কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫ |
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয়বার
কলিংবেল বাজাতে গিয়েও হাত সরিয়ে নিল সুমনা। ভাবল, থাক, একটু আগেই তো ফোনে কথা হয়েছে!
বিরক্ত হতে পারেন উনি।
রোজ
সন্ধ্যেবেলা সেন্ট্রাল রোডের এই রাস্তায় আসে সুমনা। টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ঠিক সামনে
একটা কোচিং–এ পড়ায় সে। বিজ্ঞাপনে দেওয়া নাম্বারে কল করে যখন জানতে পারল জায়গাটা ঠিক
সেন্ট্রাল রোডের উপরেই, তখন একবার যাওয়ার পথে দেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সুমনা। খবরের
কাগজে বিজ্ঞাপনটা হঠাৎ করেই তার নজরে এসেছিল।
একেবারে কাকতালীয় ব্যাপার। এ ধরনের বিজ্ঞাপন এর আগে কখনও তার চোখে পড়েনি। হয়তো বা এমন
বিজ্ঞাপন আদৌ কেউ কখনও দেয়ও না। সুমনা ঈশ্বরবিশ্বাসী, ধর্মভীরু। তাই সে ভেতর থেকে একটা
আকর্ষণ বোধ করেছিল।
বেশিক্ষণ
আর দাঁড়াতে হল না। একজন বৃদ্ধা মহিলা খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসে বারান্দার গেটের তালা খুলে দিলেন। বৃদ্ধার চেহারায়
অসুস্থতার ছাপ স্পষ্ট। নিজেকে প্রায় টেনে নিয়ে হাঁটছিলেন।
ঘরের
নরম সোফায় বসে কিছু প্রাথমিক কথাবার্তা হল। বৃদ্ধা বললেন, এছাড়া আমার আর কিছু করার
ছিল না। আমার স্বামী গত হয়েছেন বছর দুয়েক আগে। ছেলে নাস্তিক, ব্যাঙ্গালুরুতে থাকে।
ঐ একটিই ছেলে। ও এসবের ধার ধারে না। বৌমাও
ঠিক ওর মত। সেকথা ওরা জানিয়ে দিয়েছে অনেকদিন আগেই। অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ
প্রায় বিচ্ছিন্ন। আর আমারও শরীরের যা অবস্থা তাতে নিজেকে সামলে নিত্যপুজো দেওয়া একেবারেই
অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। তাই শেষপর্যন্ত কাগজে বিজ্ঞাপনই দিয়ে দিলাম। ভক্তিশ্রদ্ধা দিয়ে
যে রোজ ফুল জল আর রাতে শয়ন দিতে রাজি হবে তাকে আমি ওই পিতলের গোপালবিগ্রহ দান করে দেব। গোপালকে
কখনও অভুক্ত রাখতে নেই।
এদিকে
সুমনার মনেও তোলপাড় শুরু হয়েছে, কারণ তার চোখ চলে গেছে দেওয়ালে টাঙানো একজন সুদর্শন যুবকের ছবির দিকে। অনেকক্ষণ
ধরেই তার চেনা চেনা লাগছিল যুবকটিকে। প্রায় বছর পনেরো আগে কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে যুবকটি
তার কোনও এক আত্মীয়ার সাথে পাত্রী নির্বাচনের আসরে তাকে দেখতে এসেছিল বরানগরের বাড়িতে।
সুমনার
দোষ ছিল, সে ভীষণ ধর্মভীরু, কিন্তু ঐ যুবকটি চাইছিল একজন নাস্তিক জীবনসঙ্গিনী। কাজেই সে যাত্রায় সুমনাকে ঐ
সম্বন্ধ থেকে বাতিল করেছিল যুবকটি।
ছবি
থেকে চোখ সরাল সুমনা। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল তার। সে শুনতে পেল বৃদ্ধা তাকে জিজ্ঞাসা
করছেন, তুমি রাজি?
Besh valo golpo
উত্তরমুছুন