কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

মাহমুদ দারউইজ

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

 

মাহমুদ দারউইজ -এর কবিতা        

     

(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)   




 

কবি পরিচিতি : মাহমুদ দারউইজ (জন্ম ১৩ মার্চ ১৯৪১, মৃত্যু ৯ আগষ্ট ২০০৮) একজন ফিলিস্তিনের কবি সাহিত্যিক এবং প্যালেস্টাইনের জাতীয় কবি হিসেবে সম্মানিত। বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তাঁর কবিতা কুড়িটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। জীবনের বেশ কিছু বছর তিনি ইজরায়েলে কাটিয়েছেন এবং  তাঁর প্রথম কবিতাগুলো ‘আল জাদিদ’ নামে ইজরায়েলের কমিউনিস্ট

পার্টির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক হন। এছাড়া  ইজরায়েল ওয়ার্কার্স পার্টির দ্বারা প্রকাশিত ‘আল ফাজির’নামের সাহিত্য পত্রিকার সহ সম্পাদক ছিলেন। পড়াশোনার জন্য তিনি রাশিয়া যান এবং গ্রীস হয়ে লেবানন আসেন। তাঁর দুই বিয়ে ও দুই বিচ্ছেদ হয়। তিনি নিঃসন্তান  ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পি.এল.ও.(১৯৭৩) জয়েন করায় ইজরায়েলে থাকার জন্য প্রতিবন্ধিত হন। এরপর তিনি আমেরিকা চলে যান এবং ২০০৮, ৯ মার্চ হিউস্টনের এক হাসপাতালে হার্ট সার্জারির ৩ দিন পর মারা যান। তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর দেহ প্যালেস্টাইনের রামাল্লায় রাষ্ট্রীয় সম্মানের সাথে সমাহিত করা হয়।

 

Bread (রুটি)

 

প্রাক্সন্ধ্যা থেকেই দিন দুর্বোধ্য।

যথারীতি সূর্য ওঠে... অলসভাবে তামাটে ভস্ম পূবের দিগন্ত ছেয়ে থাকে।

মেঘের শিরায় শিরায়, বাড়ির পাইপে

জল শক্ত বরফ। অসহিষ্ণু শরত বেইরুটের

জীবনে আসতে উদগ্রীব।

মৃত্যু ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র… প্রাসাদ থেকে বেতার… গণিকাপল্লী থেকে সব্জি বাজার।

 

তোমাকে এখন কী জাগিয়ে দিচ্ছে?

ভোর ঠিক পাঁচটা… এবং ত্রিশজন নিহত!  

ঘুমাতে যাও, এখন অগ্নিবর্ষণ ও মৃত্যুর সময়।

শিল্পী ইব্রাহিম জলের ছবি এঁকেছিল সারারাত

তার ভেতর প্রস্ফুটিত লিলি ফুলের মেলা!

তাকে ভোরে ওঠানো ভয়ের ব্যাপার… কিন্তু  

তার সন্তানেরা লিলিফুল ও সূর্যালোক নিয়ে

স্বপ্ন বুনেছিলো। তারা রুটি ও দুধ চেয়েছিল

একটা অজানা অনিশ্চিত দিনে!

আমার চেহারা যেন পাকা গমের বেতারবার্তা

বুলেটের শস্যক্ষেত থেকে।

 

এখন তোমাকে কে ঘুম  ভাঙাচ্ছে!

ভোর ঠিক পাঁচটা এবং  ত্রিশজন নিহত।

রুটির এই স্বাদ কখনো ছিলোনা...

এই রক্ত, এই অস্ফুট বুনন ও উদ্বিগ্নতার

গন্ধ!... এই আওয়াজ, এই সময়, এই রঙ

এই পারদর্শীতা ম্যাজিক ও এই অদ্ভুত

আন্দোলন। সেই  গুহা থেকে শুরু হয়ে

বেইরুটের গোষ্ঠীদ্বন্দের বিয়োগান্তক ঘটনা।

 

ঠিক ভোর পাঁচটায় কে মারা যাচ্ছে!

ইব্রাহিম তার শেষ রঙ তুলে নিল গোপন রঙ

একজন শিল্পী একজন  প্রতিবাদী… সে এঁকেছিল - এক জনাকীর্ণ শহর, ওকগাছ

এবং যুদ্ধ! সমুদ্রের ঢেউ, কর্মরত মানুষ

রাস্তার ধারের বিভিন্ন বিপণি… সবুজ গ্রাম

এবং  সেই  আশ্চর্য  স্বাদের রুটি!

 

He is calm  as am I... (দেখা)  

 

সে শান্ত ছিল, যেমন আমি।

সে লেবু-চা খাচ্ছিল আর আমি কফি

এটাই একমাত্র তফাৎ ছিলো আমাদের মধ্যে।

আমার মতোই সে চওড়া ডোরাকাটা

জামা পরেছিলো এবং সান্ধ্য-পত্রিকা পড়ছিলো। সে দেখতে পাচ্ছে না

আমার গোপন চাহনি! আমিও তারটা দেখতে পাচ্ছি না। সে শান্ত, আমিও তাই।

সে ওয়েটারকে কিছু বলে, আমিও তাই।

আমাদের মাঝখানে একটা কালো বেড়াল।

হেঁটে গেল ওর রোমশ শরীরে আমি যেন

মাঝ রাত্তিরের আভাস পেলাম, সেও

বোধহয় তাই। আমি তাকে বলিনি

আকাশ আজ পরিষ্কার নীল, সেও বলেনি। 

সে দেখছিলো একজন তাকে লক্ষ্য করছে,

আমিও তাই। আমি আমার বাঁ’পা নাড়ালাম, সে তার ডান’পা। আমি গুনগুন করে একটা সুর ভাজলাম, সেও একই সুর

গুনগুনিয়ে উঠলো! আমি আশ্চর্যচকিত

হয়ে ভাবলাম সে কি আমার আয়না?

আমি তার চোখ দেখার জন্য পেছন ফিরলাম

কিন্তু দেখতে পেলাম না। তাড়াতাড়ি রেস্তোরাঁ থেকে বেরোলাম, ভাবলাম বোধহয় সে একজন খুনী, অথবা এটাও সম্ভব সে এক পথচারী ভাবছে আমি একজন খুনী,

সে ভীত, এবং আমিও তাই!

 

Poem of the land (আমার স্বর)

 

একটি অনাদৃত গ্রাম একটা ছোট্ট সন্ধ্যা

দুটো ঘুমার্ত চোখ! তিরিশটি বছর… পাঁচটি

যুদ্ধ - সেটা আমার কাছে লুকিয়ে ফেলেছে  সময়। রুটির জন্য আকাঙ্ক্ষায়!

 

গায়ক অগ্নিগর্ভ গান গাইছে... সেটা ছিল সন্ধ্যা, আগন্তুকের সন্ধ্যা -

গায়ক গাইছে, তারা প্রশ্ন করছ্‌ 'গাইছো কেনো'? তারা কেড়ে নিচ্ছে সব

সার্চ করছে, কারণ আমি গান গাইছি।

 

কিন্তু আমার বুকের ভেতর

শুধু আমার হৃদয়

হৃদয়ের ভেতর শুধু আমার মানুষেরা

আর আমার স্বরের ভেতর 

শুধু আমার দুঃখ!

 

1 কমেন্টস্:

  1. বাণী দি অসাধারণ অনুবাদ হয়েছে মাহমুদ দরবেশের কবিতার । উনি আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে এক জন 👌👌👌👌

    উত্তরমুছুন