচী এসে তোকে ন্যাংটা করে দিলে, তুইও তাকে ন্যাংটা করে দিবি। নে, আর এক টান মেরে দে, শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে। সাধুবাবার কথামতো ভ্যাবলা ছিলিমটায় আরও এক টান মেরে দিতেই তার মনে হয় পাঁচী যেন তাকে তাঁবুর ভেতর থেকে ঈশারা কোরে ডাকছে আর সাধুবাবা একটা লাঠি দিয়ে ঈগল তাড়াতে তাড়াতে বেরিয়ে যাচ্ছে কাঁধে ঝোলা ঝুলিয়ে। চারদিকে কোন কিছু নেই আর। সে অন্ধকার তাঁবুর ভেতর ঢুকে যায় যেখানে বিচুলির ওপর কম্বল ফেলে ছড়িয়ে আছে সাধুবাবার বিছানা। কিন্তু পাঁচী যে হাত নেড়ে তাকে ডাকলো, চারদিক খুঁজতে খুঁজতে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। একসময় হামাগুড়ি দিতে থাকে পুরোটা বিছানা। কতক্ষণ জানেনা, হঠাৎই মনে হলো খুব গরম এক নরম শরীর তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে চিৎ কোরে ফেলে খুব আদর করছে। ভ্যাবলা আপন মনে বলে যাচ্ছে, পাঁচী আমি ঈগলের ঠোঁট খুঁজতে বেড়িয়েছি, তোকে আমি নিয়ে যাব আমার ঘরে। সে টের পায় সেই নরম হাতদুটো তার গায়ের সব পোষাক খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে, তার বুকের ওপর গিঁথে বসে যাচ্ছে মেয়েছেলের মতো এক উষ্ণ শরীর। তার গলা চিরে শুধু বেরিয়ে আসছে মাঝে মাঝে আর্ত শীৎকার। সে আপন মনে পাঁচী পাঁচী বলে জড়িয়ে ধরতে চাচ্ছে সেই মেয়েছেলের শরীর। কিন্তু তুলতে পারছে না তার হাত দুটোকে। তারপর সব অন্ধকার। যখন হুঁশ ফেরে ভ্যাবলা টের পায় অন্ধকার বিশাল গর্তে সে ক্লান্তিহীন সাঁতরে চলেছে। পাঁচী নেই, ঈগলের দেখা নেই, কেবল তার দুই জানুর ফাঁকে শুয়ে আছে এক নগ্ন মানুষী আর তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে ভ্যাবলা। বাইরে সাধুবাবার গলা চেঁচিয়ে কাউকে যেন বচন দিচ্ছে, ঈগলের চোখ তুলে নিয়ে আসতে পারলে তবে তোর বিপদ কাটবে। যাঃ, ঈগলের চোখ নিয়ে আয়...



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন