কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৪ |
গন্ধা
এক আর আট যোগ করে ন’নম্বর মাস।
সেদিন বিশ্বকর্মা। আকাশ জুড়ে ঘুড়ি ছিল কিনা জানি না, তুমি ছিলে। আর তোমার ফর্সা পা
দুখানা। ক্লান্ত মিছিলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে আসা তোমার জিজ্ঞাসু পা, যে পায়ে আলতা পরে
দাঁড়ালে মনে হত দেবীপক্ষ এসেছে, এবার চুমু খেতে হবে। যে পায়ে ভর দিয়ে তুমি দৌড়ে এসেছিলে,
আবার কখন রোদ মুছে চলে গেছিলে, বুঝিনি। তুমি গুটিপায় এসে প্লাটফর্মের বাইশনম্বর বেঞ্চে
বসলে, ঠিক আমার পাশে, মাঝে জবাবহীন দু’সপ্তা। পুরো স্টেশন ফাঁকা, খাঁ খাঁ। আমার চোখে
চোখ রেখে তুমি তাকাতে পারছিলে না, ডাকতেও পারছিলে না। তোমার শক্তি শেষ। ইচ্ছে হল, সন্ধের
কুয়াশ এসে যেভাবে মাটির ওপর পুরুষালি চেপে শোয়, সেভাবে তোমায় নিচে রেখে ওপরে শুয়ে তোমায়
পিষে দিই, দুভাঁজ ভালবাসায়। নিশ্চই আমার চুপচাপ কথাগুলো তোমার বুকে অদৃশ্য ইথারে, নইলে
এতক্ষণ পরে আমার দিকে এভাবে তৃষ্ণার্ত তাকালে
কেন? এর জবাব দিতে তুমি ভয় পাও, আমি জানি।
আচ্ছা, মানুষের জীবনে খানা জাংশন
এত দেরিতে কেন আসে?
সকাল থেকে খাবার জোটেনি, শুধু মাঝে
মাঝে মদ জুটেছে। চিৎ হয়ে শুয়ে দুপুর ফোটাব ভাবছি, তখন তোমার ফোন এল। কেউ কেউ বলে, শিমূলের
ডাক, কেউ বলে সর্বনাশের। আমি শুধু এটাই জানি, গন্ধার ডাক, আমার গন্ধা। তুমি ডাকলে আমি
না এসে থাকতে পারিনা। হট্টগোলের মাইক থেকে ট্রেনের হুইস্ল হয়ে এই চুপচাপ স্টেশন অব্ধি,
ভাঙা জার্নি। ওদিক থেকে যখন শব্দ ভাসে, হালকা গোলাপি ঠোঁটে একটা পাপড়ি চড়তে শুরু করে।
আমায় খোঁজে। আমি ফুঁ দিলে উড়ে যায়। সামনে দুচোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার গন্ধা। আর দূরে
ট্রেন চলে যাবার শব্দ মিলিয়ে যায়। খেতে শুরু করলাম, তুমি মুড়িঘন্ট এনেছ।
আচ্ছা, কাল রাত্তিরে তুমি আমার
ওপর রাগ করে ঐ ঠোঁটে সিগারেট কেন ধরিয়েছিলে?
হাতে হাত রেখে মৃদু চাপ দিলাম।
হয়ত একটু জোরে। তুমি তাকালে। ডাকলে আসো না কেন? তোমাকে কি রোজ ক্রেসকোগ্রাফে আমার বিক্ষেপগুলো
দেখাতে হবে? আমাকে এড়িয়ে চলতে চাইলে কেন বাইশ ভালবাসো? শপথ নিতে কেন ভয় পাও যে তুমি
শুধু আমার? তোমায় কি আজো মাংসকাটা ঘরে গিয়ে অপারেশন টেবিলে উঠে কম্প্রোমাইজ করতে হয়?
ইচ্ছে হচ্ছে এবার বসন্তে তোমার ঝর্নাগায়ে চেরি ফোটাই। গলার মুক্তোগুলো ছিঁড়ে ঘরভর্তি
ঝরে পড়ার শব্দ লিখি।
আমি কি এক মৃগমানবীর কাছে জলের
মত সৎ নই?
বহুক্ষণ। কিন্তু এখনো দুজনেই চুপ,
মুখ থেকে কেউ শব্দ খরচ করিনি। প্রতি প্রশ্ন লাবডুবে ভাসছে। ফাঁকা প্লাটফর্মে কয়েকটা কাককে সাক্ষী রেখে বাঁ হাতে তোমার
ঠোঁট চেপে ধরলাম। ডানহাত এখনো খালি। ওহাতে আমার রাগ ঠোঁটে লিখতে ইচ্ছে করছে, শব্দ খুঁজছি।
যে পাগলের কাছে তুমি বেদ, তাকে আশ্রয় দাও, প্রশ্বাস দাও। হালকা গোলাপি ফাটা ঠোঁট এখনো
ছাড়িনি, বুঝতে পারছি তোমার লাগছে।
-রোজ এত কষ্ট দাও কেন?
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন