কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৭ |
কোথাও অনৃত নেই
সুধন্যা ঐ রাস্তাটা চিনত। তখন ও লালপাড় সাদাশাড়ি পরতে ভালবাসত। প্রবালকে এখানেই আকছার দেখতে পাওয়া যায়। হয় বইখাতার দোকানটাতে বসে আড্ডা দেয়, নয় তো থানার সামনে সিমেন্টের বেদিতে বসে থাকে। মণীষা শর্মিলাদের পাড়ায় থাকে। মণীষা প্রবালের কাছে অংক শিখে কত বেশি নম্বর পেল অংকে। সুধন্যা থানার ভিতর আজ ঢুকে গেল। প্রবাল নীল পিটারপ্যান শার্ট পরেছে। প্রবাল গল্প জমিয়েছে। ভাঁড়ে চা খাচ্ছে। ওকে দেখে উঠে এলো একপাশে। ‘কী ব্যাপার?’ ‘মানে টাকা চেয়েছিলে তো। এই নাও’। সুধন্যা একটা মানিব্যাগ প্রবালের হাতে ধরিয়ে দিল। বাড়ির ছাদে উঠে গার্লস স্কুলের দশের এ ক্লাসরুমের দিকে তাকিয়ে থাকত। ওর কালো হাতের লাল পাঞ্জা সূর্যের আলোয় চকচক করে উঠত।
সুধন্যা হাঁটতে হাঁটতে চলে এল থানার বিপরীতে প্রবালদের বাড়িতে। প্রবালদের বাড়িতে একটা টিউবওয়েল ছিল। পাতাবাহার রঙ্গনগাছের ঝাড়ে হাঁড়িচাচা ঘুরে বেড়াত। জবাগাছের ঝাড়ে টুনটুনির বাসা ছিল। ওর মা ছেলের এই প্রেমিকাকে মেনে নিতে পারেনি। অজুহাত ছিল প্রবালের পড়াশোনা। প্রেমিকারা বাইরের লোক চিরকাল। আর প্রেমিকদের বাড়ি ছাড়ার কোনো কোশ্চেন নেই।
সুধন্যা ভাবতেই পারেনি গ্ৰামের চাষিবাড়ির মতো ওদের বাড়িঘর। খাটের তলায় আলুর বস্তা। রান্নাঘরটায় ভর্তি কালো হাঁড়ি কাঁসার বাসন, এলুমিনিয়ামের সানকি গামলা। তার মধ্যে প্রবালের মা দাঁড়িয়ে। আটপৌরে ঢঙে পরা শাড়ি। সুধন্যা বলল: ‘কনক-মাসিমা, আমি প্রবালকে বিয়ে করতে চাই। বিয়ে হবে রাতের অন্ধকারে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিয়ম মেনে। মেসোমশাইকে আমি হাজারিবাগ থেকে ধরে আনব। শকুনের বংশবিস্তার প্রচুর করেছেন উনি। এখন যে ঝড় হবে আশা করব তাতে শকুনের ডিমগুলো বেঁচে যাবে’। ভদ্রমহিলা বললেন: ‘আমার বড়ছেলে সুভাষ পাগল। এরকম সংসারে তোমার বাবা মা নিশ্চয়ই রাজি হতেন না বিয়ে দিতে!’
যে জানলায় প্রবাল বসে থাকত সে জানলাটা দিয়ে সুধন্যা বাইরের দিকে তাকাল স্কুলটাকে দেখবে বলে। বাইরে একেবারে দার্জিলিঙের মতো বরফে ঢেকে গেছে চারিদিক। ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ছুটে। সুধন্যার শরীর বরফের মতো সাদা হয়ে যাচ্ছে। নগ্ন বরফের মতো। রাস্তায় কেউ ওকে দেখছে কি?
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন