হাওড়া ব্রীজ
আলোর
দুপুর ব্রীজে লেগে ঝকঝক করছে। শিয়ালদার ৪৪, ঢাকুরিয়ার ৩৭এ, বেহালার ১২সি,
সল্টলেকের ২১৫, সবাই নিজের রাস্তায়। সবাইকে একবার ভাল করে দেখে ছোট্ট একটা মুচকি
নিয়ে লাফ মারলাম। ৫০ ফুট উঁচু হাওড়া ব্রীজ থেকে সটান।
বেশ
সুন্দর স্পর্শ, ভালোলাগা। অনেকটা সাবানের মত, বুদবুদ। চারখানা অচেনা হাত আমায় ফুট
ম্যাসাজ দিচ্ছে। সে হাতে আলোর সোঁদাগন্ধ। আমার আশেপাশে অনেকে। সবাই আলোর দিক বরাবর। আরো অনেকে আমায় জড়িয়ে রেখেছে। বুঝতে
পারছি না, ভাসছি না ডুবছি না হাঁটছি। যে যার নিজের মত কবিতা বলছে, একসঙ্গে সেটা অনেকটা হাইম হয়ে ভাসছে। এখনো চোখ
খুলিনি। ইচ্ছেও নেই। অস্তিত্ব দিয়ে সবকিছু দিব্বি বুঝতে পারছি, দেখতে পাচ্ছি,
শুনতে পাচ্ছি। যারা তাদের নরম ছোঁয়া আমাকে অনবরত দিয়ে চলেছে, তারা কেউ জানতে চায়নি
আমার চামড়ার রং কী! আমিও চাই না। এখনো রাত হয়নি। জাল পেতে, হার্পুন গেঁথে কেউ
শিকার করেনি। আমার ইন্দ্রিয়গুলো একে একে খুলে যাচ্ছে, আমায় ছেড়ে যাচ্ছে, আমি আরো
ভাল করে বুঝতে শিখছি। পৃথিবী উজ্জ্বল হচ্ছে। কেউ শিখিয়ে দিচ্ছে না, অথচ আমার আলো
ফুটে উঠছে। এইসময় জলে একথালা সূর্য
নামল। আমাকে ছেড়ে এরা এগিয়ে যাচ্ছে, সবুজের প্রসেশন। মানুষ মাছ লতানে গাছ সবাই একে একে
জলের ওপরে রাংতার মত সূর্যের কাছাকাছি। উঠছে। ইচ্ছে নেই, তবুও, আমিও।
ঐ
তো সিঁড়ি। সোজা ব্রীজের ওপরে। বুদ্ধি মেপে মানুষ গাছ আর মাছ আলাদা করা হচ্ছে। আলাদা
লাইন। কেউ বসতে বলছে না, একগ্লাস জল এগিয়ে দিচ্ছে না। শুধু লাইনে দাঁড় করিয়ে
জলছাপ। জানি ওপরে গেলেই সবাই আমার স্ট্যাটাস জিজ্ঞেস করবে। আতসকাচে গায়ের জলছাপ
দেখতে চাইবে। হয়ত কাউকেই বোঝাতে পারব না আমি স্ট্যাটাস-ফ্রি। আমার নাম স্বাধীন,
আমার রং স্বাধীন, আমার ঠিকানা স্বাধীন, আমার আলো স্বাধীন।
আমি
কি নিচে ভেসে উঠব? নাকি ওপরে ডুবব?
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন