কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫ |
মাইক
জনগণ যেহেতু সকল ক্ষমতার উৎস, সেহেতু তথ্য জানা জনগণের
অধিকার! এই বাক্যটা রাষ্ট্র বিশ্বাস
করে বলেই জনগণের কাছে কোন তথ্য গোপন করে না! ভেতর এবং বাইরের সব কিছু সে জানিয়ে
দিতে পছন্দ করে।
কেননা সততাই একমাত্র শক্তি যা
সরকারকে সুস্থ রাখে! ফলে মহামারী নিয়ে যখন প্রচার মাধ্যমগুলোতে সাংঘর্ষিক তথ্য
প্রচার হতে লাগলো আর জনমনে বিভ্রান্তি জন্মাতে শুরু হল, তখন সরকার সকল অপপ্রচার নিরাময়ের দায়িত্ব গ্রহণ করলো! সত্য এবং সঠিক তথ্য প্রচারের জন্য সরকার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে
প্রত্যেক শহরে ও
গ্রামের সাতটা জায়য়গায়
একটা করে বেদি নির্মাণ করলো! বেদিটাকে একচালা টিনশেড
দিয়ে আচ্ছাদিত করলো।
চারদিকে ফাঁকা।
টিনের চালের উপর সরকারের লোগোবাহী একটা সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা ‘সরকারী মাইক’। বেদিতে একটা শক্ত খুঁটো পুঁতে
রাখা! জনগণ অপেক্ষায় থাকলো, ব্যাপারটা কী?
মাইক লাগাতে শেড কেন?
যেহেতু সরকার কোন বিভ্রান্তি পছন্দ করে না, সেহেতু সে এই ভ্রান্তিও দূর করে দিলো! দু’দিন পর টিনশেডের নিচে খুঁটোয় শহরে এবং গ্রামের সাতটা
পয়েন্টে একটা করে গাধা বেঁধে
দিলো সরকার! তিনবেলা কর্পোরেশনের
কর্মকর্তারা এসে খাবার দিয়ে যেতে লাগলো! একদিন বেশ হইচই করে ব্যান্ডপার্টি এনে
বাজনা বাজিয়ে লাঠি ঘুরিয়ে উদ্বোধন
করা হল ‘সরকারী মাইক’!
এরপর থেকে দরিদ্র, উন্নত
দরিদ্র বা অনুন্নত দরিদ্র এবং
নিকৃষ্ট দরিদ্র মানুষেরা প্রত্যেকনদিন বেদির চারপাশে এসে বসে থাকতো খবর শুনতে! গাধা কখনো কখনো কাঁদত, কখনো হাসত, কখনো বিড়বিড় করতো, কখনো হেঁচকি তুলত! কিন্তু
জনগণ এইসবের কিছুই বুঝতে পারতো না! কেননা গাধার ভাষা মানুষ তখনো শেখেনি! কিন্তু
মানুষ যে অসীম প্রতিভা নিয়ে জন্মেছে তার প্রমাণ কিছুদিনের মধ্যে টের পাওয়া গেল!
গাধার হাসি, কান্না,
হেঁচকি কিংবা বিচিত্র মুখভঙ্গিমা থেকে শারীরিক
বিচিত্র মুদ্রার লক্ষণ অনুবাদ করে একটা ভাষা আবিষ্কার করে ফেললো এইসব মানুষেরা। গাধা যদি হাসত তাহলে জনগণ বলতো, আজ পরিস্থিতি ভালো! মৃত্যুর সংখ্যা কম! গাধা যদি কাঁদত জনগণ বিড়বিড় করে বলতো, আহা রে! অবস্থা ভয়ঙ্কর, মৃত্যুর সংখ্যার বেশি। গাধা যদি হেঁচকি তুলত তাহলে জনগণ বলতো, পরিস্থিতি মোটামুটি, ভালোর দিকেই মনে হয়! তবে
মানুষেরা সন্তুষ্ট হতে শুরু করেছিল, কেননা বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোর কণ্ঠনালী চেপে ধরা হয়েছিল, আর গাধাগুলোর
ছিল হেঁচকি তোলা রোগ! ফলে সবাই হেঁচকি
খেতে লাগলো, ‘পরিস্থিতি মোটামুটি, ভালোর দিকেই মনে হয়!’
কিছুদিন পর ভিড় কমে আসতে
শুরু করলো! মৃত্যুর সংখ্যা নজরে পড়তে লাগলো! জনগণ সংবাদের জন্য গাধার কাছে যাওয়া
কমিয়ে দিলো! কেননা অভাব তুমুল বেড়ে গিয়েছিলো, সকলেই থাকতো চাল যোগাড়ের ফিকিরে! তবে
সদয় সরকারের সংবাদ পৌঁছে যেত তখন দরজায়
দরজায়, কেননা জনগণের মধ্যেই তখন গাধা জন্ম নিচ্ছিল! সরকারের কট্টর সমর্থকরা প্রত্যেকে গাধামাইক হয়ে উঠতে
লাগলো! তারা বলতে লাগল, ‘পরিস্থিতি
মোটামুটি, ভালোর দিকেই মনে হয়!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন