কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস

 

সমকালীন ছোটগল্প


বসুমতী শস্যদেবী

 

অবশেষে খুঁজে পেতে পাঁচটা দুর্গা পাওয়া গেলো। এরা সকলেই শুকিয়ে যাওয়া দিঘির কালো জলকে আয়না করে মুখ দেখছে। এই পর্যন্ত বলে ছবি আঁকিয়ে বিজনকুমার সেন আমার মুখের দিকে তাকালেন।

সারারাতের হিমের ভারে গাছের পাতাগুলো মাটির দিকে অবনত। আর আমি? আমি তখন স্নান করে পট্টবস্ত্র পরিধান করে মাতা বসুমতীর চরণে স্নানের নিমিত্তে জল ঢালছি। বলছি, ‘ওঁ নমঃ বসুমতী চরণায় নম। ওঁ নমঃ মাতা ধরিত্রী দেব্যায়ই নম নমাহঃ...’

নিমগ্নতাই শিল্পের নিয়ম। সেই হিসেবে বিজন সেন তাঁর চক্ষু ব্যতিরেকে আর  বাদবাকি সমস্ত ইন্দ্রিয়াদি বন্ধ রেখেছেন তার দীর্ঘ অভ্যাস কৌশলে। আমি তাঁর নিবিষ্ট ভক্ত হিসেবে কিছুদিন থেকে চেষ্টা করে চলেছি ইন্দ্রিয় সকলকে বশীভূত করে রাখতে।

চিৎকারটা বেশ জোরেই হচ্ছে। বুঝতে পারছিলাম যে, এই শরৎকালেও গ্রীষ্ম সদৃশ প্রচন্ড তাপপ্রবাহে ভূমি ফুটিফাটা হচ্ছে।

মাটিতে জল ঢালছি। সব জল মুহূর্তে শুকিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবুও জল, আরও জল !

শব্দটা কাছে চলে আসলো। একেবারেই কাছে! আর কী আশ্চর্য রকমের দেখতে  এক দুর্দমনীয় ইচ্ছাসুর ফেটে ফাঁক হয়ে যাওয়া মাটির গভীর থেকে বেরিয়ে এসে আয়নায় মুখ দেখা পঞ্চ দুর্গাদেরকে অতর্কিতে আক্রমণ করলো।

ইচ্ছাসুরের সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগলো! দিগ্বিদিক জ্ঞান হারানো সে এক  সাংঘাতিক শরীর। সারা দেহময় অহঙের বিধ্বংসী আগুন জ্বলছে। সে নিজে পুড়ছে না। অথচ, অন্য কিছু পোড়াচ্ছে। বাতাসে শস্য পোড়া ঘ্রাণ নাকে ভেসে আসছে।

বেশ বেড়ে যুদ্ধ লেগেছে জেনেও আমি না দেখার ভান করছি। কিন্তু অভ্যাসক্রিয়া যোগে যুক্ত হওয়া আমার খুব বেশিদিন হয়নি। তাই, বারবারই চোখ চলে যাচ্ছে অন্যদিকে, যেদিকে বিজন সেনের দুর্গাগুলো কালো দিঘির জলকে আয়না করে মুখ দেখছে।

আমি প্রত্যক্ষ করলাম - পার্বতী, শিবানী, উমা, কাত্যায়নী ও বিশ্বেশ্বরীদের একত্রিত হওয়া দশটি হাতের মোড়ক থেকে খুলে যাওয়া দশাস্ত্রের আঘাতে অন্ধকার হয়ে গেলো ইচ্ছাসুরের শরীর। ধীরে ধীরে কুপিত সেই দগ্ধ হয়ে যাওয়া শরীর জুড়ে দেখা গেলো বিশেষ কুক্ষিগত অর্থনৈতিক অঞ্চল।

আমি তখনও, এখনও, প্রতিদিন স্নান করে পট্টবস্ত্র পরিধান করে মাতা ধরিত্রীর উদ্দেশ্যে ভূমিতে জল ঢালি আর বলি, ‘ওঁ নমঃ বসুমতী শস্যদেবী নম নমাহঃ...’

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন