শিরোনামহীন
(৩২)
নামতার লেবুগন্ধে বিবশ
যে সকাল
আমি তার কার্নিশে বসে মৌতাত
মৌমাছি আসছে যাচ্ছে
কড়িকাঠের উঠোন থেকে
আউল-বাউল বাতাসে লেগে যাচ্ছে
ডানার আঠা
আমাকে কেউ গুণ করেছে
অথবা গুম
নয়তো গন্ধের এই ঝাপটায় নড়ে বসছি না কেন
কেন বাতাস আমার চুলে
খেলে যাচ্ছে না অজানা খেলা
আর মৌমাছি আমাকে না দেখেই চলে যাচ্ছে সর্ষেফুলে
বেলা তো গড়ায় না, যেন বুকে হামাগুড়ি
জলখাবারের টেবিল কখন ঘণ্টা বাজাবে
কখন দরবারে বসবে দিনের
রাজা সুসমাচার সহ
‘এসো, এসো’ বলে ডেকে উঠবে লোহার টিয়াপাখি
শিকড়ের জাল কতটা ছড়িয়েছে
জানে না কার্নিশের বালি পাথর
জানে, লোহার হাত-পা-বুকে বিদ্যুৎ খেলে গেলে
সান্ধ্য মদের টেবিল
বিলাপে ছয়লাপ হবে
নড়ে বসায় এতটা বিলোপ জড়িয়ে, জানতেও কি পারি!
(৩৩)
আলো জ্বালবার আগেই জ্বলে
ওঠে চোখদুটো
ইলশেগুড়ি অন্ধকার ভিজিয়ে দেয় পাতা
তবু দেখে চোখ, নেমে এল যেন প্রায় অপ্সরা
বেজে গেল অলংকার, অন্ধকার ফেঁড়ে আলো হল চোখ-সওয়া
উড়তে চাইলে ডানার অভাব
বোঝে চেয়ারগুলো
নামতে গেলে পা যেন আর পারে না
চেয়ারে বসে ভীষণ ভালোলাগার
কথাগুলো মনে এলে
অন্ধকারও মিচকি
চেয়ারের সঙ্গে বোজা
চোখের দূরত্বে ভেসে থাকে কলমা-পাড় শাড়ি
নালিঘাসে ছেয়ে যায় চোখের মণি
আমার আর তোমার মধ্যে
এক ব্যঞ্জনবর্ণের তফাত গড়ে দেয় ভারী স্থাবর
আলো তো এমনই, যেমনটা জ্বালবে
পরিক্রমা শেষে ঘোর লাগা
সুর্মায় সেতু জেগে ওঠে
তার দুপাশে আলো, মধ্যে অন্ধকার
তার স্তম্ভে লেজ-ঝোলা পাখি, নীচে ধ্বনির বাঁশি-স্রোত
না-আলো না-অন্ধকার স্তরে চোখ তবু ভ্রমণমুখর
(৩৪)
কেন তার সংগোপনকে আড়াল
করে মৃত্যুমুখী
যাওয়ার আগেও ধাতুশীতল নীরবতা
যাওয়ার ফ্রেমে নিরুচ্চার চেতনবলয়
সংগোপন তামসপ্রিয়, আলো না ফেলে আড়াল কেন
কথা-পাওয়া মানুষ পাখি কিংবা গাছের সঙ্গেও কথা বলে
তার ভেতরের আমিটাকে পাথরে ঘষে
বাইরের শীতলপাটি গুটিয়ে রাখে না
এক লপ্তে পাওয়া আকাশ
যাপনের ছেঁড়া সুতোগুলো জুড়তেই চায়
মনের কোণে থাকা সংগোপন
স্মৃতিসারণির শেষ দিকের মৌল
প্রকাশ ও অপ্রকাশের ভেতর পিচ্ছিল সর্ষেদানা
আলো পরিত্রাণ জেনেও আগল তোলা আলতো
মারিনার লম্বা বিচে
বালিক্লান্ত অজগর শিশুহরিণের পা-ধ্বনিতে সাড়া দেয় না
শোক-পুস্তিকার আগে আড়ালে থাকা কনফেশন ঘর জেগে থাক
সংগোপন থেকে বেরিয়ে আসবে বিষথলির লাভা
আবহাওয়ায় অমৃত হবে
মৃতের দেশ থেকে নেমে
আসা রথে সওয়ারি হতে আড়াল থাকবে না
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন