কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭

পারমিতা চক্রবর্ত্তী

ইনোসেন্স ইডিয়েট

প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়ে অনু দেখতে পায় অদ্ভুত এক দৃশ্য একটা কুকুর মুখে করে  নিয়ে যাচ্ছে রক্তাক্ত স্তন ৷ আশপাশ তখন সব নিস্তব্ধ ৷ ভোরের আলোয় চিল, শকুনের মুখ দেখা যায় শুধু ৷ বুকের ভেতরটা ধড়াস করে ওঠে অনু'র ৷ এলোমেলো  শরীর'কে সামলে হাঁটতে শুরু করে সে ৷ সামনে এগোতেই খালের পাশে দেখতে পায় ৫ -৬ টা কুকুর ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে কোন এক জিনিসকে ৷ ধীরে ধীরে কাছে এগোতে দেখে ১২ কি ১৩ বছরে'র একটি মেয়ে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে মাটিতে ৷ রক্তমাখা জামাকাপড় রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে ৷ যোনি রক্তে স্নাত । সারা শরীর ভেসে যাচ্ছে রক্তে ৷ কুকুরদের মুখে মুখে মাংসের টুকরো, চোখে নির্বাক দৃষ্টি । অল্প আলোয় মেয়েটা'র মুখ ভাল করে দেখা যায় না ৷ যে পথ বেয়ে নেমে আসে সভ্যতা তা এখন নীল আলফাজে প্রতিধ্বনিত হয় ৷

আলোর তির্যক দৃষ্টি বাড়লে লোকজন রাস্তায় চলাফেরা করে ৷ বলাবলি করে, আহা কচি মেয়ে গো ! কোন মা'র কপাল পুড়ল কে জানে ৷ পরক্ষণেই, যাই মেলা কাজ পড়ে আছে ঘরে, এই বলে একে একে হাঁটা লাগায় ৷ অনু কথা বলার মত শক্তি হারিয়ে ফেলে ৷ ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,"কেউ কিছু করুন একটু ! পুলিশে খবর দিন৷ " ভিড় ক্রমশ ফিকে হয় ৷

এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে ছোট্ট এক বাচ্চা ছেলে ৷ অনু তাকে সামনে ডাকতে ডুকরে কেঁদে ওঠে ৷ " কাল থেকে দিদির খোঁজ পাচ্ছি না ৷ কিছু খাইনি, জান !"
অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা'র দিকে ৷ এ দৃশ্যে সহস্র বার ধর্ষিত হয় অনু। 
"তুই থাকিস কোথায় ?"
" ওই ধারে'র বস্তিতে ৷"
"এখনই গিয়ে বস্তির লোকজন ডেকে আন ৷ আর নে এই টাকাটা, কিনে খেয়ে নিস কিছু ৷"
ছেলেটা এক দৌড়ে চলে যায় ৷ খানিকক্ষণ পরে লোকজন আসতে শুরু করে ৷ মেয়েটা'র জামা দেখে বস্তির লোক আবিষ্কার করে, এই তাদের মুনিয়া ৷ কাল ভোরবেলা থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না তাকে ৷  

খানিকক্ষণ পর পুলিশ আসে, জিজ্ঞাসাবাদ করে বস্তির লোকেদে'র থেকে ৷ অনু একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে৷ এর মধ্যে একটা কুকুর তাকিয়ে থাকে মেয়েটা'র দিকে ৷ সারা শরীর শুঁকতে থাকে ৷ কখনও জামা'র টুকরো মুখে করে পায়চারি করে,  কখনও সেগুলো দিয়ে আড়াল করে বিবস্ত্র মেয়েটির দেহ'কে । অন্য কুকুর'রা সামনে  এলে চিৎকার করে ওঠে ৷ একটা চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে কুকুরটা'র ৷ কখন মাথার কাছে কখনও বুকের ক্ষত বিক্ষত অংশটাকে আগলিয়ে রাখে ৷ দেখে মনে হয় ঘটনার প্রতি মুহূর্তের সাক্ষী ছিল সে ৷


বেলা বাড়ার সাথে অনুর মোবাইলে ফোন আসতে শুরু করে ৷ চোরা স্রোতের মধ্যে ভাসতে থাকে অনু ৷ ফোনের রিং হয়ে হয়ে শেষ হয়ে যায় ৷ আশপাশের কথাবার্তা একটু একটু কানে আসে ৷ কিন্তু নিথর দেহ যেন সব শব্দ অতিক্রম করে ৷

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন