কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৯

পিয়াল রায়




মাছবন্দী বেলা  


(১)

মাছেদের কবিতা লেখা নিষেধ
মাছেদের জন্যও কবিতা লেখা নিষেধ

আমি যতদূর  জানি কোনো মাছই
কবিতার ভাষা বোঝেনি কোনোদিন
কেবল ভয় পেয়েছে
আর সরে সরে গেছে নকল জলার দিকে

তাদের আঙুলে আঙুলে নাগিনীর মৃত চুল
খেলছে, খুলছে, জট পাকিয়ে পাকিয়ে
গড়ে তুলছে নিরেট পাহাড়
পাথর থেকে পাথর হাতড়ে হাতড়ে
সমুদ্রে পুঁতে চলেছে একটার পর একটা ঠান্ডা পেরেক

পেরেকেরও বলিহারি
রক্ত দেখার এত শখ যে
খুনির মতো চেহারা নিয়ে
আমূল বসে গেল নরম পাঁজরে !  

এখানেই আমি থেমে যাই।
মাছের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে
মন দিই গাছের দিকে

খুঁজে বের করি কাছাকাছি কোনো
               ঠাঠাপোড়া গাছ আছে কিনা 

যার শিকড়ে আমি নিজেকে মিশিয়ে দিতে পারি


(২)  

মাছ সম্পর্কে খুব বেশি জানা নেই আমার
শুধু এটুকু জানি
মাছের চামড়ায় এমন কিছু  আছে
যা চকচক করে রোদ পড়লেই

আর যেটুকু যা বলা যায় সবটাই অনুমান
যেমন, মাছ এক শান্ত প্রাণী 
বিপদ দেখলেই লেজের ঝাপটায় ঘুলিয়ে তোলে জল
আর কাদার তলায় বসে চোখদুটো
খুলে রাখে পাথরের পাশে 
অনেক দূরে তার নজর তখন
সাঁতরে বেড়ায়, হা হা করে হাসে
মায়ের জন্য রান্না করে অথবা
মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরোয় বিকেলের সাইকেলে
মুহূর্তমাত্র আগের কথা মনে থাকে না আর
মনে থাকে না তালুর ওপর ছুরি দিয়ে কেউ
লিখে রেখে গেছে, 'এই শীতেই তোর মৃত্যু হোক' 

মাছের কপালের যে রেখাগুলি
এতদূর এসে থমকে গেছে
ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে
সেখানে অনন্ত মৃতজলের কথন
যেগুলি ডিঙিয়ে সে আজ
              এখানে এসে পৌঁছেছে

এই সাদা পায়রা আর ঝর্ণার দেশে


(৩)

আমার সাথে মাছের খুব যে মিল আছে
তা নয়, তবে মাঝেমধ্যে যখন দুজনেই
বিছানায় গড়িয়ে দিই বিষাক্ত পারা
মিলটা তখনই চোখে পড়ে

হাওয়ায় ফুটে ওঠে শত শত  নির্বাক চোখ
আমরা দেখি
প্রতিক্রিয়া বলতে ঘরের আয়তন ছোট করতে করতে
নিষিদ্ধ করি রাতের বিনয়
আর প্রতিবার জল ঝারতে ঝারতে
শরীর থেকে উপড়ে ফেলি নিজেদের 

দৌড়তে থাকি 
চেঞ্জিংরুমে
পিতল গলানো তাপে গলিয়ে ফেলি
আমাদের বুক, পেট, ঊরুসন্ধির 
মৃদু লাল অভিমানরেখা

তারপর আবার যে কে সেই

মাছ খেলতে থাকে জলের ভিতর

আমি গাছ হয়ে পারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
হাসতে থাকি 





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন