কবিতার কালিমাটি ১০১ |
তির ছোঁড়া বিকেল
তোমার চুল উড়ে বিকেলের মেঘ হয়ে নামে
হাসি নেই বলে গম্ভীর কোনো সন্ন্যাসিনী এসে
দাঁড়ায়
নিজের ম্লান ছায়ার পাশে অন্ধকার এঁকে রাখি
কাউকেই ডাকতে পারি না
এই অন্ধপ্রবাহ থেকে
সময়ের নিঃসঙ্গ বলয় ঝরে যায়
ভিক্ষাপাত্র ভ'রে ওঠে বিষণ্ণ আঁধারে
কেউ কাউকেই বলতে পারে না কথা
আত্মঘাতী তীব্র নীরবতা
কোনো নিষাদের তীর…
বাউল
প্রেমের জন্য হাঁটি…
সংসার হোক গাঁজাখোরের আস্তানা
রাই কিশোরি, আজ তুমি গাও
গাও সেই অন্তরা
পুবের আকাশ থেকে মেঘ নামছে
নীলিমায় কী সুর মেশাও?
নদীকে যৌবন দিয়ে
আজ আমি জয়দেব মেলায়…
রাই কিশোরি, প্রেম দাও
তোমার অলীক হাতে বেজে উঠি আমি
কলতলা
রোজ কলতলা মুখর হয়
বাসন-যুবতীর বাজনায়।
এই স্যাঁতসেঁতে ভাড়াবাড়ি
ঘুম ভেঙে আমাকে জাগায়।
কোন্ নদী রোজ আসে?
কেমন তার ঢেউ?
জলোচ্ছ্বাস নেই তবু অলক্ষ্যে ভেজায়!
গলা-উঁচু কলসি অথবা বালতির হুঁকে
যৌবনের নীলমেঘ ভেসে ভেসে আসে
ঝকঝকে কাঁসার থালা ছাই মেখে হাসে
আয় ভাত, দু'বেলা বেদনা মেখে
পেট ভরুক এ শহরে—
আমাদের কলতলা বৃন্দাবন
প্রেম হোক গরিবের ঘরে।
দীক্ষা
আর একবার শুয়ে পড়ি ঝরনার পাশে
গাছপালা পাখি আর বৃষ্টির সংসারে
পদ্মাবতী, উঠে এসো এইসব মেয়েদের ভিড়ে
আমিও সন্ন্যাসী হব জয়দেবে এসে…
অজয় নদ ডেকে যায় বালিতে চাঁদের মায়া ফেলে
এতদিন পর রামি, চণ্ডীদাসকে খুঁজে পেলে?
কত ছেলেমেয়ে ভেসে গেল প্রেমের বন্যার
কেন্দুলি-জয়দেব থেকে আমিও ফিরব না
আমার বাড়ি
ওড়ে সব সন্ধ্যাবেলার পাখি
দূর হতে দেখি তাদের ডানার রঙ্
কেউকে ডাকি না কোনওদিন
একা একা থাকি
আমার গোধূলিরাঙা বাড়ি
বাড়িতে নীরব অভিমান।
একটি বিপন্ন ঘোড়া
ক্ষত সামলে ছুটে যাচ্ছি
যুদ্ধের মাঠে
একটি বিপন্ন ঘোড়া —
পিঠে সংসার চেপে আছে
দীর্ঘশ্বাস ফেলছে সদস্যরা !
অবিনশ্বর
আমি রোজ মৃত মানুষের কাছে যাই
মৃত মানুষেরা বেঁচে আছে
এই জ্যোৎস্না বায়ুপ্রবাহ জলের কল্লোলে
বেজে ওঠে আর্তস্বর, অবিনশ্বর ভাষাগুলি
ডালে ও পাতায় তারই মর্মর ধ্বনি তোলে।
আকাঙ্ক্ষিত
শূন্যতার সংকেতে বিমর্ষ স্বপ্নগুলি
অন্ধকারে চলাফেরা করে —
আমরা বিস্ময়ের আলোয় তাদের কাছে যাই
সব দরোজাকেই মনে হয় স্বপ্নদের ঘর
যদি দ্বার খুলে ডেকে নেয় !
দৃশ্য
বরষার জলে ভরসারা স্নান করে
আমি শুধু দৃশ্য মুদ্রিত করি
নিস্তব্ধতার জানালায়
চেয়ে থাকে আমার দুঃখের উট
পিঠে তার আদিম অন্ধকার...
সব কবিতাগুলিই অসাধারণ ব্যঞ্জনাময় এবং মিথোলজিক্যাল ইমাজিনারির সফল প্রয়োগ।
উত্তরমুছুন