কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

মলয় রায়চৌধুরী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১২


তাড়লিঙ্গ

তাড়ির কথায় মনে পড়ল, আমার জিগরি দোস্ত, এখন অক্কা পেয়ে নির্ঘাৎ পারগেটোরিওতে, এরিক পেজ, বলতো তাড়ি হলো ঈশ্বরের বীর্য, দ্যাখো, তাড়ি কেবল লিঙ্গের মতন গাছেই হয়, তালগাছে, মানে তাড়লিঙ্গ, খেজুর গাছে, কিন্তু নারকেল গাছে হয় না, কেননা নারকেল গাছ নিজের ইচ্ছে মতন বেঁকেও উঠে যেতে পারে। বাঙালিরা পাকা তালের আঁটি মাটিতে পুঁতে ফোঁপল খায়, কিন্তু মালায়ালিরা ওই আঁটিকে পচিয়ে দেশি মদ বানায়, আহা, একভাঁড় চুমুক দিলেই বোদলেয়ারের জাঁ দুভালের কোলে গিয়ে তুমি আছড়ে পড়বে, শুনতে পাবে ফরাসি ভাষায় তার কালচেত্বক খিলখিল।

তবে সবচেয়ে কড়ক তাড়ি খেয়েছিলুম আরেক ধরনের তাড়লিঙ্গ গাছের, তার  নাম সালফি, গাছগুলো দেখতে প্রায় খেজুর গাছের মতন, কিন্তু পাতা সরু-সরু। আমার আর আমার সহকারি অফিসার উমা মহেশ্বর রাও-এর গাইড বলেছিল, এই মদে এতো নেশা হয় যে লোকে হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়।

জায়গাটা দান্তেওড়ার অবুঝমাড় জঙ্গল, সেখানে পরিষ্কার জল সহজে পাওয়া যায় না, তার বদলে সালফি খেয়ে লোকে চালায়, নয়তো পাহাড়ি চিলতে নদীর বর্ষাকালের জল। আমরা বোতলে জল ভরে নিয়ে গিয়েছিলুম। এই বোতলে জল নিয়ে যাবার আরও খানিক ঘটনা আছে, পরে মনে পড়লে, বলব।

অবুঝমাড় এখন মাওওয়াদিদের ইলাকা-এ-লাল। সেখানে আরেকটা বস্তুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, যাকে বন দপ্তরের অফিসার বলেছিল রেড ভেলভেট মাইট বা  ট্রমবিডাইডা পোকা। লাল টকটকে, অবুঝমাড়ের গোঁড়-মাড়িয়ারা বলে বিয়ার  বহোতি, শুকিয়ে খায় তারা, শহরের বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে। পুরুষ আর নারী, দুইই পোকাগুলো খায় ইনডিয়ান ভায়াগ্রা হিসেবে। পোকাগুলো পিষে অবুঝমাড়িয়ারা তেল বানায়, বাতে মালিশ করার জন্য, নারায়ণপুর শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রিও করে। একটু সালফি খেয়েছিলুম ফেরবার দিন, জলের বোতলে ভরে এনেছিলুম, গেস্টহাউসে খেয়েছিলুম কেয়ারটেকারের রাঁধা মুর্গির মাংস দিয়ে। আর বিয়ার বহোতি পোকা এনে অফিসে বিলি করেছিলুম। অবুঝমাড়ের অভিজ্ঞতা আমি আমার ‘ঔরস’ উপন্যাসে ঢুকিয়েছি, এখনও প্রকাশক পাইনি বই করে বের করার।

এখন আর আমি বাংলামদ, তাড়ি, ফেনি, ফলচোলাই করা দেশি মদ খেতে পারি না, লিভারে ঝিংকে ওঠে। সবচেয়ে ভালো লাগে আবসাঁথ, যা র‌্যাঁবো-ভেরলেন-বোদলেয়ার খেতেন, নিট খেতে হয়, সবুজ রঙের, মৌরি থেকে তৈরি, জল বা সোডা মেশানো যায় না, মেশালেই তাড়ির মতন সাদাটে হয়ে যায়, মজা কিরকিরা করে দেয়।

 

        

 

 


1 কমেন্টস্: