কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৭ |
হ্যালো ডিয়ার
তোমার মেইল পেয়ে আনন্দে পরী হয়ে গেছি। ভাবতে পারছি না এতো খুশি আমার জীবনেও আসে? মাত্র দুলাইনের মেইল আমাকে দুদিন ধরে সুখে ভরিয়ে রাখল। শুধু আমি কেন, রিফিউজি ক্যাম্পে সবাই ভীষণ খুশি। কিন্তু তুমি এমন কথা কেন লিখেছ? রিটায়ার্ড বৃদ্ধের থাকা আর না থাকা? তুমি তো তোমার নিজের দেশে নিজের ঘরে আছো। তুমি স্বর্গে আছো। আর আমি? প্রায়ই ভুলে যাই আমি মানুষ কি না! আমার নাম নিশ্চয়ই মনে রেখেছো? আমি জেসমিন আমাডু। হাইট ছয় ফুট চার, ওজন সত্তর কিলো। সাতাশ বছরের কৃষ্ণাঙ্গী। আমি জানি আমার এই দানব চেহারা তোমাদের ভারতীয় সমাজে একেবারেই বেমানান। কিন্তু সত্যি বলছি, আমার কাছে প্রচুর ডলার থাকতেও নানান রিফিউজি ক্যাম্পে সারাদিনের বরাদ্দ দুটো ব্রেড আর কখনো একমগ দুধ আমি সারাজীবন ধরে পেয়ে আসছি। এই কদিন এখানে এসে উইকলি একটু বাটার পাই। আমি পরাধীন। বাজার থেকে কিছু কেনার উপায় নেই। এর মধ্যেই তিনটে ক্যাম্পে তিনবার ক্ষণবিবাহ হয়ে গেছে। ছাড়াছাড়িও হয়েছে। না,আমার কোনও বাচ্চা নেই। চাহিদাও নেই। আমার দেশে দীর্ঘদিন সিভিল ওয়ার চলছে। পশ্চিম আফ্রিকার লিবেরিয়া থেকে পালিয়ে এদিক ওদিক হাতফেরতা হয়ে আমি এখন ডাকার সেনেগালে একটা চার্চের ভিতরে রিফিউজি ক্যাম্পে আছি। আমার বাবা ছিলেন মনরোভিয়াতে একজন সোসিয়ালিস্ট। তিনি আমাকে বলতেন, রোজ প্রার্থনা কর, জীবনে একবার কখনো স্বাধীনতা আসুক। আমার বাবা মাকে চোখের সামনে ওরা হত্যা করেছে। ভারী শরীর নিয়ে কোনমতে পালিয়ে যেতে পেরেছি। সেই থেকে একটিই প্রার্থনা, হে ঈশ্বর স্বাধীনতা কী, আমাকে অনুভব করিয়ে দাও।
সুইটহার্ট, তোমার ওল্ড এজে আমার কিছু যায় আসে না। না তোমার পড়ন্ত বা নিভন্ত যৌনতা আমার দেহমনের কষ্টের কারণ হবে। একটিই অনুরোধ তুমি ঈশ্বরের দূত হয়ে দয়া করে আমাকে তোমার কাছে ডেকে নাও। একটা মেইলে তুমি লিখেছো তোমার ভারতীয় দেশের বাড়ি কুঁড়েঘর। চারপাশে অনেক গাছ, সামনে উঠোনের পাশে মস্ত নিম আর আম ও নারকেল গাছ। নিজেদের একটা ছোট পুকুর আছে। এই ছবি হুবহু আমার নিজের ঘর লিবেরিয়ার সাথে মিলে যায়। আমাদের ভাষায় নিমগাছকে বলে গিদহিন্দি, আমগাছ কম্বে, আর নারকেল গাছ হল নারাজীন। লিখেছ তোমার তো কেউ নেই। দয়া করো। আমাকে সেখানে নিয়ে চলো। উঠোনে মুক্ত আকাশের নিচে চাঁদনী রাতে তোমার বিছানা করে দেব। আকাশে থাকবে স্বাধীন চাঁদ। জেসমিন ফুলের গন্ধে মনে হবে আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। প্লিজ তুমি একবার হ্যাঁ করলেই এখানের রেভারেণ্ড ফাদার ব্যবস্থা করে দেবে। কথা দিচ্ছি আমি প্রচুর ডলার নিয়ে আসব। আমার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ আছে, স্বাধীনতা নেই।
একটা ভিন্ন দেশ, ভিন্ন পরিস্থিতি , রিফিউজি ক্যাম্প আর সিভিল ওয়ার - সব কিছু মিলিয়ে খুব ভালো লাগলো গল্পটা।
উত্তরমুছুন