কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৭ |
সমঝোতা
জটিল সভ্যতার সঙ্গে সমঝোতা করতে করতে নানান রকম বিপদের মুখোমুখিও হতে হয়। তখন পোষা পশুদের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়, যেমন কুকুর কিংবা বেড়াল। আত্মার অনুসন্ধান প্রতিনিয়ত দাঁড় করায় অস্তিত্বশীল জীবনাকাঙ্ক্ষা। অন্তহীন এক সংগ্রাম সঙ্গী করে এই বেঁচে থাকা। গুড়িয়া দু পায়ে দাঁড়াতে পারে না, সেই কোন ছোটোবেলায় পোলিও হয়েছিল তার। কুড়ি বছরের গুড়িয়া বুঝতে পারে না, যে তার মা এখন কোথায়। মায়ের কোভিড হয়েছিল, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এখনও কোনো খবর নেই মায়ের। ঘরের খোলা দরজায় এসে মানুষজন তামাশা দেখছে। ঘরের চারপাশের বাগানে ঠান্ডা নেমে আসছে ক্রমশ। অভুক্ত গুড়িয়া তার অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে।
সন্ধ্যার অন্ধকারে ঘরে কয়েকজন সমাজবিরোধীর প্রবেশ। গুড়িয়া আর্তনাদ করে ওঠে। রক্তাক্ত খাটিয়া থেকে সে নীচে মেঝেয় পড়ে যায়। সেই বর্বররা ঘর থেকে ছুটে বাইরে পালিয়ে যায়। এক কামরার ঘরে হতদরিদ্র মায়ের মেয়ে রক্তাক্ত পড়ে থাকে মেঝেয়।
সভ্য সম্প্রদায়ের অধীনে জীবনকে মাঝে মাঝেই অসহনীয় মনে হয়। রঞ্জন সেই ছেলেটি ভোরের আলোয় সমস্ত সামাজিক বাধা অগ্রাহ্য করে ছুটে যায় গুড়িয়ার ঘরে। এখন কুকুরের সুতীব্র আবেগের কথা মনে পড়ে খুব। জটিল সভ্যতাকে দূরে সরিয়ে মানবিকতা জেগে ওঠে তার। দু হাতে গুড়িয়াকে তুলে নিয়ে রঞ্জন অ্যাম্বুলেন্সে ওঠে।
এই পৃথিবী ছেড়ে কখনও কোথাও যেতে পারবে না সে, তার স্বভাব ও প্রবৃত্তিও পরিবর্তন করতে পারবে না সে –– রঞ্জন ভাবতে থাকে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন