কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১১ |
অবয়ব
কলেজের ছুটির পর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইল চন্দনা। শান্ত গলায় অঞ্জনা বলল, ‘চিন্তা নেই, ও আসবে না।’
‘একটু দেখেনি’ জবাব ছুঁড়ে দিল চন্দনা।
‘চল, ঘরে চল’, অঞ্জনা কাঁধের ব্যাগ ঠিক করতে করতে বলল।
নভেম্বরের হাওয়ায় বেশ একটা কামড় অনুভব করা যায়। কাল সারা রাত্রি ঘুম হয়নি তার। একদিন এই জানলায় দাঁড়িয়ে থাকা অবয়ব কী দারুণ আকর্ষণে হাতছানিও দিয়েছিল। সেটা বুঝতে ওর খানিকটা সময় লেগেছিল অবশ্য। চন্দনা জেদ ধরল, ‘চল না, কাল কনট্প্লেস। কটা বই কিনবো।’
অঞ্জনা শাসনের সুরে, ‘ওতো আজকাল অনলাইনেই কেনা যায়। আমাজন কিংবা ফ্লিপকার্টে
অর্ডার প্লেস কর।’
‘তুই সবেতেই সর্দারি শুরু করিস। দোকানে গিয়ে বই কেনার মজাটাই আলাদা।’
‘যাক্ গে। তোর মানসিক স্বস্তির জন্য অবশ্যই যাবো।’
সন্ধ্যের অন্ধকারে জানলার কাছে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে চন্দনা। ‘নাঃ, সে তো এলো না!’ মনে মনে ভাবে। জাদুবাস্তবতার ভাবনায় জারিত হয়ে লিখে ফেলে বেশ কিছু কবিতা। রাত গভীর হতে থাকে। একটু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে মনে মনে ভাবে কোনো তোষামোদ নয় আর। আস্তে আস্তে স্থিরতা পায় তার ভাবনা। সে উঠে পায়চারি করতে থাকে। এমন সময় জানলার কাছে এসে দাঁড়ায় সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত মুখমন্ডল। ‘সরোজদা!’
মনের কোণে জমে থাকা কালো মেঘ থেকে বৃষ্টির ধারায় ভিজতে থাকে তার চিবুক।
‘কী রে? মনখারাপ?’ সরোজদার সেই চিরাচরিত হাসি ঝরে পড়ে।
চাঁদের আলোয় ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকে সেই অবয়ব। ধুর! ‘অঞ্জনা, এই মাঝরাতে সে
এসেছিল’! মোবাইলে চন্দনার আর্তনাদ।
‘চন্দনা, জানলাটা বন্ধ করে দে। কাল দেখা হবে, কথা হবে। গুড নাইট।’
বাইরে রাস্তায় ট্যাক্সি, রিক্সার শব্দ কমে আসছিল। রাতের আকাশে মেঘে মেঘে ছড়িয়ে পড়ছিল চাঁদের রামধনু রং। চন্দনা অ্যালবাম খুলে দেখতে থাকল রং-বেরঙের ছবির কালেকশন।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন