কালিমাটি
অনলাইন / ১০৩
সেদিন একটা মজার ঘটনা ঘটল। ব্যক্তিগত কাজে সকাল এগারোটা নাগাদ একটা ব্যাঙ্কে গেছিলাম। কাজটা শেষ করে যখন উঠতে যাব, বাঙ্কের যে কর্মীর সঙ্গে কাজটা করছিলাম, তিনি একটা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বসলেন, আচ্ছা স্যার, আপনি ব্যাঙ্ক থেকে যে সুবিধেটা নেবার জন্য আবেদন করলেন, সেই সুবিধেটা তো শুধুমাত্র সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য। তা আপনি…! আমি বললাম, হ্যাঁ ঠিকই তো! সিনিয়র সিটিজেনদের জন্যই তো! ব্যাঙ্ককর্মী কৌতূহলের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কিন্তু স্যার, আপনি তো ষাটের থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছেন বলেই মনে হচ্ছে আমার, মানে এখনও তো আপনি কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেননি, তাই না? আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, তার মানে? আপনি আসলে কী বলতে চাইছেন? আমি সিনিয়র সিটিজেন নই? আশ্চর্য! তা আপনার কী মনে হয়, আমার বয়স কত? ব্যাঙ্ককর্মী একটু থতমত খেয়ে বললেন, স্যার, কিছু মনে করবেন না, আপনাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে, বাহান্ন-তিপান্নর বেশি আপনার হতেই পারে না! বলা বাহুল্য, ব্যাঙ্ককর্মীর এই অনুমান আমাকে উৎফুল্ল করল। মনটা আমার এক অনস্বাদিত আনন্দে ভরে গেল। সৌজন্যে গদগদ হয়ে বললাম, জানেন, আপনার এই পর্যবেক্ষণ ও অনুমান আজ আমার দিনটাকেই বদলে দিল, চারিদিকের প্রকৃতিটা ফুরফুরে হয়ে উঠল। তবু আপনার অবগতির জন্য জানাই, আমি বিগত জানুয়ারী মাসে সত্তর পেরিয়ে গেছি। আমার কথা শুনে ব্যাঙ্ককর্মী যথার্থই চমকে উঠলেন। বললেন, বলেন কী স্যার, আপনি সত্তর অতিক্রান্ত? দেখলে কিন্তু একেবারেই তা মনে হয় না! আমি এবার কিছুটা খেলার ছলে প্রতিপ্রশ্ন করলাম, তা আপনার বয়সটা তো জানা হলো না! আপনার কত হলো? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, সেটা স্যার আপনিই অনুমান করে বলুন! আমি রীতিমতো উৎসাহিত হয়ে গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলাম তাঁকে। মুখটা বেশ ভারি, দু’গাল চিবুক গলা সবকিছুই ঘন দাড়িতে ঢাকা। চুল ব্যাকব্রাশ করা। মাথার চুলে সামান্য রূপোলি ঝলক। জুলফিতেও কালোর পাশে দু’চারটে সাদা রেখার সহবস্থান। আমি বেশ নিশ্চিত হয়েই বললাম, আপনার বয়স এই পঁয়তাল্লিশের ধারে কাছেই হবে। ইতিমধ্যেই প্রৌঢ়ত্বের ছাপ পড়তে শুরু করেছে। আমার কথা শুনে, মনে হলো, ব্যাঙ্ককর্মী খুবই হতাশ হয়ে পড়লেন। সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলতে খেলতে আচমকাই লেফট ডিফেন্ডার পজিশনে নেমে গেলেন। কাচুমাচু মুখে বললেন, না স্যার, গত ফেব্রুয়ারীতে আমার সবে তিরিশ কমপ্লিট হলো।
না, এই মজার ঘটনাটা উল্লেখ করে আমি একথা বলতে চাইছি না যে, আমরা এই প্রবীণ বয়সে পৌঁছে এখনও তরুণ বয়সের মতোই আছি বা বিচরণ করছি, আর আজকের তরুণরা অকালেই প্রবীণের পংক্তিতে অনুপ্রবেশ করছে। কেননা এখানে যে তুলনামূলক ব্যাপারটা এসে গেল, তা নিছকই শরীর কেন্দ্রিক। এবং এটা হয়তো নিছকই ব্যতিক্রমী উদাহরণ। কেননা, যেমন আমার সমসাময়িক অনেকেই বয়সের ভারে অনেকটা শ্রান্ত ক্লান্ত এবং অসুস্থ, তেমনি আবার কেউ কেউ বয়সকে উপেক্ষা করে শরীরের সতেজতা জিইয়ে রেখেছেন। কিন্তু শরীরের পরিপ্রেক্ষিত যাই হোক না কেন, আসল হচ্ছে মনের পরিপ্রেক্ষিত। মনটাকে বুড়িয়ে যেতে না দেওয়া। আসলে তরুণদের শরীর ও মন তরুণই থাকবে বা থাকে, এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু যাঁরা প্রবীণ বা বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন বয়সের বিচারে, তাঁদের শরীর প্রকৃতির নিয়মে অশক্ত বা দুর্বল হয়ে পড়লেও, মনটাকে তরুণ করে রাখাটাই হচ্ছে বেঁচে থাকার সার্থকতা। আমরা সবাই জানি যে, জেনারেশন গ্যাপ বা প্রজন্মের দূরত্ব একটা বড় সমস্যা বা বাধা উভয় প্রজন্মের জন্যই। কিন্তু তবুও যদি প্রবীণ প্রজন্ম আগ্রহী হন এই দূরত্বকে কমিয়ে আনতে, তবে তাঁদের বয়সোচিত অভিমানকে উপেক্ষা করে যতটা সম্ভব মনটাকে তরুণের স্তরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পজিটিভ অর্থে শিং ভেঙে বাছুরের দলে নিজেকে মানানসই করে তুলতেই হবে।
‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের পক্ষ থেকে
সবাইকে জানাই বর্ষার শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2,
Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur
831002, Jharkhand, India.
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন