কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

প্রশান্ত গুহমজুমদার

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১২


শালুক

কাল দুপুরে কোদালটা এখানেই তো রেখেছিল! গেল কোথায়! আবাসনের গার্ড তো দিব্বি ঘুমচ্ছে। শালা আছে ভালো। নাঃ, ওর কাছে কোন খবর পাওয়া যাবে না। দিনের আলো এখনো ঠিকঠাক এই ভিতরে আসেনি। আলোটাও জ্বলছে না। বাধ্য হয়ে অন্ধকারের মধ্যেই রামু এদিকওদিক খুঁজতেই চোখে পড়লো। একরাশ ঝুল আর মাকড়সার জালে জড়িয়ে। কে বা নিয়েছিল! এখানে ফেলে রেখে  গেছে। কাজের জিনিসের কোন অবহেলা ওর সহ্য হয় না। এই সাতসকালে  এসব দেখে ওর মাথা আবার গরম হয়ে গেল। এমনিতেই রাত্রে পুনুর সঙ্গে তুমুল কিচাইন হয়ে গেছে। পুনু মানে পূর্ণিমা। ওর সাধের বৌ। পুনুর সব ভালো, কিন্তু রামুর মদ খাওয়া একদম বরদাস্ত করতে পারে না। ওই সুন্দর মুখটা তখন হাঁড়িপাতিলের মতো কালো আর মুখে একেবারে কেচ্ছাকেলেংকারি। আর সহ্য করতে না পেরে মদের ঘোরে দিয়েছে দু’ঘা। আরে তাদের ডোমপাড়ায় বাংলা  খাওয়া তো জলভাত! রামু তো কেবল মাঝেমধ্যে একটু আধটু খায়। গণেশ চতুর্থীর লেজ ধরে কাল রাতে খানাপিনার ব্যবস্থা করেছিল ওর বন্ধুরা। ওরাই জোরজার করে। তাতেই এতসব। পুনু খুব কেঁদেছিল। রাত্রে বোধহয় মুখেও কিছু দেয়নি। এই ভোরে রামুর এখন খুব খারাপ লাগছে। গলিটা থেকে সব আবর্জনা কোদাল দিয়ে তুলে দু’চাকাওয়ালা ডাস্টবিনে রাখছিলো আর পুনুর মুখটা মনে পড়ছিল। ধুস্‌ কাল শালা ফালতু হুজ্জুতি হয়ে গেল। ঘরে ফিরে ম্যানেজ করতে হবে। বাপ-মা মরা মেয়ে। রামুর বাপ এই কাজই করতো। মদ খেয়েই মরেছিল। রামুর মামারাই উদ্যোগ করে গত বছর অঘ্রাণে বিয়েটা দিয়ে দিল। পুনুর মুখটা খুব মিষ্টি। শরীরও চাবুক। স্নান করে এলোচুলে যখন সামনে আসে, রামু হাঁ হয়ে যায়। তার কপালে এমন! নাঃ রামুর এখন খুব খারাপ লাগছে। হঠাৎ চোখে পড়ল রাস্তার মাঝখানে একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন। রক্তে মাখামাখি। আরে বাবা, একটা ক্যারিব্যাগে জড়িয়েও তো এই ডাস্টবিনে ফেলা যায়! কুকুরে তাহলে এমন করতে পারে না। ঘেন্নার মুখে তুলে ফেললো। আজ রাস্তায় তেমন নোংরা নেই। বেওয়ারিশ গরুগুলো খুব হেগে রাখে। আজ তেমন  কিছু নেই। তবু একবার দেখে নিলো। সুপারভাইজারের বড় কড়াকড়ি। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কাউকে ছাড়ে না। একটা নীল রঙের 'A' অক্ষরঅবহেলায়। প্ল্যাস্টিকের। কোন বাচ্চার হবে। খুব যত্ন করে হাত দিয়ে তুলে রাখলো পাশের ধাপি-তে। রামুর তো দৌড় ক্লাশ ফোর। যাক্‌, আজকের মতো কাজ শেষ। পাশের ডোবা-টায় হাত-পা কোদাল ধুয়ে উঠে আসতে গিয়ে চোখে পড়লো লাল টুকটুকে একটা শালুক। রোদ পরে ঝকমক করছে। পুনু যখন মুডে থাকে, ঠিক তেমন। পুনুকে আজ ও এটা দেবে। পুনু ভালবাসে। এটা পেয়ে ও নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে। সুকুমারের দোকান থেকে কচুরিও নিয়ে যাবে। রামু জলে নামলো। বারমুডা ভিজে যাচ্ছেতা যাক্‌। কোমড়ের উপরে জল। রামু ৪৫ ডিগ্রি ঝুঁকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। আর একটু এগোতে পারলেই হাতে পেয়ে যাবে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন