সমকালীন ছোটগল্প |
ইমন কল্যাণ
সে ডাকবে আর আমি সাড়া দেব
না, এমন হয়নি কখনো। আমি সাড়া দেব আর তার পরের প্রতিটা সেকেন্ড নিজেকে বেহায়া বলে গালি দেব, এই তো হয়ে আসছে এতদিন ধরে!
‘আর মাত্র দু'তিনমাস পর দেখবে শহরে বসন্ত এসে যাবে।’
আমি
বোকার মত বলে উঠলাম, বসন্ত তো এসেই গেছে!
শোনে না
সে। ভাগ্যিস ইমন বরাবরের মত শুনতে পায় না আমার এসব স্বগতোক্তি, প্রলাপ!
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরুবার পর ব্যাচের গেট টুগেদারে ওর সঙ্গে দুয়েকবার দেখা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আমার হিসেব মতে পুরো ছ’টা বছর আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম।
তখন মনে
হত এই বুঝি ভাল হল। ওর কোনো হদিস জানা নেই, অযথা কষ্ট পাবার কষ্ট থেকে বেঁচে গেলাম বুঝি। কিন্তু এত সহজে রেহাই
আমি পাব কেন! কিন্তু তাই বলে এই অবেলায়?
মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজের আসা যাওয়া চলছে। ওরকম একটা আকাশযান একটু আগে আমাকে বোধহয় ভুল করে অদ্ভুত এই শহরে নামিয়ে দিয়ে গেছে। নয়ত পৃথিবীর বিপরীত প্রান্তে এই এতবড় রাজ্যের অর্ধশত অঙ্গরাজ্যের মাঝে সহস্রাধিক শহর থেকে বেছে বেছে কেন ঠিক এখানেই আসতে হল আমার?
কথা ছিল ডিপার্টমেন্টের
ভারতীয় ছাত্রী সুমিত্রা নাইড়ু এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে তুলে নেবে। দেশে জরুরি ফোনগুলো করতে করতে তাই চারপাশে চোখ রাখছিলাম আমি।
ব্যাগেজ ক্লেইমের ওখানে
ইমনকে দেখে আমার হৃদপিণ্ডটা তড়াক করে বেরিয়ে আসার
মত অবস্থা হলেও নিজেকে প্রাণপণে সংযত রেখেছিলাম।
ওয়াইফাই
রিকানেক্টেড হতেই প্রফেসর হুয়াংএর শেষ মুহূর্তের মেইলটা দেখতে পেলাম তখন।
'ডিয়ার ঈশিতা, আওয়ার পোস্টডক স্টুডেন্ট ইমন উইল পিক ইয়্যু আপ।' না, নাইড়ু কিচ্ছু জানায়নি।
সব
মিলিয়ে ভীষণ অদ্ভুত লাগছে। স্বপ্ন দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে যেমন হয়, যা দেখছি তা অবিশ্বাস্য মনে হয়, ছটফট করতে করতে ঘুমটা ভাঙ্গলেই কেবল স্বস্তি ফিরে আসে। আমিও তখন থেকে ছটফট করছি
কিন্তু এই ঘুমটা ভাঙছে না।
ঘুরে ঘুরে ওয়ালমার্ট
থেকে দরকারি সব বাজার করা হল।আমি যথারীতি এদিক ওদিক পথ হারাচ্ছিলাম। ইমন হঠাৎ ডাক
দিয়ে বলল,
হেই! তুমি কি
রাস্তাঘাটে এখনো ওরকম করো?
এতগুলো
বছর পর খেয়াল হল আর অমনি টুপ করে হাজির হলেন তিনি! ওর যদি সব কথাই মনে রাখা লাগবে তবে যোগাযোগটাও রাখা যেত। এসব ভেবে ভেবে ভেতরে ভেতরে জ্বলে যাচ্ছি আমি।
ওরকম লালচে দেখাচ্ছে কেন! চলো যাই, পরে আবার আসা যাবে। ইয়্যু নিড রেস্ট।
শপিংট্রলিটা ঠেলতে ঠেলতে এগোচ্ছে সে। ওর স্বাস্থ্য ভরাট হয়েছে আগের চেয়ে। গালের চাপদাড়িতে আরো বেশি সুদর্শন দেখাচ্ছে ওকে। আমি যন্ত্রচালিতের মত ওর পিছু পিছু চলছি। আমি ভেবেছিলাম সব ভুলে গেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ওর পিছু পিছু চলতে পারব হয়ত আজীবন!
আমার জন্য ভাড়া করা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে লাগেজ
আর বাজারগুলো নামিয়ে দিল ইমন।
‘এত গম্ভীর হয়ে আছো কি বয়স বেড়েছে বলে?’ সেই পুরনো ভঙ্গিতেই হাসছে সে।
‘আমি কবে বাক্যবাগীশ ছিলাম?’
ইমন
মাথা নাড়ে। ‘সেও তো ঠিক! তুমি তো
বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না গোত্রের!’
আমাকে
আবারো লালচে হতে দেখে সে এবার দাঁতে
জিভ কাটল। যাবার আগে গাড়ির কাচ নামিয়ে বলল, ‘ডিনারের জন্য রেডি থেকো। আমি ঘন্টাখানেকের মধ্যে পিক করছি তোমাকে।’
লম্বা একটা স্নানের পর বিছানায় যেতেই ঘুমের অতলে ডুবে গেলাম আমি। ডুবে যেতে যেতে টের পেলাম স্বপ্নদৃশ্যের মত টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো ফিরে আসছে। আমি ঢিল ছুঁড়ে যাচ্ছি একের পর এক, তবু দৃশ্যগুলো চুরমার হয়ে যাচ্ছে না, আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
রাস্তা পার হতে গিয়ে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়েছি। হাত দিয়ে চোখমুখ আড়াল করে সশব্দে কাঁদছি আমি। তারপর জানি না কতগুলো মুহূর্ত পেরিয়ে যাবার পর চোখ মেললাম। ইমনের গা ঘেঁষে চলে যাওয়া লেগুনটার চিহ্ন নেই আর। শুধু হাওয়ার তোড়ে উড়তে থাকা ওর চুলগুলো উসকোখুসকো দেখাচ্ছে। আর ওর চোখের তারার ঘন বিস্ময়। কিচ্ছু হয়নি, কিচ্ছু হয়নি। যেন ইমন বলছে আমি ঠিক আছি!
আমার পাশের ফাঁকা সিটটায় ও বসে পড়তেই জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। আড়চোখে দেখছি ওর হাতটা এগিয়ে আসছে। আরো কাছে, আরো কাছে। এত কাছে যে ওর নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ পর্যন্ত পাচ্ছি।
তারপর জানি না কী হলো! শত ভোল্টের বিদ্যুৎটা আমাকে ছুঁয়ে যাবার আগেই আপাদমস্তক কেঁপে উঠলাম। জানালার কাচটা সরে যেতেই টের পেলাম এক পশলা জলো হাওয়া আছড়ে পড়ছে আমার চোখে মুখে, খোলাচুলে। আর ছেলেটা 'গরমটা কী বিচ্ছিরি' বলে নির্বিকার ভঙিতে কানে হেডফোন গুজে আরাম করে বসল।
শারমিন, মৌমিতা, রাজীবরা প্রায়ই ইমনকে খোঁচা দিয়ে বলত, কিরে ওকে এত আপনি আজ্ঞে করিস কী জন্যে! তুই করে বললে কী হয়?
'ওকে আমি শ্রদ্ধা করি। তাই তুই বলতে পারি না।' সবার
সামনেই আমাকে অপ্রস্তুত করে দিত এমন সোজাসাপ্টা উত্তর।
ওদের সবার একটা ধারণা ছিল, ইমন আমাকে
শুধু সমীহই করে না, আমার প্রতি ওর আরো কিছু অনুভূতি আছে।
আমি নিজেও কি তাই ভাবতে
চাইতাম না? এমন সম্ভাবনার কথা ভেবে মনে মনে বিবশ হয়ে থেকেছি
কতদিন! শুধু ওর
প্রচন্ড উদাসীনতার কোনো ব্যাখ্যা আমি কখনো দাঁড় করাতে পারিনি।
বারবার ওর
নাম ধরে ডেকেও সাড়া পাই না। ছায়াদৃশ্যের মত মিলিয়ে যায় সব। চুরচুর করে ভেঙে যায় ওর
অবয়বরেখা। কান পাতলেই শোনা যায় তার শব্দ।
দরজায় ধুপধাপ শব্দ হয়। জানি না কতক্ষণ পর আমার ঘুম ভাঙল। আমাকে দেখে বাড়িওয়ালি মিসেস পিটারসন শব্দ করে হেসে ফেললেন।
‘তোমার বন্ধুটি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল!’
তারপর
ইমনের কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললেন, দিস ইজ কলড জেট ল্যাগ, ইয়াংম্যান!
ভদ্রমহিলা বেশ হাসিখুশি। দুয়েকটা জরুরি কথা বলে আমাদের একা ছেড়ে দিয়ে তিনি আবার নিজের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলেন।
ইমনের
মুখটা দেখে আমারই হাসি পেল এবার। এত ভাবনা কেন? বন্ধু তো আমরা তখনো ছিলাম না। এখন পরস্ত্রীর প্রতি এত আদরযত্ন কেন!
না, এখনো কারো স্ত্রী আমি হইনি। বাগদত্তাকে স্ত্রী বলা চলে কিনা এই
মুহূর্তে সেসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছে না।
উজ্জ্বলের সঙ্গে সম্পর্কটা
পারিবারিকভাবে হয়েছে। ফলে সুবিধা যা হয়েছে এ বয়সে দিব্যি প্রেমটেম করতে পারছি। ‘এই বয়সে প্রেম’ মানে
ভোর ছ’টায় ডেকে দিয়ো, অমুকদিন ডেডলাইন, কাগজপত্র
জমা দেবার কথা মনে করিয়ে দিয়ো, এইসব!
উজ্জ্বল আমার পাশের স্টেটের একটা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোগতত্ত্ববিদ্যার শিক্ষক। গত বছর সে দেশে বেড়াতে গেলে পারিবারিকভাবে আমাদের আলাপ হয়। আমার কোর্সের চাপ কমলে খুব শিগগিরই বেড়াতে আসবে আমার এখানে। তখন কোথায় থাকবে আজকের এই ইমন কল্যাণ, কোথায় থাকবে গত কয়েক ঘন্টার অসম্ভব সব ভাবনার কাটাছেঁড়া, স্মৃতি রোমন্থন! সব ফুৎকারে উড়ে যাবে কোথায়!
কিন্তু সে পর্যন্ত এই সময়টাকে অস্বীকার করি কী করে? কোনভাবে ভদ্রস্থ হয়ে ডিনার করব বলে পাশে বসা মানুষটির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেও এখন আমার গায়ে রীতিমতো কাঁটা দিচ্ছে। কোথায় যাচ্ছি জানি না কিছুই। ওর বাসায় কে কে আছে তাও বলেনি এখনো। এসব প্রশ্ন এখন করি কী করে? নাকি আমি অযথাই বিশ্রী সব ভাবনা ভাবছি! সামান্য একটা ডিনারই তো। ছেলেটা শুরু থেকেই আমাকে সাহায্য করেছে। তাতে আমার যদি পুরনো রোগটা জেগে ওঠে তবে ওর দোষটা কী? উঃ! আমার মাথাটা গুলিয়ে যাচ্ছে আগের মতন।
ইমন গমগম করে কী সব যেন বলছে। আমি কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করছি।
‘বলছি যে
আমার একটা বন্ধু হয়েছে এখানে। কিন্তু আজকে ও শহরের বাইরে আছে। নইলে আজই দেখা হতো তোমাদের’।
‘বন্ধুউউ?’
আমার
প্রশ্নের ভঙ্গি দেখে ও শব্দ করে হাসল। তারপর টেনে টেনে বলল, হ্যাঁ গো! বন্ধুই! বান্ধবী হয়নি এখনো।
বান্ধবীর কথা জানতে
চেয়েছে কে? আগ বাড়িয়ে এসব বলবার মানে কী! মনে মনে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিতেই দেখতে পেলাম ওর ঠোঁটের ভাঁজে হাসির রেশ
রয়ে গেছে।
ইমনের ঘরটা ছোট এবং পরিপাটি। সুন্দর, ছিমছাম। আমি ঘুরে ঘুরে দেখছি। দেয়ালের ফটোফ্রেমে পুরনো কিছু পারিবারিক ছবি। ওর গ্রাজুয়েশন ডে'র ছবি। সৈকতে দাঁড়ানো ছবিটা দেখে বুকের ভেতর রক্ত ছলকে উঠল আমার। সেই আগেকার মত! কিচ্ছু বদলায়নি! এই ছেলের জীবন কেন এখনো নারীবিবর্জিত? একথাও মানতে হবে আমায়!
খেতে বসে মনে মনে যা
ভাবছিলাম তাই উগড়ে দিলাম। ইমন যেন ওর কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কথাটা বলে ফেলে
আমার নিজেরও হাত কামড়াতে ইচ্ছা করল।
কেন তোমার কখনো বান্ধবী
হয় না? নাকি তোমার ছেলেদেরই ভাল লাগে?
ইমন
বিষম খেতে খেতে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। ওকে পানিটা এগিয়ে দিতে দিতে যোগ করলাম, হতেই পারে এমন। তুমি আবার কিছু মনে করো না… না মানে এমন তো হয়ই, বিশেষ
করে এসব দেশে তো হরহামেশাই…
আমাকে হাতের
ইশারায় থামিয়ে দিয়ে ইমন বলল, মনোমত কাউকে পাইনি বলে বিয়ে হয়নি রে। তাছাড়া দেশে যাইনি কত বছর হয়ে গেল! কে ভাই কাঁধে নেবে বল তো এসব ঝামেলা!
হুম, ঝামেলাই বটে! মেয়েমানুষ মানেই ঝামেলা…
ইমন খাওয়া থামিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। নিজের কথায় আমি নিজেও অবাক হচ্ছি। এমন জঘন্য সব শব্দচয়ন! এত নার্ভাসই বা কেন হচ্ছি! ওর দৃষ্টির সামনে সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। অথচ ভেবেছিলাম খুব বুঝি প্রেমে পড়েছি হবু বরের। কয়েকবার ডিনার করেছি উজ্জ্বলের সঙ্গে, কখনো তো আজকের মত আবোলতাবোল বকিনি, নিজের ভেতরের ধুকধুক শব্দটা এতটা জোরে শোনা যায়নি তো এর আগে! এ কোন সর্বনাশের মুখে এসে পড়লাম আমি?
ইমন চোখ
নাচিয়ে বলল, হুম, যারা
বুকের মধ্যে সবকিছু চেপে রাখে, সুযোগ পেলেও মুখের আগল খোলে না, তারা তো জ্বলজ্যান্ত ঝামেলাই।
এই ছেলেটা আমাকে এমন বিভ্রান্ত করছে কেন! বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলির মত! ওর কিছু বলার থাকলে কেন বলছে না?
উল্টো
আমায় প্রশ্ন করছে, তোমার খবরাখবর কী? এবার তোমার কথা বলো!
‘আমার কোন কথা নেই। কিচ্ছু বলার নেই।’
ইমন
হাসতে হাসতে বলল,
তোমার রাগের পারদ সেই
আগের মতই চড়া আছে।
আমি
সত্যি সত্যি রেগে গেলেও প্রাণপণে মুখে হাসির প্রলেপ ধরে রাখার চেষ্টা করছি। বললাম, আমার ফিয়ন্সেও একই কথা বলে!
আমার এই
হাসিটা আমার কানেই ঠিক হাসির মত শোনাল না। ইমন এবার রাজীবের প্রসঙ্গ তুলল। ওর
সঙ্গেও আমার যোগাযোগ নেই বহুদিন। সত্যি বলতে রাজীবের তরফ থেকে
আগ্রহের বাড়াবাড়ি ছিল।
‘কিন্তু হঠাৎ ওর কথা কেন?’
ইমন খানিকটা
ইতস্তত করছে এবার। এদিকে আমার বিরক্তির মাত্রাও বাড়ছে।
ইচ্ছে করছে ওর কলারটা চেপে ধরে জিজ্ঞেস করি, কিছু বলবে তো বল! এত ধানাইপানাই ভাল্ লাগছে না!
‘রাজীব তোমাকে… তোমার প্রতি ও… ইয়ে মানে হি ওয়াজ ইন লভ!’
রাজীবের
ব্যাপারটা আমি জানতাম। কিন্তু ওটা পুরোপুরি একতরফা ছিল বলে কিছুই এগোয়নি। এতদিনে ও
হয়ত বিয়েটিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছে। কে সেসবের খোঁজ রাখে!
খাওয়াদাওয়ার পর এসব প্রসঙ্গে আর কিছু বলল না ইমন। আমার মনে হল কিছু একটা বলতে গিয়েও সে বলতে পারছে না। প্যাটিওতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজের পড়াশোনার আলাপ করল। ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সম্পর্কে জানাল। আমার কোর্স নিয়েও জরুরি কিছু তথ্য দিল। এবং সবশেষে জানাল যতদিন আমার নিজের গাড়ি হচ্ছে না সে আমাকে লিফট দিতে পারে অনায়াসে।
আমি মনে
মনে বলি,
রক্ষা করো! প্রত্যহ এই
মুখদর্শন করলে আর হয়েছে আমার পড়াশোনা!
বাড়ি ফেরার সময় আমার আর
তর সইল না। টুপ করে ডুবে গেলাম ঘুমে। দুলতে দুলতে জানি না চলে যাচ্ছি কোথা থেকে কোথায়। কোনো সৈকতে? বালুচরে? আমায়
মাথায় সলমাজরির ওড়না। কোনো আগন্তুকের হাত ধরে ছুটে চলেছি। হঠাৎ জাদুর মন্ত্রে এবার
দুজন উড়তে শুরু করলাম।
সে বলে
উঠল, তোমাকে বলব বলব করে বলা হয়নি কথাটা।
আমি বললাম, কথাটা আমি জানি, তবুও শুনতে চাই।
সে মাথা
নেড়ে বলল,
কথাটা বলতে নেই, বললে
জাদুটা আর থাকবে না।
তার সঙ্গে হাওয়ায় দুলতে দুলতে উড়তে শুরু করেছি আবার। অনেকটা পথ পেরিয়ে আসার পর আমার কাঁধের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে আলতো গলায় সে ডেকে ওঠে। ‘চলো!’
আমি সেই
অতল থেকেই বলে উঠি, ‘চলো’।
তারপর তিনশ বত্রিশ নম্বর অ্যাশলে স্ট্রিটে আমার অ্যাপার্টমেন্ট-এর সামনে নিজেকে আবিষ্কার করি। আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় ইমন। যাবার আগে 'গুডনাইট' ছাড়া আর কিছু বলে না। বলে ফেললে জাদুটা থাকবে না বলে?
ঘরে ফিরে কান্নাটা গিলে
নিতে নিতে আবার বিছানায় তলিয়ে গেলাম আমি।
তখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম? তবে কেন
এমন স্পষ্ট করে শুনতে পেয়েছি কথাটা? সে বলছিল 'চলো'।
আমি যাব
বলেই তো অপেক্ষা করেছিলাম সেই কবে থেকে!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন