কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭

মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়

পাঞ্জাবী 

বড্ড পুরনো  হয়ে গেছি,  তোমার  কচি কলা পাতা রঙের  ছেঁড়া রং চটা পাঞ্জাবিটার মতো!
রং, সুতোর কারুকাজটা একসময় বড় প্রিয় ছিল তোমার, অবশ্য তাতে কি বা আসে যায় ...  যা পড়াই যায় না,  সে সুতোর নকশা কি  হবে!  আজ তোমার  ওয়ার্ডড্রপে সারি সারি  এক্সক্লুসিভ  জামা,  পাঞ্জাবি সেগুলো  কত দামী  দামী  কত সুন্দর কলকা,  এক্কেবারে  সূচীশিল্পের প্রদর্শনী,  নামী দামী বুটিক থেকে স্পেশাল  অর্ডারেরহবেই তো! কিন্তু ওই পাঞ্জাবিটা পড়লে আয়নার সামনে কতবার ঘুরে ঘুরে দেখতে নিজেকে,  বেশ লাগছে বল’, বুকের উপর সিপন সুতোর কাজটাতে হাত বুলিয়ে  বলতেদারুণ  করেছোজানো কতজন এর প্রশংসা  করেছে, আমাকে নাকি দারুণ লাগে  উষ্ণ  ঠোঁট ছুঁয়ে যেত আমার ঠোঁট, গাল।  তুমি খুব সচেতন  হয়ে যেতে কোথাও যেন দাগ না লাগে  লণ্ড্রীতে  দাওনি কোনদিন - নিজে হাতে কেঁচে,  স্ট্রার্চ দিয়ে আয়রন করতে।  একবার পাড়ার ছোট্ট ছেলে বিল্টু বল ছুঁড়ে মারাতে  বলের ধুলোর দাগ লেগেছিল বলে সেকি রাগ তোমার! কানমলা দিয়েছিলে তারপর থেকে ভয় পেত বেচারা বিল্টু তোমায় দেখে। 

কী যত্ন!  কী যত্ন!

কিন্তু  যেদিন থেকে রঙটা ফিকে হয়ে উঠেছিল, সেদিন থেকে,  ঠিক সেইদিন থেকেই পাঞ্জাবিটা পড়তে কিন্তু  একটা অবজ্ঞা, অবহেলা অনুভব  করত  পাঞ্জাবি     বাজারে পড়ে চলে যেতে  মাছের রক্তের দাগ,  মোচার দাগে লাল লাল ছোপ ছোপ আজও  ছেঁড়া টুকরোতে।  আজ আর বাজার যাও না তুমি।  তোমার কোন জামা বা পাঞ্জাবীর রঙ চটে না,  ছেঁড়ে না। তোমার শরীরের পারফিউম, তোমার শরীরের গন্ধ সেভাবে কেউ মাখতে পারে না। তার আগেই ওয়ার্ডড্রপ থেকে বদলে যায়  থাকার জায়গাটা।  দাগই বোধ হয় বেশি ভালোবেসেছে তোমার থেকে তোমার পাঞ্জাবিকে,  ছিঁড়ে গেছে তাও সাথেই আছে।  রংচটা পুরনো বাড়িটা এখন  মার্বেল, মডিউলার  কিচেন, ঝাঁ চকচকে অত্যাধুনিক ডিজাইনে ঝলমল করে তোমার বাথরুমটাকেও পালটে নিয়েছো  একবার দাগ কেটে গেলে দাগ থেকে যায়।  আমি,  তোমার পাঞ্জাবি কেউ দাগ কাটতে পারি নি তোমার কোথাও!  শুধু নিজের শরীর ছাড়া পাল্টে নিয়েছো সব, ব। এমনকি সব কিছুর মতো  পাল্টে নিয়েছো আমাকেও অথচ পাঞ্জাবী তার নকসার সুতো আজও  গন্ধ বিলায় আমার হাতের সুঁচ ফোটা রক্ত আর তোমার বুকের


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন