অবিরাম স্বপ্ন
মুখ
স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনার একটা বাতিক আছে আমার। কেউ কোন স্বপ্নের গল্প বলতে শুরু করলে আগ্রহ নিয়ে
শুনি। প্রায়ই গুগলে স্বপ্ন নিয়ে তথ্য খুঁজি। মনে হয় নি:সঙ্গ মানুষ বুঝি বেশি মাত্রায় স্বপ্নের দোলাচলে ভোগে। আজকাল কি
কেউ নি:সঙ্গ থাকে? পৃথিবী জুড়ে মানুষ আর মানুষ।
ফোন অন করলেই ভার্চুয়াল পৃথিবী। আরেক গ্রহ। হাত বাড়াবার মতোই।
ফোন অন করলেই ভার্চুয়াল পৃথিবী। আরেক গ্রহ। হাত বাড়াবার মতোই।
স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি বিছানা থেকে উঠে বসে লিখে রাখতে
চেষ্টা করি। একটা কুয়াশা রঙের আধোছায়া আধোস্পষ্ট টুকরো টুকরো একটু আগের অতীত
সব। কোথায় যে মিলিয়ে যায়, ফেনার মতো। ছোট ঢেউয়ের
মতো।
একটু আগে দিলীপদাকে স্বপ্নে নাগাল পেলাম। চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির দল করত। কোন হিন্দু ছেলে ইসলামী দল করতে পারে তা ভাবনার উল্টো
পাড়ের মহাদেশ। একবার আমরা রাতের বেলায় ক্যাম্পাসে দেয়ালে চিকা মেরেছিলাম। আমার হাতের
লেখা ভালো বলে ভারটা আমার উপর পড়ল। শাহ আমানত হলের সাদা ঝকঝকে
দেয়ালে বড় বড় করে লিখলাম;
দিলীপের হাত থেকে শিবির বাঁচাও…
পুরো ক্যাম্পাস পরের দিন হৈচৈ। আমার নিজেরও
খারাপ লাগছিল অমন সুন্দর সাদা দেয়ালে কী বিশ্রী কালো রঙে দেয়াল লিখন।
দিলীপদাকে বলছি;
: দাদা আপনাকে দাড়িতে
বেশ লাগে। কবির বেদীর মতো লাগে।
দাদা হাসছে।
: দাদা আপনার সুন্দর
ক্যাসিও হাতঘড়িটা কই?
দাদা হাসছে।
দাদা হাসছে।
দিলীপদা মাথা ঝুঁকে
হাঁটছেন। মনে হলো সময়ের ভারে ক্লান্ত। নোয়ানো
রাজনীতিতে বয়স দৌড়ে পালাচ্ছে। আমাকে বললেন;
: চলো আমার সাথে।
আমরা দুজন হাঁটছি। রব ভাইয়ের
দোকান থেকে ডিম পরোটা খেয়ে ৫৫৫ সিগারেট ধরিয়ে হাঁটছি। ক্যাম্পাসে
কেউ নেই। উঁচু নীচু শহীদ আব্দুর রব সড়ক। তাল মিলিয়ে
দাদা’র সাথে পারছি না। দূরে চলে যাচ্ছেন কুঁজো হয়ে। একটা হুমহুম
শব্দ। ব্যালাড অব সোলজার ছবির মতো। স্বাধীন
পথচারীর মতো। রাস্তার মাঝখান দিয়ে সপসপ হাঁটার স্বাধীনতার মতো।
দিলীপদা ছায়ার মতো মিলিয়ে যেতে থাকে। জোরে ডাক
দিতে চাই। কে যেন স্বর চেপে ধরে। ঘামতে থাকি
কুলকুল। ফাইন আর্টস ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে পৌঁছাই। দিলীপদা
আমার সামনে লম্বা একটা দেবদারু গাছের মতো দাঁড়ায়। ওর হাতে
একটা আশ্চর্য পেইন্টিং।
বিস্ফারিত তাকিয়ে দেখি সেই বিখ্যাত ছবিটা। সালভাদর
দালি’র ১৯৩১এর ছবি। দ্য পারসিসটেন্স।
দিলীপদার হাত থেকে গলে পড়ছে রঙ, সময় আর ঘড়ি...
ঘড়ি তার তিন বাচ্চাকে ডেকে বলল;
:
শোনো
বড়টা খানিকটা শান্ত, মেজোটা খানিক অস্থির। ছোটটাকে থামানো দুরূহ।
তিনজন শুনছে। ঘড়ি বলছে;
:
ঐ যে সমুদ্র দেখছ, ওটার ঢেউ আর তোমাদের কেউ বন্দী করতে পারে না। মুক্ত তোমরা।
ছোটটার নাম সেকেন্ড। ও লাফাতে লাফাতে বলে;
:
ঠিক ঠিক ঠিক
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন