কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সুবল দত্ত

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১১


তান্ত্রিক ফ্র্যাংকেষ্টাইন 

                    

ঘরময় কাঁচের গুঁড়ো ছড়ানো। মাঝে মাঝে চিত্র বিচিত্র মিশ্রিত আবীর। মাঝে ঘট পান সুপারি ফুল। আলো বলতে চারপাশে গোবরে পোতা জোনাকি দপ দপ করে জ্বলছে। এমনভাবে সেগুলো বসানো, তাঁর ছায়া পড়ছে না। তিনি হাঁটু মুড়ে বজ্রাসনে ধ্যানস্থ। নগ্ন। কোমরে দগদগে পোড়া ঘা। আগুন থেকে অর্ধমৃতাকে উদ্ধার করেছেন।

কাঁচধুলার উপর কয়েকটি বড় শামুক শুয়ো বের করে রাস্তা কেটে খুঁজে বেড়াচ্ছে জলাশয়। কয়েকটা জিয়ল মাছ, মাগুর ও কই এদিকে ওদিকে লম্বা লাফ দিচ্ছে। আছাড়িপিছাড়ি। উনি জানেন, ডাঙাতে বেঁচে থাকার জন্যে ঈশ্বর ওদের আলাদা একটা ফুসফুসের ব্যবস্থা করেছেন। যতক্ষণ ওরা বাঁচবে ততক্ষণ তাঁর সাধনা সম্পন্ন হবে। তারপর জলচরেরা জলে আর স্থলচরটি নিশ্চিন্তে আপন শক্তিবলে নির্ভয়ে জীবনযাপন করবে। সত্যের মুখোমুখী করাবে জনে-জনে। হিংস্রদের দমন  করতে পারবে।

তিনি জানেন, তাঁর এই নিজস্ব তন্ত্রসাধনা ব্যতিক্রমী। প্রাচ্যের বহুদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন, বহু ধর্মের সাথে প্রায় মিলেমিশে গেছেন। ইহুদীদের জুডাইজম, মিশরের ইসলামিক সুন্নি, ইরানের সিয়া, তিব্বতের বৌদ্ধধর্ম,খ্রি স্টানধর্ম এবং স্বদেশে বেদান্ত।

বিদেশে ঘুরতে-ঘুরতে নানা রোগের শিকার হয়েছিলেন। সেনট্রাল আমেরিকার  প্রত্যন্ত নিকারাগুয়াতে মারণ জুনেটিক রোগের শিকার হয়েছিলেন। ইবোলা। চোখ লাল, চামড়া ফেটে রক্ত, রক্তবমি। চীনে ভয়ানক সার্স-কোভিডের শিকার  হয়েছিলেন বহু আগে। দেশে এসে লেপ্রসির শিকার হলেন। কিন্তু তিনি দমে জাননি। বরং এইসব রোগ মানুষের দুঃখকষ্টের জ্ঞান দিয়েছে বলে কৃতজ্ঞ। তরতি শোকমাত্মবিত্‍। আত্মজ্ঞ শোক কষ্টকে অতিক্রম করে যায়। কিন্তু সর্বধর্মের সার জেনেছেন, মহাত্মাদের এতো পাওয়ার থাকতেও কেউ নিপীড়িত শোষিত নির্যাতিতদের শক্তি দিতে পারেননি। সহানুভূতি আরো মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়।  শয়তানের কাছে বাঁচার আগ্রহ কমে যায়। ভীতু হয়ে জীবনযাপন করে। তিনি তপস্যাবলে সর্বজ্ঞ হয়েছেন। এবার নতুন কর্মের পালা।

কাঁচের অজস্র টুকরোর উপর শুয়ে আছে এক নারী। স্থির। অর্ধপোড়া দেহ সাদাকাপড়ে ঢাকা। সারাগায়ের কাটাক্ষত দিয়ে এখনো রক্ত ফুটে বেরচ্ছে তার ওপর দিয়ে। গতরাতে বেশ কয়েকজনের ধর্ষণের শিকার। তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন এটা পলিটিক্যাল মার। এই মহিলাটি বড় ঘাপলার কথা জেনে গিয়েছিল। ঘরভর্তি কোটি কোটি টাকা কোনখানে ঠাসা। হিউম্যান ট্রাফিকিং কোন রাস্তাদিয়ে কীভাবে হয় সব সব। সেখানেও পুলিশি হাত। মহিলাটির উপর  অনিবার্য কুকর্ম হওয়ার পর, ডাক্তার ক্লিনিক্যাল-ডেথ ঘোষণা করে, শেষে মাঝরাতে পুলিশ মিডিয়া সোসাইটি নীরব হয়ে যাওয়ার পর তিনি প্রায় জ্বলন্ত দেহটিকে এখানে নিয়ে আসেন। তারপর শুরু হয় এই উপচার। উনি ওকে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানসম্মত ও মিশ্রতন্ত্রসাধনায় জাগাবেন। মস্তিষ্কে বুদ্ধি ও শক্তিচেতনা ভরবেন। দুষ্টদমনের জন্য প্রস্তুত করবেন।

ঘরে সর্বক্ষণ একটা হামিং শব্দ। ওমমমমমম...। কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র, কৃত্রিম হৃদয়যন্ত্র, ইকো ইসিজি মেশিন, মাথায় বুকে হাতে পায়ে প্রচুর ইলেক্ট্রোড। মাথার খুলির ভিতর থেকে সূক্ষ্ম ইলেক্ট্রোড তারগুলি তিন-চারটি মাছ শামুক ও ব্যাঙ-এর মাথায় ঢোকান। এই কাজে প্রচুর বিদ্যুত্‍ লাগে, তাই কাছের হাই-টেনসেন ইলেকট্রিকতার থেকে ডাইরেক্ট লাইন টানা হয়েছে। ওনার সামনে ভূডুতন্ত্র, এলকেমিস্টের সরঞ্জাম, ব্ল্যাক কাল্ট, টাইবেটিয়ান ও ৬৪তন্ত্রের সরঞ্জাম।

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন