কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পারমিতা চক্রবর্ত্তী




লিটিল ম্যাগাজিনের একাল সেকাল



১৮১৮ সালে এপ্রিল মাসে শ্রীরামপুরে 'দিকদর্শন' পত্রিকার মধ্য দিয়ে বাংলা লিটিল ম্যাগাজিনের বা সাময়িক পত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল লিটিল ম্যাগাজিন সমাজের মধ্যে বাস করে সময়ের মধ্যে বাস করে সমাজচেতনা একটা বড় জায়গা সমাজের মধ্যে মানুষ আছে মানুষকে বাদ দিয়ে সাহিত্য নয়; লিটিল ম্যাগাজিন তো নয়ই! লিটিল ম্যাগাজিন সমাজকর্মী বা Social worker নয়  কিন্তু সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারে না সেরাজনীতি,  অর্থনীতি, সমাজভাবনা, নৃতত্ত্ব, জীবনযাপন সবই সমাজের অঙ্গ লিটিল  ম্যাগাজিন সেই কাজটি দায়িত্ববোধ থেকেই হোক বা কর্তব্যবোধ থেকেই, সে কাজ  করে চলেছে সর্বোতভাবে সুতরাং এর দায়িত্ব অনেক বিস্তৃত লিটিল নামটি আক্ষরিক অর্থ এক্ষেত্রে অনেক বৃহৎ, যার নিদিষ্ট কোনো পরিধি নেই সমাজে বসবাসকারী মানুষের জীবনবোধ, তাদের সমাজভাবনা এর অন্তর্গত

বর্তমানে বহু পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু সব পত্রিকা কি লিটিল ম্যাগাজিন?  

কোন পত্রিকা সাহিত্য পত্রিকা বা কোনটা লিটিল ম্যাগাজিন, সেটাই আমরা জানি নাসব পত্রিকা লিটিল ম্যাগাজিন হতে পারে না অক্ষরশোভা লিটিলম্যাগ   হতে পারে না সবাই কি সম্পাদক হতে পারে? প্রশ্নটা নিজের কাছে সম্পাদকের  একটা নিজস্ব যোগ্যতা থাকবে না?  সেই যোগ্যতা অর্জন করতে গেলে যে ত্যাগ আমাদের করতে হয়, তা আমরা করি না কতগুলো লেখা ছাপিয়ে দিয়ে  সম্পাদনার কাজ শেষ করি। সম্পাদক মানে কী, তাই আমরা জানি নাযখন  একটি লেখা সম্পাদকের কার্যালয়ে জমা পরে তাকে সম্পাদক নিজ গুণে ও যোগ্যতায় সম্পাদনা করে প্রকাশ করবেন, প্রয়োজন হলে তা পরিবর্তন করে প্রকাশ করবেন(অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিয়ে)বর্তমানে আমার মত বেশির ভাগ সম্পাদক অক্ষরশোভাপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলা লিটিল ম্যাগাজিন গবেষণাগার প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ দত্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “সম্পাদনা একটা গুণ, মেধা ও  মনীষা সেটা সবার থাকে না লিটিল ম্যাগাজিনে তার অবদান অনস্বীকার্য”

লিটিল ম্যাগাজিন কোনটা, তা সঠিক মানুষ ঠিকই খুঁজে নেবেএকসময় যে কোনো সাহিত্য পত্রিকাকে লিটিল ম্যাগাজিন বলা হত। এমনকি সাহিত্যের ‘আঁতুড়ঘর’ বলা হত কিন্তু কোনো লেখককে লালন করা লিটিন ম্যাগাজিনের কাজ নয়। সঠিক লেখক ও সঠিক লেখার সহবস্থান হল লিটিল ম্যাগাজিন
লিটিল ম্যাগাজিন পাঠককে দিক নির্দেশ করতে চায় একে একটা সম্বন্ধ-সৃজন মঞ্চ বলা চলে পাঠককে যাতে তার রসনা থেকে বঞ্চিত না করা হয়, বরং পাঠককে সঠিক পথে চালনা করাই লিটিল ম্যাগাজিনের কাজ

বর্তমানে লিটিল ম্যাগাজিন কোন পর্যায়ে?

বর্তমানে লিটিল ম্যাগাজিন একটা আন্দোলনের পর্যায়ে চলে এসেছে আন্দোলন মানে একটা দোলাচল বা নড়াচড়া আন্দোলন শব্দটির প্রতি জোর দিচ্ছি এই  কারণে, একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্য নয় সমগ্র সাহিত্য  জগতকে  এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য একদল মানুষ কাজ করে চলেছেন নিরলস ভাবে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন কোণ থেকে প্রান্তিক মানুষ প্রান্তিক ভাবে তাঁদের  কন্ঠস্বরকে তুলে ধরেছেন লোকসমাজ, সময়ভাবনা, লোকভাবনা, মানবধিকার এই জায়গাগুলো তুলে ধরেছে লিটিল ম্যাগাজিন এখানেই লিটিল ম্যাগাজিনের  সার্থকতা সামনেই সাময়িকপত্রের ২oo বছর পূর্ণ হবে৷ এই দুশো বছরে প্রচুর  উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে লিটিল ম্যাগাজিনকে চলতে হয়েছে যেমন  নকশালবাড়ি আন্দোলনএই সময় বহু লিটিল ম্যাগাজিন সেই আন্দোলনের পথযাত্রী ছিল দেশব্রতী, পূর্বদেশ, প্রস্তুতিপর্ব, লাললণ্ঠন, লিবারেশন, ফ্রন্টিয়ার - আরো অনেক পত্রিকা কাজ করে গেছে

বাণিজ্যিক পত্রিকার আগ্রাসী মনোভাব:

লিটিল ম্যাগাজিনকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলতে হচ্ছে লিটিল ম্যাগাজিনের  কোনো পেশাদায়িত্ব নেই, তাকে বাণিজ্যিক ধারার বিপরীতে কাজ করতে হয় কিন্তু তাকে পৌছতে হয় পাঠকের কাছে পাঠকের দাসত্ব করতে সে চায় না।  তাকে এগোতে হয় মূলত বিভিন্ন মেলার মধ্য দিয়েআজকাল গ্রামে গ্রামে লিটিল ম্যাগাজিন মেলা হচ্ছে লিটিল ম্যাগাজিনের পাঠক সীমিত ও নির্দিষ্টসেই মেলায় পাঠক খুঁজে নেয় লিটিল ম্যাগাজিন। আর এই খুঁজে নেওয়া ও পাওয়ার যে আগ্রহ, এটাই লিটিল ম্যাগাজিনের মূল জায়গাআজকাল ফেসবুক,   হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজে পৌছে যাচ্ছে লিটিল ম্যাগাজিনের কাজ  বর্তমানে অনেক লিটিল ম্যাগাজিন বই প্রকাশনার কাজে এসেছেএখন সে অর্থে বলা চলে এটা লিটিল ম্যাগাজিনের যুগ সততার সাথে সাহিত্যের জায়গাকে  এগিয়ে নিয়ে চলেছে লিটিল ম্যাগাজিন। ‘শত জল ঝর্ণার ধ্বনি’ অর্থাৎ নানা চিন্তা  ভাবনাকে পাথেয় করে এগিয়ে চলছে বাণিজ্যিক পত্রিকায় উৎকোচ দিয়ে  লেখকদের লেখানো হচ্ছে এবং পুরস্কার দিয়ে বাঁচতে চাইছকিন্তু এই বাঁচাটা সদর্থক নয়ফলস্বরূপ এইসব পত্রিকা গতানুগতিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে লিটিল ম্যাগাজিন বহু মাত্রায় কাজ করে চলেছেআর এখানেই বাণিজ্যিক পত্রিকা মুখ থুবড়ে পড়েছে কার্যত লিটিল ম্যাগাজিনকে মেরে ফেলার অনেক চেষ্টা হলেও পাঠক একে বাঁচিয়ে রাখবেবহু বাণিজ্যিক পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট হাউসগুলো যথেচ্ছ মনোভাবচ, লেখকদের টাকার বিনিময়ে লেখা কেনা - এই সমস্ত বিষয় দায়ী বাণিজ্যিক পত্রিকা বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে লিটিল ম্যাগাজিনে নেই কোনো বিজ্ঞাপন, নেই প্রচার, তবুও জোর দিয়ে বলা যায়, এটা লিটিল ম্যাগাজিনের যুগ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে তার সংখ্যা ও প্রভাব।



(ক্রমশঃ) 



2 কমেন্টস্: