কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

মিষ্টি মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৪


অভিমিস্ট

 

‘বউ কথা কও...বউ কথা কও’ ফোনের ওপার থেকে আসা ‘মউ’-এর মত নামটা শুনে রিতুর ওটাই মনে  আসে। ফোন রেখে ভাবে এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লেখা দরকার। কিন্তু লিখবেই বা কী? আসল অনুভূতি পাতায় চলে এলে ধরা পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। টেলিফোন লাইনটা যে ডুপ্লেক্স... উভয় দিকেই মনের ভাব আদান প্রদানে সক্ষম। অগত্যা ওগুলো এখন মাথার ডার্করুমেই থাকুক, পরে ভাবনার রসে জারিয়ে নেগেটিভগুলো ডেভেলপ করা যাবে। ম্যাট? গ্লসি? দেখা যাবে।

আজ সকালটা অদ্ভুত। অন্যরকম। কেমন যেন কিছু হারিয়ে যাওয়া এক সকাল। সামনে কাগজ পেন। পাশের খোলা জানলা দিয়ে সকালের নরম আলো। রবিবারের স্টিল সিটি অন্যদিনের তুলনায় একটু যেন শান্ত। ছেলে সেন্টারে চলে গেছে। এই ভাড়াবাড়ির ১০ বাই ১০ পরিসরে রিতুর হাতে আজ তিনঘন্টার কাজ ছাড়া আনকোরা ক্যানভাস। ইচ্ছে করে এই অখন্ড অবসরে সমস্ত দেহ মন জুড়ে ‘অভিমিস্ট’ মাখতে। সত্যিই কি একটা গাছ হওয়া যায় না? বাড়ন্ত গাছ, যে গাছ একদিন আশ্রয় দেবে, শাখা প্রশাখার ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখাবে, রাতের আকাশে সপ্তর্ষিমন্ডলের অচেনা টিমটিমে কোন তারা চেনাবে। অবাক লাগে মাঝে মাঝে – এত দুর্যোগ, এত বৃষ্টি, কিন্তু তাও তো অভিকর্ষ কমে না! বরং বাড়ছে দিনে দিনে। ফিজিক্স বইতে কোন্‌ পাতায় যেন লেখা ছিল... ৯.৮ মিটার পার সেকেন্ড স্কোয়ার, যা মেরুর দিকে গেলে বেড়ে চলে। ভালবাসা তাহলে মেরুর দিকে বেশি! পৃথিবীর আশ্চর্য নিয়ম, শ্রেষ্ঠ মানুষটা আকূল হয়ে আশ্রয় চায়, সেই মুহূর্তে তার সব অহং মুছে যায়, ভুলে যায় তার অভিত্ব, হাঁটু মুড়ে বসে দু’হাত পেতে বাচ্চার মত বলে ‘আশ্রয় দাও’। গাছটার গা বেয়ে নামছে হালকা কুয়াশা। গাছটা তাহলে চারাগাছ হল না কেন? বেড়ে উঠত অভিমিস্ট মেখে, দুদিকের আশ্রয় হয়ে। যে চারাগাছের প্রার্থনায় ইস্কনফেরৎ অভি আজো রিতুর কাঁধে আব্দারে মাথা ঠোকে, পারা-নাপারা-র দোলায় রিতুর অঙ্গ অবশ হয়ে আসে।

রিতু প্রগ্রেসিভ লেন্সের চশমা খোলে। আজ শেকড় অনেক গভীরে ঢুকে গেছে, যে শেকড় ছিঁড়তে গেলে, কে জানে, গাছটা আর বাঁচবে কিনা! ‘কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে’। যদি একটা  টাইমমেশিন পাওয়া যেত, যে এক ঝটকায় কুড়ি বছর পিছিয়ে দিত? ‘এল সময় রাজার মত...’। নাহ, সময় এগোচ্ছে। রিতু খোলা চোখে গুনগুনিয়ে ওঠে, ‘তেরে বিনা জিন্দেগী সে কোই, শিকবা তো নেহিঁ’।   

আর বউ কথা কও...? ও কি পারবে মউ থেকে মৌটুসি ছুঁয়ে সেই আশ্রয় হয়ে উঠতে? অনেক দূরে কে যেন হেমন্ত পেরনো সুর লাগিয়েছে... রহে না রহে হাম, মহকা করেঙ্গে, বন্‌কে কলি, বন্‌কে সবা, বাগে বফা মেঁ… 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন